তনুশ্রী সেনগুপ্ত, ফিচার রাইটার, আসানসোল:

পঞ্চমীর দিন হটাৎ মানিবাবু রাত্রে সুন্দরীতে (স্কুটি) সওয়ার হয়ে আমায় নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোবেন এই রূপ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। না ওটা ওনার একশত আটত্রিশ নামের একটি, এখন পুজোর সময় তাই তিনি মানিকবাবু। কিন্তু সমস্যা হোলো সুন্দরী মানিবাবু কে খুব একটা পছন্দ করে না, বেশিরভাগ সময়ই উল্টে দেয়, তবুও মহাদেভ এর কথা অমান্য করার মতো মাথা দশানন আমায় দেন নি তাই গররাজি হয়েও জয় দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম। প্রতিটা প্যান্ডেল এর যতদূর তাকালে চরম পাওয়ার  সম্পন্ন চোক্ষু ও দূরের বস্তু কে ঝাপসা দেখে সেখান থেকেই লাইন শুরু হয়। এবার ঐ ছোট্ট ছোট্ট পা য়ে এগিয়ে চলা, আর যেই গন্তব্যে পৌঁছানো ওমনি দেখার পর একপ্রকার গরু তাড়ানোর মতো তাড়িয়ে বের করে দেওয়া হয়। আমি তো ভয়ে ছিলাম মহাদেভ না তার ত্রিনয়ন খোলেন, যদিও  তিনি তাঁর ঐ ত্রিনয়নের রাগ সংবরণ করেন তো বাইরে এসে আর এক হ্যাফা, সুন্দরী কে পার্কিং থেকে বের করে মানিবাবু চেপে সবেই আমি এক পা তুলেছি পেছনের ঐ সিভিক বাবুর তাড়াড় চোটে তিনিও সোজা গাড়ি চালিয়ে দেন, আর আমি সেই ক্যাঙারুর মতো এক পা তুলেই আর এক পা কে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে এগোতে থাকি, শেষমেশ সামনে আসা এক বিরক্তিকর বাম্প আমায় সস্তিকর বসার সুযোগ করে দেয়। পরবর্তী প্যাণ্ডেলে তো আবার ঠাকুর দর্শন করে বেরিয়ে আসার পর আমি হারিয়ে গেছি বলে মাইকের করুণ আর্তনাদ শুনি, যা বাব্বা,তড়িঘড়ি আবার আমাকে খুঁজে নিয়ে গিয়ে মানিবাবুর কাছে হাজির কোরলাম। 
এইভাবে "প্যান্ডেল হপিং" এর পর পরের দিন পা ফোস্কাচরনাবতার হওয়ায় আমিও ল্যাংচামনি হয়ে উঠি। অগত্যা পরম স্নেহের নতুন জুতো ত্যাগ করতে হোল, আর একাধিক স্টিচ ধারী, দাঁত বেরোন, হাঁ করা পুরাতন কেই ওতি গর্বের সাথে পায়ে ধারণ করে মন্ডপ যাওয়া।
শেষ অধ্যায়ে মাতৃ বরণ ।সেখানেও লম্বা লাইন, এক এক জন যেভাবে ঠুসে ঠুসে মা কে মিষ্টি খাইয়ে আদরের বহিঃপ্রকাশ করছে তাতে ভগ্যিস মা সত্যিই হাঁ করেন নি, তা না হোলে ভালবাসার মিষ্টি সোজা মা এর পাকস্থলি তে ভরে দিয়ে হজম করিয়েই ছাড়ত। মা এর তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি রূপ। জল,সিঁদুর এর ভালবাসা তে কার্তিক, গনেশ, লক্ষী, সরস্বতী, অসুর এমনকি পোষ্যটির ও চুলোচুলি কান্ড। এ সবই আনন্দের খোরাক, যা মা এর পুজো কে উপলক্ষ্য করে হয়ে থাকে।
"মা" থাকুন  অন্তরের অন্তস্থলে, তাঁর আদর শুধুই সিঁদুর, আলতা ,পান এ, আর জল মিষ্টি? সে তো থালায় রেখে পরম স্নেহে মায়ের সামনে রেখে দিলেই তা প্রসাদ হয়ে যায় । নিতান্তই অবুঝ সন্তান আমরা তাই তো এতো অনাচার অবিচার এর পরেও "মা আসেন", "মা আবার ও আসবেন"।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours