স্বপন সেন, ফিচার রাইটার, হালিশহর: ‌

নোবেলকেই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দেবেন এমনটি ভাবা যায় না, কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, পুরস্কার নিয়েছেন কিন্তু পুরস্কারের অর্থমূল্য নেননি এমন ঘটনাও বিরল নয়। অর্থাৎ নোবেল নিয়ে ঘটনার ঘনঘটা একেবারে কম নয়।

১৯৬৯-এর অক্টোবরের ২৩ তারিখ। আইরিশ লেখক স্যামুয়েল বেকেট ও তার স্ত্রী সুজান তিউনিসিয়ায় ছুটি কাটাতে গেলে হঠাৎ একদিন একটি টেলিগ্রাম পান। বেকেটের ফ্রেঞ্চ প্রকাশক টেলিগ্রামে লিখেছেন: ‘আপনি বাসায় লুকিয়ে থাকবেন, প্লিজ।’ বেকেট সাহেব পড়েই ঘাবড়ে যান।  তিনি তো কোনো অপরাধ করেননি তাহলে লুকিয়ে থাকবেন কেন?
আসল খবর অবশ্য বেশিক্ষণ চাপা থাকলো না। মুহূর্তেই জানাজানি হয়ে যায় বেকেট সে-বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

এর পরেই ঘটে মজার ঘটনা। স্যামুয়েল প্রথমে পুরস্কার গ্রহণে অনীহা দেখান। কিন্তু  স্ত্রী তাকে বোঝাতে সক্ষম হন, আয়ারল্যান্ডের জন্য হলেও এই পুরস্কার তার গ্রহণ করা উচিত। কেননা এ তো দেশেরও সম্মান। স্ত্রীর কথা মেনে নিয়ে বেকেট পুরস্কার  গ্রহণ করেন ঠিকই কিন্তু প্রাপ্ত টাকা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, এ টাকা বৃদ্ধদের জন্য ব্যবহার করলে ভালো হবে। যাদের থাকার জায়গা নেই, খাবার কিনে খেতে পারে না, এই টাকা তাদের। 

এখন পর্যন্ত দুজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। একজন হলেন জাঁ পল সার্ত্রে। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে আনুষ্ঠানিক সম্মানের প্রতি অনীহা দেখিয়ে সে বছর তিনি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেননি। জাঁ পল সার্ত্রে ছিলেন ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, নাট্যকার, সাহিত্যিক ও সমালোচক। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন। 

নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন ভিয়েতনামের লে ডাক থো। ১৯৭৪ সালে আমেরিকান কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে যৌথভাবে ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। শেষ পর্যন্ত তার দেশে শান্তি ফিরে না আসায় তিনি নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।

আবার উল্টো ঘটনাও ঘটেছে। ব্যক্তি আগ্রহী হয়েছেন কিন্তু দেশ বাদ সেধেছে। চারজন নোবেল লরিয়েটের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। যেমন হিটলার তিনজনকে নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য করেছিলেন। তারা হলেন রিচার্ড কুন, এডলফ বুটেনান্ডট এবং গার্হাড ডোম্যাক। এরা সবাই পরবর্তী সময়ে নোবেল প্রাইজ এবং মেডেল গ্রহণ করলেও পুরস্কারের টাকা পাননি।

রুশ সাহিত্যিক বরিস পস্তার নাক ১৯৪৬-৫০ সাল পর্যন্ত নোবেলের শর্ট লিস্টে থাকলেও ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। অবশেষে ১৯৫৮ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি এই পুরস্কার গ্রহণও করেন কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের চাপে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানে বাধ্য হন । ‌


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours