শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরপত্তাহীনতা, নির্যাতন নীপিড়ন নিয়ে কোন কিছু লেখা খুবই ঝুকিপূর্ণ।  মন্দীরের মূর্তী ভাংচুর নিয়ে লেখা আরো বেশি বিপদজনক যদি আপনার জন্ম মুসলিম সম্প্রদায়ে হয়ে থাকে। আমার মনে আছে আছে যখন ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষন প্রভৃতির প্রগতিবাদী  পোস্টার সাটাতে যেতাম। বা মানববন্ধন করতাম। আমাদের কখনো কখনো গালাগালি বা কটু কথা শুনতে হতো। ' ভারতের দালাল ও হিন্দুর দালাল" বলাও হতো। নিদেন পক্ষে চা দোকানে বলা হতো "মালুয়ানদের"  নিয়ে তোমাদের এত দরদ দেখাতে  হবে কেন? 

 বাংলাদেশে  মুসলিম সম্প্রদায়ের শতকরা ৯৯ ভাগ লোক জানে  ভারতে, কাশ্মীরে মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন করা হচ্ছে! যদিও তারা এই ৯৯ ভাগের দশমিক ৯৯ ভাগও জানে না; কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানীর নাম কি? তারা জানে না; কাশ্মরীর থেকে, ময়মনসিংহ, রাজশাহী বা ঢাকার দুরত্ব কত। কিন্তু তারা জানে কাশ্মীরে কি কি হচ্ছে। অবশ্যই তা কেবল 'মুসলিম  নির্যাতন"  বিষয়ক খবর ; অন্য কিছু নয়।  কেন কেবল এই একটি খবরই জানে; প্রশ্ন থেকে যায়।

আর সারা ভারতে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করা হয় তা ৯৯ঃ৯৯% মুসলমান শুনেছে; জানে। এবং ৯৯% তা  বিশ্বাসও করে! যদি তাদের প্রশ্ন করা হয় কাশ্মীর থেকে চার পাঁচ লাখ হিন্দু কাশ্মীরি তাড়িয়ে দিয়েছে মুসলিম কাশ্মীরিরা!  এবং খুন করা হয়েছ ৪০ হাজার কাশ্মীরি হিন্দু। এবং শতশত  হিন্দু কাশ্মীরি নারী ধর্ষিতা হয়েছে, তা জানেন কি? তারা তখন  আকাশ থেকে পরবে!  বলবে, এটা কি করে সম্ভব? কোন দিন তো এমন কথা শুনলাম না! শোানার কথাও না। কারন এদেশের পত্রিকাগুলো তা ছাপে না। না ছাপার কারন কি?  কি?  তা অন্যদিন আলোচনা করবো।

কাশ্মীরে  হিন্দু  নির্যাতন, বিতাড়ন না হয় মিডিয়া কূ করে এ দেশে জানানো হয় না। কিন্তু এদেশে হিন্দু নির্যাতন, পুজার সময় ঘনিয়ে এলে মন্দীরে প্রতিমা ভাংঙচুরের খবর কি এ দেশের পত্রিকায় আসে না?  আসে, বারবার আসে, বহুবার আসে, আসবেও সম্ভবত যতদিন বাংলাদেশ হিন্দু শুন্য না হবে। 

 বছরের পর বছর পত্রিকাগুলোতে মন্দীর ও প্রতিমা ভাঙ্গার খবর আসে। তারপরও আপনার আশে পাশে মুসলিমদের জিজ্ঞেস করুন দেখুন,  তারা বলবে; কবে?  কোথায়?  হিন্দুদের মন্দীর ভাংচুর হয়েছে? যে কোন কালে, কখনই এদেশে কোন মন্দীরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি!  অথচ এত গোপন  রাখার পরও গত ৪৭ বছরে হাজার হাজার মন্দীরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় এসেছে। যে কেউ চাইলে  বাংলাদেশের পত্রিকাসমূহের  পাতা খুলে দেখে মন্দীরে প্রতিমা ভাঙার  সত্যতা খুজে পারেন। দূর্গাপুজার সময় তো প্রতিমা ভাঙার মৌসুম শুরু হয়! আমি তো প্রতিমা ভাঙার  খবর পত্রিকায় পড়ে মালুম করি, এই  বুঝি পুজোর দিন এলো! এছারাও বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মন্দীরের প্রতিমা ভাঙ্গা হয়। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় আছে কি?

গত মাসে ঢাকায় এক বন্ধুর সাথে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় নিয়ে কথা বলছিলাম,  সে যে রাজনৈতিক ভাবে অসচেতন, তা নয়।  সে নাকি কোন দিন শুনেইনি এ দেশে মন্দীরে মূর্তী ভাঙ্গা হয়েছে। এ লেখাটি যখন লিখছিলাম তখন এক তরুণ  আমার রুমে এসেছে। কথা বলার ফাঁকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি  তোমার বয়সে কখনো শুনেছ,  মান্দীরে মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে? তার বয়স পঁয়ত্রিশ। সে বললো,  তার বয়সে সে কোন দিন শুনেনি ; এ দেশে হিন্দুদের মন্দীরে মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে। অথচ তার নিজের গ্রামে মন্দীরে মুর্তিভাঙ্গা হয়েছে,। মামলাও হয়েছিলো এক বছর আগে। পরে তাকে বললাম; পত্রিকায় তো এমন খবর  প্রতিবছরই  দেখি। তার সাফ জবাব, মুর্তি কারা ভেঙ্গেছে তা কি কেউ দেখেছে? ওরাই ভেঙ্গেছে! অর্থাৎ তার ভাষায় হিন্দুরাই ভেঙ্গেছে! 

আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ভন্ড পীর নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে।  অনেক বার মুরুব্বীদের মুখে শুনেছিও। একবার এক গৃহস্থের বাড়ি পীরের আগমন ঘটে। কিন্তু গৃহস্থের বউ পীরদের প্রতি আস্থা রাখেন না। তাই পীর সাহেবের সকল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিলো তো পীর সাহেব বসে বসে ধ্যান করছেন। কতক্ষন পর পর বলছেন; যা,সর।  যা সর!  যা, এখান থেকে।  প্রভৃতি বাক্য  পীরের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে।  উৎসুখ ও অন্ধভক্ত  মুরিদ ( শিষ্য) বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করলেন,বাবা কি তাড়ালেন?  বাবা বললেন, এটা তাড়ালাম , ওটা তাড়ালাম, এমন কি এও বললেন, পবিত্র মক্কা শহরে কুকুর প্রবেশ করছিলো তাও তাড়ালাম! উপস্থিত নির্বোধ মুরিদ সম্প্রদায় পীর বাবার জয়জয়কার শুরু করলো! গৃহস্থও বেজায় খুশি এমন মহান পীর বারার  পদধূলি পেয়ে। তার উপর মেহমান হয়েছে তার বাড়িতে।  কিন্তু গৃহস্থের বউ খুব সতর্ক। পীর বাবা তার খাস  ভক্তদের নিয়ে অন্দর মহলে খেতে বসেছেন। সকলের ভাতের  প্লেটে ভাজা মাছ দেখা গেলেও পীর সাহেবের প্লেটে মাছের বদলে কেবল শাক দেখা যাচ্ছে!  সকলে বিস্মিত, গৃহস্থ ও  ভক্তবৃন্দ তো বটেই স্বয়ং পীরবাবাও অবাক! শেষে স্বয়ং পীর বাবা গৃহস্থকে প্রশ্ন করলেন; তার প্লেটে মাছ নেই কেন?  গৃহস্থ তার স্ত্রীর কাছেও কৈফিয়ত চাইলেন কেন পীর বাবার প্লেটে মাছ নেই! এবার অন্দর মহলের পর্দা উচিয়ে গৃহস্থর বউ গৃহস্থকে উত্তর দিলেন; তোমার পীর বাবা গাও গেরামে বসে শত শত মাইল দুরে কত কিছু দেখে এমন কি  হাজার, হাজার মাইল দুরের শহরে কুকুর আসা-যাওয়া দেখে। আর তিনি তার সামনে রাখা প্লেটের  এক মুঠো ভাতের নিচে ভাজা মাছ দেখতে পায় না! দ্রঃ গৃহস্থের বউ ভাতের নিচে মাছ রেখেছিলো পীরের কেরমতি দেখতে!   পরে পীর সাহেব ও মুরিদদের মাঝে কি হয়েছিলো তা গল্পে এগোয়নি।

ঠিক এ দেশের সংক্ষাগুরু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ঐ ভন্ড পীর বাবার মত। তারা শত মাইল দুরে এমন কি হাজার মাইল দুরের নিজ -সম্প্রদায়ের উপর জুলুম নির্যাতন দেখতে পেলেও ঘরের পড়শী  সংখ্যালঘুর উপর ঘটে যাওয়া জুলুম অত্যাচার দেখতে পান না! 
বাংলাদেশে মন্দীরে প্রতিমা ভাঙ্গার কথা তুললেই অনেকে বাবরী মসজিদ ভাঙার কথা সামনে আনেন।  তবে কি ১৯৯২ ছয় ডিসেম্বর  বাবরী মসজিদ ভাঙার আগে এ দেশে কোন মন্দরীরে মুর্তী ভাঙা হয়নি? নাকি বাবরী মসজির ভাঙা হয়েছিলো বলে এ দেশে মন্দরীরের মুর্তি ভেঙ্গে চলতেই হবে!?!  

কেন মন্দীরে মুূর্তি ভাঙা হয়? বলার অপেক্ষা রাখে না প্রথমে সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকেই এমন কুকর্মটি করা হয়৷ নবী ইব্রাহিমের মূর্তী ভাঙ্গার কাহিনী স্ব-গর্বে আমরা মুসলানেরা বলে থাকি। আমরা যারা  মুসলিম সম্প্রদায়ে জন্ম ও প্রতিপালিত হয়ে তারা কে না,  পয়গাম্বর হযরত মোহাম্মদের  মক্কা নগরীর কাবা ঘরের মুর্তী ভাঙ্গা  ইতিহাস পড়েছি।   তার সাথে এদেশে  মূর্তী ভাঙ্গার পেছনে  অার্থরাজনৈতিক  স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তো রয়েছেই। অথচ বিহারী ও হিন্দুদের দাঙ্গার সময় এই মুসলিম সম্প্রদায়ই এক সময়  হিন্দুদের পক্ষ নিয়েছিলো।  ৭১ সালে হিন্দু মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বাংলাদেশটাকে স্বাধীন করেছে। ভাষার লড়াই করেছে তার আগে।

আমি নিজের চোখে দেখেছি দুর্গাপুজার সময় যে মেলা হতো হিন্দু সম্প্রদায়,থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সমাগম হতো বেশি।  আমার নানার বাড়ির মানুষেরা অনেকটাই রক্ষনশীল। তাই ঐ বাড়ির মানুষজনের মুর্তিপুজা দেখা মেলায় যাওয়া এক প্রকার নিষিদ্ধই ছিলো। কিন্তু তারা আমাদের বাসায় বিভিন্ন ছলে পুজো দেখতে চলে আসতো। কেন না, আমাদের বাসা থেকে মন্দীরগুলো খুব কাছেই ছিলো।  তারা,মন্দিরে প্রতিমা  দেখতো।  সুন্দর বলতো ; আবার তওবা,  আস্তাগফেরুল্লা পাঠ করতো। মেলা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে যেতো।

আমাদের শিমলা বাজারে ( সরিষাবাড়ি, জামালপুর) তিনটি মন্দির রয়েছে ; মসজিদ একটি। (পরে আরো একটি মসজিদ হয়েছে)। একটি মন্দীর তো মসজিদ থেকে মাত্র দশ/ বার গজ দুরে।  ভারতের অযোধ্যার বাবরী মসজিদ নিয়ে  সৃষ্ট  দাঙ্গার সময় এই মন্দীরটি ১৯৯২ সালে ভেঙ্গে  ফেলতে পারে  কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষ।  এমন একটি গুজব ছিলো। তখন হিন্দু সম্প্রদায় নয়। পুলিশ ও আমরা কিছু স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কিশোর ও তরুনেরাই রাত জেগে  জেগে বেশ কয়েকদিন পাহারা  দেই। শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লোকজন মন্দীরটি  রক্ষা করতে পারতো না। 
সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য কেবল রাষ্ট্র নয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হয়। তা  না হলে।কোথায়ও সংখ্যালঘুরা টিকতে পারবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না ; প্রাধান দায়িত্বটা রাষ্ট্রেরই।

একটা দেশ কতটুকু গনতান্ত্রিক ও সভ্য তা নির্ধারন করা হয় সে দেশে সংখ্যালঘুরা কতটুকু নিরাপদ; তার উপর। ভিন্ন মতের মানুষেরা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে নিয়ে বসবাস করে। বাংলাদেশে দুর্গাপূজার আগে প্রতিমা ভাঙচুর থেকে রক্ষা পেতে  পালা করে প্রতিমা পাহারা দিতে  হচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের। এ খবর বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। 

এদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিতাড়িত করা হয় না৷ মন্দিরের প্রতিমা,ভাংচুর করা হয় না। এটা বলে সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। একটি দেশে সংখ্যালঘুরা তখনি নিরাপদ থাকবে রাষ্ট্রযন্ত্র যখন সেকুলার হবে। শিক্ষাব্যবস্থা থাকবে সেকুলার। সাম্প্রদায়িক শিক্ষা বিস্তার করে কোন দেশের জনগনকে অসাম্প্রদায়িক বানানো যায় না। তার প্রমান; মধ্যপ্রাচ্য, ভারত-বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ইউরোপ।

আজকাল বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবিরা তো অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা বাদই দিয়েছেন। অথবা ভয়ে বলেন না।  তবে কেবল ভারতকে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার উপদেশ দান খয়রাত করতে ভুল করেন না।    ভারতের বুদ্ধিজীবীর উদাহারন তো এ দেশে নিষিদ্ধই! তাই দুজন  তাও আবার অ-কমিউনিষ্ট পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীর  বক্তব্য শুনতে বলবো। একজন লেখক, রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী হাসান নিসার, অন্যজন বিজ্ঞানী অধ্যাপক পারভেজ হুডভয়।  তারা বলেন ; রাষ্টের ধর্ম নিরপেক্ষ থাকতে হবে৷ এমনকি কোন সম্প্রদায় যদি রাষ্ট্রে   ৯৭% থাকে অন্যান্য থাকে ৩%  তবুও রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ থাকা উচিত। কোন জাতি দেশ  রাষ্ট্র  যদি নিজেদের সভ্য ও গনতান্ত্রিক  বলে পরিচয় দিতে চায়। সাম্প্রদায়ীকতা  ঘৃণা ছড়ায় মানুষকে আত্মকেন্দ্রীক করে তোলে। পাকিস্তানের বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম প্রথমে খুব একটা ধার্মিক ছিলেন না ।কিন্তু পাকিস্তানে যখন কাদীয়ানী মুসলিমদের অমুসলিম ঘোষনা করা হয়। এবং  কাদীয়ানীদের উপর গনহত্যা চালানো হয়৷ বিজ্ঞানী  প্রফেসর আব্দূস সালাম নিজেকে বেশি বেশি কাদীয়ানী পরিচয় তুলে ধরতে থাকলেন।
  বাংলাদেশের হিন্দুদের সাথে ভারতের হিন্দুদের মেলালে চলবে না। আমি ভারতের বেশ কয়েকটি প্রদেশে গিয়েছি। ঐ সকল হিন্দুদের সাথে  মিল থেকে বে-মিলই বেশি।  বাংলাদেশের মুসলিমদের সাথে মিল রয়েছে অনেক বিষয়েই। মনে রাখতে হবে এ  অঞ্চলের মানুষেরা বাঙালি। তারা কেবল হিন্দু  মুসলিমই নয়। আাদিতে, প্রথমে এই বাঙালি জাতি প্রকৃতি পুজারী ছিলো। তার পর তারা,  সনাতন ধর্ম গ্রহন করে। এই বাঙালিরা বৌদ্ধ ধর্মও গ্রহন করে।  এই বাংলা অঞ্চল এক সময় তিব্বত পর্যন্ত শাসন করতো! তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে তুর্কী আরব  শাসকেরা  ভারতবর্ষ দখলের আগেই। ভারতবর্ষ মুসলিম শাসকেরা শাসন করার পর ইসলাম ধর্মের অনুসরীরা সংখ্যায় বাড়তে থাকে। পঞ্চদশ শতকে এই উপমহাদের পর্তুগিজ খৃষ্টানদের মাধ্য খৃষ্টধর্ম প্রচার হতে থাকে। 

রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক  প্রতিষ্ঠান।   জনগনের জাীবন সম্পদ সম্ভ্রম রক্ষা করা যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব । তেমনি সংখ্যালঘুদের  চিন্তা চেতনা বিশ্বাস প্রকাশের  নিরাপত্তা দেয়াও রাষ্ট্রের কর্তব্য। যদি রাষ্ট্রটি গনতান্ত্রিক বলে দাবি করা হয়।  সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়েরও অনেক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। কেন না, সংখ্যাগুরুরাও অন্য কোথাও সংখ্যালঘু।

আমাদের দেশের অনেক মুসলিম মনে করে এ দেশের হিন্দুরা নিজেদের বাংলাদেশী মনে করে না। যদি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করা হয় আপনারা কি বাংলাদেশের হিন্দুদের বাংলাদেশের নাগরিক মনে করেন ? তাহলে বুকে হাত বলুন। 

হিন্দুরা যদি  এ অঞ্চল থেকে চলেই যেতে চাইতো তবে তারা ১৯৪৭ সালেই চলে যেতে পারতো। কেন না, ১৯৪৭ সাল থকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ছিলো। এবং তারা তা মেনেই এ দেশে ছিলো।  তাই নয় কি? তাহলে যখন সে দেশটি সেকুলার ও গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে গেলে তারা চলে যায় কেন?  কোন সম্প্রদায়ের উপাসনালে ৪৭ বছর ধরে ভাংচুর চললে তার থাকেই বা কি করে? তাও আবার যদি তাদের উপাসনালে হাজার হাজার (৪৭ বছরে) হামলা হলে ; একটিরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে  আদালতে বিচার না হয়ে থাকে;  তাহলে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কি করে সে  রাষ্ট্রের উপর আস্থা রাখবে? মনে রাখাতে হবে আমরা কেবল হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ নই আমরা বাঙালিও। আমরা ভাত ও মাছ খেয়ে বাঁচি।  আমাদের খাদ্য, পানীয়,  আচরন প্রায় সবই এক। যা ভারত ও পাকিস্তানের অনেক জাতির সাথে মিলবে না স্বধর্মী হয়েও।। কারো সাথেই  মিলে না। মিলবেও না কারন আমরা আদতে বাঙালি। কেবল আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস নয়,  গোল্লাছুট, হাডুুডু খেলার বয়স হিসাব করুন। কেন না, এ খেলার আবিস্কারক বাঙালি। ঐ খেলার বয়স হিসাব করলেই  বুঝা যাবে আমরা আসলে কি  ছিলাম। ইতিহাস বলে  হাডুডু ও গোল্লাছুট খেলা বাঙালি তখন ; না ছিলো হিন্দু,  না ছিলো মুসলমান, না বৌদ্ধ। 

সম্রাট বাবুর ভারতবর্ষে প্রথম কামান ব্যাবহার করেছে তো প্রথমে পানিকে সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে বাঙালি।  যা আর কেউন জানতো না। এখনো জানে না। মসলিনের মত বাঙালি ভুলে গেছে অস্ত্র হিসেবে পানির  ব্যাবহার । তাও আবার মুঘলদের বিরুদ্ধেই ব্যাবহার করা হয়েছিলো পানিঅস্ত্র। 

রাজনীতিক ও ধর্মবেত্তাদের কূটচালের কারনে আমরা হিন্দু ও  মুসলিম সম্প্রদায় এক সাথে বসবাস না করতে পারলেও ; বাঙালি হিসেবে আমরা একে অপরের আত্মীয়তা অনুভব করতে পারি। বাঙালি ও মানবতার জয় হোক। মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা মুতক্ত বাংলাদেশ ও পৃথিবী কামনা করি।

অতীতে, নিকট অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে।  বাংলাদেশ সরকারের শতভাগ পুজো নিরপত্তার  আশ্বাসে বাংলাদেশী সংখ্যালঘু  সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায় আবার তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান দূর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সকলেরই কাম্য। আর সেই কাম্যকে সার্থক করে সমগ্র বাঙালি সমাজ বাস্তবিকই মেতে উঠেছে পুজো উৎসবে।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours