দেবলীনা চৌধুরী, সাংবাদিক, জিরাট, হুগলি:
আমরা বেশিরভাগ যা উৎসব উদযাপন করে থাকি তাতে কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ধর্ম, সেটা যেকোন ধর্মের উৎসব উদযাপন হতে পারে। ধর্মকে নিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শের অনেক পার্থক্য থাকলেও আনন্দ-উদযাপনের সময়ে সকল ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন। মানবতার রঙিন আলোয় আলোকিত চারিদিক।
কালীপূজা বা দীপাবলি এই উৎসবকে যে নামে চিহ্নিত করা হোক না কেন, এই উৎসব হলো আলোর উৎসব যা মানুষের মনের সব কালিমাকে ঘুচিয়ে তার মধ্যে সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে যে মানব ধর্ম সেই বোধ জাগরিত করে তোলে।
হিন্দুদের ক্ষেত্রে দূর্গা পূজার পরে সবথেকে বড় উৎসব হলো কালীপূজা। অন্যায়ের প্রতিবাদী নারীকে সমাজ সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে না পারলেও অশুভ শক্তির বিনাশকারী মায়ের এই রূপটি সকলেরই বড় আকাঙ্খিত। আর তাই শুধু দেশের মধ্যেই নয় দীপাবলীর এই আলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রবাসেও। ধর্মের দিক থেকে দেখতে গেলে, খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হলেও অত্যন্ত সাড়ম্বরে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পালন করেছেন দীপাবলি উৎসব।
হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি আমাদের দেশে যথেষ্ট চোখে পড়ে তা আমরা যতই অস্বীকার করিনা কেন, যা বারবার প্রমাণ করে "মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান"। দিল্লির কল্যানপুরী নামক জায়গায় বাস করেন, 'হুসেইনি ব্রাহ্মণ' সম্প্রদায়ের মানুষজন, যারা আসলে হিন্দু ব্রাহ্মণ কিন্তু তাঁরা প্রতিবছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে মহরম পালন করে থাকেন। আবার স্থানীয় মুসলিমরাও আনন্দের সঙ্গে সেখানে পালন করেন দীপাবলী থেকে দোলযাত্রা।
শুধুই কি ভারতবর্ষে এই দৃশ্য দেখা মেলে? এই সৌহার্দ্যের সম্প্রীতি দেখা যায় পাকিস্থানের মাটিতেও। সেই দেশের মিঠি নামক এলাকা। যা মরুভূমির সীমান্ত ঘেঁষা। এখানে হিন্দুরাই সংখ্যা গুরু। এই অঞ্চলেও দেখা গেছে রোজা ও দীপাবলী উৎসবে হিন্দু এবং মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয়। দীপাবলিতে মুসলিম মহিলারা তাঁদের গৃহেও প্রদীপ জ্বালান। আবার হিন্দুরাও রোজা রাখেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এমনকি ওই এলাকায় কোনও দিনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটি ঘটনাও ঘটেনি আজ পর্যন্ত।
বড়দিন এখন ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষই পালন করে থাকেন,অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির ধর্ম নির্বিশেষে প্ৰতিটি মানুষের কাছে অতি পবিত্র স্থান। এরকমই বহু উদাহরণই দেখা যায়, যেখানে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন। আর এই ভেদাভেদ জ্ঞান ভুলে যাওয়া যেন স্বভাবে পরিণত হয় সেটাই কাম্য।
হযরত মুহাম্মদ বলেছিলেন, " আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও", প্রসঙ্গত উনি ধর্ম বলতে এখানে আমাদের কৃতকর্ম কে বুঝিয়েছিলেন।প্রকৃত ধার্মিক চেতনা আমাদের কৃতকর্মের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পায়। তাই সকল ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে, সকল অরাজকতাকে দূর করতে, একমাত্র সম্বল ঐক্য বল। যাতে আবার সবাই সমবেত কণ্ঠে বলে ওঠে " বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান"।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours