শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে রান্না করার আগে মাছ বেশি ধুইতে হয় নাকি মাংস।  আমি তার সঠিক  উত্তর দিতে পারবো না। অংক করতে দিলে শরীরে জ্বর আসতো। ইংরেজি শিখেছি একাডেমিক পড়া লেখা খ্যান্ত দেয়ার পর।  অনেকটা দায়ে পরে না হলে ইংরেজি ভাষা শেখা হতো না। পরে আরো ভালো করে শিখোছি বই পড়ার জন্য কেন না; বাংলা  ভাষায় অনুদিত বই এর সংখ্যা কম। মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা আরো কম। ( বাংলাদেশের কথা বলছি)।  

কে, কে মাদারাসায় না পড়েই মওলনা হয়েছেন বা কার কার নামের আগে আল্লামা লেখা হয়। তাদের একটা তালিকা তৈরি করছিলাম। প্রথমেই দেখলাম মওলনা মওদূদী তাদের একজন। যিনি নিখিল ভারতের জামায়াতে ইসোামীর প্রতিষ্ঠাতা।  তিনি কোন মুফতি বা আলেম ছিলেন না। কবি ইকবালের নামের আগে আল্লামা যোগ করা হয়। যদিও তিনিও আলেম ছিলেন না। বরং "স্যার" উপাধিও পেয়েছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে। 

মওলনা আবুল কালাম আযাদ; ভারতবর্ষের রাজনীতিক হিসেবে যার নাম সমুজ্জল।  তিনিও কখনো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাল্যকাল বা কিশোর বেলায় পড়েননি।  তার জন্ম হয়েছিলো মক্কায়। তার মা ছিলেন আরবীয়।  অর্থাৎ  মওলনা আবুল কালাম আজাদের মাতৃভাষা ছিলো আরবি। কোলকতায় তার বাবা ফিরে এলে। ঘরেই আবুল কালাম আজাদের পড়ালেখা করানো হয়। তিনি পরিবারেই আরবী, ফার্সী,উর্দু,  হিন্দী শিখেন। কেন না, তার পিতা একজন পন্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন। তাই পরিবারেই তার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন।  তারপর  আবুল কালাম আজাদকে মিশরের কায়রোতে পাঠানো হয়।  কায়রোতে শিক্ষা শেষ করে   ফিরে এসে; ইংরেজি ব্যাকরন বই ও এক বন্ধুর সাহায্যে ইংরেজি ভাষা আয়ত্ব করেন।

মাওলনা ভাষানীও অনেকটা ঐরকমই ছিলেন।  কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুব একটা  পড়া লেখা করেননি। অবশ্য কেউ কেউ দাবী করেন মওলনা ভাসাানি দেওবন্দে শিক্ষা নিয়েছেন।  তিনি রাজনীতি করেছেন বৃটিশ ভারত পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশে। তার উপর একজন বাংলাদশি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন।  "রেড মওলনা"  শিরোনামে একটি  থিসিস  ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছিলো।  
বাংলাদেশের একজন রাজনীতিকের নিকট জুলফিকার আলি ভূট্টো বলেছিলেন;  মোহাম্মাদ আলী জিন্নার ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান করা ভুল হয়েছিলো। তা না হলে মুসলমানের জন্মহারের কারনেই ভারতবর্ষ "মুসলিমদের দখলে"  থাকতো! জুলফিকার আলী ভুট্টোও কওমী মাদাসার সিলেবাসের বাইরে ভাবতে পারতেন না।  তা ভাবতে অবাকই লাগে। তাই তো বলি; রোহিঙ্গাদের জন্মহার এত বেশি কেন? আর পাকিস্তানিরা  কেনই বা বলে  "পায়দা মে ফায়দা হোতে হ্যায়! " 

ফেসবুকে একজন লিখেছেন  ইসলাম প্রচারে বঙ্গবন্ধু ভূমিকা নিয়ে। আমি তার প্রতিউত্তরে বলেছি ; আজ যদি সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার থাকতো তবে সমাজতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  কি কি অবদান  রেখেছেন তা নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হতো।  তার একটা উদাহারন দেই ; বঙ্গবন্ধু যখন বঙ্গবন্ধু  উপাধি পাননি।  ছয় দফার পক্ষে কোন সাড়া পাচ্ছিলেন না।  মওলনা তর্কবাগীশ  কিংবা মওলনা ভাসানিও ছয় দফাকে এরিয়ে গেলেন।  বামপন্থীরা প্রথমে ছয় দফা সমর্থন করলো।  তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরাশ না হয়ে  চট্টগ্রামে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং ছয় দফা কি ও কেন তা তুলে ধরলেন সাধারন জনতার সামনে। ছয় দফার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বললেন; এটি একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যাবস্থার আকাঙ্খা।  তার পরই  ছয় দফা নিয়ে ঢাকায়  ২য়  সংবাদ সম্মেলন করলেন। এবং সারা দেশে ছুটে বেড়াতে লাগলেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব সরকারের তল্পিবাহক মোনায়েম সরকার ; শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে ঢোকাতে ও বের করতে করতে হয়রান হয়ে গেলেন। ছয় দথা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা বলেছিলেন তিনি! শেখ মুজিবুর রহমান নেতা থকে,  জননেতা ও বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন। তিনি হয়ে উঠলেন বাংলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অবিসংবাদিত নেতা।  বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ও ছিলো অনেকটাই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যাবস্থার প্রাথমিক স্তর। তিনি  অনেক কিছু যেমন করতে চেয়েছিলেন। তেমনি চেয়েছিলেন সমাজতন্ত্রও। যদিও বঙ্গবন্ধু কমিউনিস্ট ছিলেন না।  তবে  তার সমাজতান্ত্রীক অর্থনীতির প্রতি তার দুর্বলতা ছিলো।  এ কথা বলতে অনেকেই লজ্জা পায়! লজ্জা তো পাবেই।  আজকাল তো "কমিউনিস্ট " রাই  সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পান!  কমিউনিস্টরা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে পরে থাকেন। জনসমাজে বলতে লজ্জা পান কমিউনিস্ট ম্যানিফোস্টোতে কি বলা আছে।

কমরেড লেনিন বলেছিলেন "সংসদ  শুয়োরের খোয়াড় ' পাকিস্তান আমলে যারা  দেয়ালে গাছে তা লিখে রাখতো। তারা ও তাদের অনুসারিরা তথা  আজকের কমিউনিস্টরা ( সকলে নয়) গনতন্ত্রের জন্য যতটুকু গলা ফাটান। তাার চার ভাগের  একভাগ যদি সমাজতন্ত্রের জন্য ব্যায় করতেন তবে কাজে দিতো। 
আজকে অনেককেই দেখি বলেন; আলবার্ট আইনষ্টাইন অমুক ধর্মের কথা, তুমুক ধর্মের এটা বলে বলেছেন, ওটা বলেছেন। তিনি সমাজতন্ত্রের জন্য কি বলেছেন তা একটু দেখেনিই।

"এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, সুপরিকল্পিতর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আর সমাজতন্ত্র এক রকম জিনিস নয়। কারন তথাকথিত সুপরিকল্পিত অর্থব্যবস্থাতেও ব্যাক্তি জীবনের দাসত্ব বজায় রাখা সম্ভব। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে তরান্বিত করতে চাইলে প্রথমেই কতগুলো জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা দরকার। কিন্ত আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক উদ্যোগকে খর্ব না করে এটি করা সম্ভব নয়। শুধু কি আমলাতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি একটি গনতান্ত্রিক শক্তি সৃষ্টি করেই এ ব্যপারে ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে? তাই আমাদের উচিত এই পরিবর্তনোন্মুখ সময়ে সমাজতন্ত্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা সৃষ্টি করা।"

নির্লজ্জ  নির্ভিক চিত্তে বলেছেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনষ্টাইন।  সমাজতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তা একজন  বিজ্ঞানী বলে গেলেন। তখন সমাজতন্ত্রীরা কোন দেশে কোন অঞ্চলে গনতন্ত্র থাকলো কি থাকল না তা নিয়ে খুব চিন্তিত। অথচ  এ উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক চেনতা  জাদুঘরে ঢুকে যাচ্ছে তা নিয়ে সমাজতন্ত্রী কর্মি ও নেতাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমাকে বলে যেতেই হবে সমাজতন্ত্র চাই। এবং সমাজতন্ত্রে  সম্পদে ব্যাক্তি মালিকানার  জায়গা নাই। এবং সমাজতন্ত্রে  সম্পদে ব্যাক্তি মালিকানার  জায়গা  নাই। আমি তো দেখেছি দেয়ালের মুখও আছে। কেন না দেয়াল আমাকে  শোনাতো ( লেখা) 'ভাত কাপড় জমি কাজ কমিউনিস্ট পার্টির এক আওয়াজ!"  কেউ খাবে কেউ খাবে না ; তা হবে না তা হবে না।" এসব দেখে, পড়ে, সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি মুগ্ধ হয়ে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলাম। জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উপরে উঠে  নিজেকে মানুষ ভাবতে শিখেছিলাম।  বিশ্বনাগরিক হিসেবে একটি বোধ সৃষ্টি হয়েছিলো। "দুনিয়ার মজদুর এক হও " বলা মানুষগুলো যখন আঞ্চলিকতা ও সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন হয়।  শ্রেনী বাদ দিয়ে ব্যাক্তি ও গোষ্ঠিকে শত্রু বা বন্ধু ভাবে প্রচন্ড আহত হই। কেননা তা সমাজতান্ত্রিক পথ নয়।

 মনে পরে  একদা দেয়ালের মুখ ছিলো। সে মুখ আমাকে বিশ্বনাগরিক হওয়ার আহবান জানাতো। এখন দেয়ালগুলো চমৎকার পেইন্টিং করা অথবা  দখলে নেয়া। তাই দেয়ালগুলো আজ বোবা। কমিউনিস্টরা যদি দেয়ালটাও দখলে নিতে না পারে  শাসক ও শোষকের  হাত থেকে ক্ষমতা কিভাবে কেড়ে নেবে? দেয়ালগুলোর তো পাহারাদার থাকে না। ক্ষমতার কুরসী ও ক্ষমতাবাদের তো পাহাড়াদার থাকে সশস্ত্র। তাহলে?

আমার মত নস্যি  মানুষের মত।  আমার কথা অপাংক্তেয় নাইই৷ বা  শুনলেন।  উপড়ে উল্লেখিত আলবার্ট আইনস্টাইনের কথাটুকু আবার পড়ুন।  যে বা যারা সমাজতন্ত্র চান। তারপর জনতাকে বুঝান। সমাজতন্ত্র কি? এবং কেন সমাজতন্ত্র প্রয়োজন। সমাজতন্ত্রের শত্রুরা কিন্তু বসে নেই। তারা কেবল প্রলেতারিয়েতের দেয়াল নয়, ঘর দোর মগজ পর্যন্ত দখলে করে ফেলেছে ছলে, বলে, কৌশলে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours