অর্পিতা দে, সাংবাদিক, কলকাতা:

ছোট থেকে বড় সবার কম বেশি আগ্রগের একটি বিষয় হল ভূত , শুধুমাত্র আগ্রহ নয় কখনও কখনও সান্ধ্য আড্ডার মুখোরোচক বিষয় হয়ে ওঠে এই  ভূতেরা | আদতে ভূতের অস্তিত্ব আছে কিংবা নেই সেই বিতর্ক দীর্ঘদিনের , তবে অনেকেই অপার্থিব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে এবং তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সবার সাথে , তবে বিজ্ঞানীদের মতামত অনুসারে এমন অপার্থিব ঘটনার বিভিন্ন  বিজ্ঞান  ভিত্তিক কারন থাকতে পারে যেমন ১) ইনফ্রাসাউন্ড  ২) বৈদ্যুতিন ম্যাগনেটিক ফিল্ড ৩) প্রকৃতি অর্থাৎ মোল্ড ৪) কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া এছাড়াও অন্যতম একটি কারণ হল  আমরা মনে মনে বিশ্বাস করতে চাই ভূত আছে | চ্যাপম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার ৫২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন ভুত আছে, এবং পরিসংখ্যানটি ২০১৫ সালের তুলনায় ১১শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে | ভীতি কিংবা আগ্রহ যেটাই বলা হোক না কেন তা নিয়ে বহু চলচ্চিত্র তৈরী হয়েছে | আর শুধুমাত্র বিজ্ঞান, আগ্রহ কিংবা আলোচনার বিষয় হয়ে থেমে থাকেনি এই বহুলচর্চিত ভুতেরা , বহু যুগ ধরে তাদের জন্য আলাদা করে একটি দিন বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে যেটি প্রথমে ভীতি থেকে এলেও বর্তমানে একটি উৎসবে পরিনত হয়েছে ,সেটি হল অল হ্যালোজ ইভ, এটি একটি স্কটিশ শব্দ তবে বর্তমানে  কথাটি  শুধুমাত্র প্রাচীন ইংরেজিতে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে ১৫৫৬ সালের পর তা আর ব্যাবহৃত হয়নি  কারন  হ্যালোজ ইভ শব্দটি ক্রমবর্ধমান ভাবে পরিবর্তিত হয় হ্যালোজ ইন এবং বর্তমানে হ্যালোইন শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে | আইরিশ ও স্কটিশ বাসীরা ১৯ শতকে তাদের এই ঐতিহ্যময় হ্যালোইন উত্তর আমেরিকায় নিয়ে আসে এবং বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন পশ্চিমের দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে | অনেক পন্ডিতদের মতে এটি  বার্ষিক একটি উৎসব যা প্রাথমিক ভাবে “কেলটিক” ফসল কাটার পর কিছু লোকাচারবাদী  শস্য এবং বীজের দেবতার  উদ্দেশ্যে ভোজ উৎসব “পোমান”-এর  মাধ্যমে হ্যালোইন পালন শুরু করে  ,এবং অন্যদিকে মৃতদের জন্য পালিত উৎসব প্যারেন্টালিয়ার কথাও পাওয়া যায়| এবং এই উৎসবগুলি সাধারনত কেল্টিকদের  সামহেন উৎসবে সম্পৃক্ত।
এই হ্যালোইন পালিত হয় আজকের দিনে অর্থাৎ ৩১শে অক্টোবর , বছরের এই দিনটি নিবেদন করা হয় মৃতদের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ স্মরন করা হয় মৃত আত্মাদের ,এর মূল ধারনাই হল “হাস্যরস এবং উপহাসের সাহায্যে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখোমুখি হওয়া|  লোককাহিনী তে বর্নিত আছে আইরিশ , যুক্তরাজ্য , ওয়েলশ সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করতেন  যে প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনে সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজপুত্র , এবং সমস্ত মৃত আত্মারা জীবিত দের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে নতুন দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য,এই জন্য গ্রামবাসীরা খারাপ আত্মাদের থেকে রেহাই পেতে যে বিভিন্ন রূপ ব্যাবস্থা নিত যেমন পবিত্র বেদীতে আগুন জ্বালাতো , পবিত্র আগুন জ্বালানোর জন্য বীজ ও প্রানী উৎসর্গ করত , আগুনের চারিদিকে নাচত এবং গাইত প্রভাত না হওয়া পর্যন্ত এগুলিরই  পরিবর্তিত রূপ বর্তমান হ্যালোইন| যেখানে পালিত কর্মকান্ড গুলির মধ্যে প্রধান “ট্রিক ওর ট্রিট” “বনফায়ার” “আজব পোশাকের পার্টি” “ভৌতিক স্থান ভ্রমন” “ভয়ের চলচ্চিত্র দেখা”।
তবে বর্তমান হ্যালোইনে খ্রীষ্টধর্মের প্রভাব রয়েছে, ক্রমবর্ধমানে এটি একটি পবিত্র উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ভিন্ন রীতি রেওয়াজ অন্তরভুক্ত হয়েছে , বর্তমানে আমরা যে হ্যালোইনের সাক্ষী তা খানিক অভুতপূর্ব এবং মজাদার যার সাথে প্রাচীন হ্যালোজ ইভের মিল হয়ত আংশিক ,হ্যালোইন ভারতবর্ষেও কিছু মানুষ পালন করে, যা ভালোলাগা মজা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিকে সমান সম্মান প্রদান করে গ্রহন করে নেওয়ার উদাহরন , এছাড়াও উৎসবে মেতে ওঠার উপলক্ষ , আর ভূতেদের প্রতি ছোটবেলা থেকে তৈরী হওয়া কৌতুহল কিংবা ভয় পেতে ভালো লাগার প্রবনতা|


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours