গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

"পেঁচা" মা লক্ষ্মীর বাহন এই পেঁচা বলতেই প্রথমে  যেটা মনে আসে তা হল এক অদ্ভুত দর্শন নিশাচর পাখি, মনে পড়ে যায় সুকুমার রায়ের সেই অনবদ্য পংক্তি, "পেঁচা কয় পেঁচানি খাসা তোর চেঁচানি"...
লক্ষ্মীর বাহন এই 'পেঁচা' নিয়ে অনেক গল্প আছে, শুধু বাংলা বা ভারতেই নয় গ্রিস ও মিশরের প্রাচীন চিত্রলিপিতেও এই পেঁচার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, রোমান হরফে যেটি M সেটিকেই পেঁচার ছবি দিয়ে প্রকাশ করা হত হায়রোগ্লিফিকে। মিশরে শোক ও দুঃখের প্রতীক ছিল পেঁচা। আমাদের পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী পেঁচা যেমন দেবী লক্ষ্মীর বাহন, তেমন গ্রিক কাহিনি অনুয়ায়ী পেঁচা হল এথেনার প্রতীক, এথেনা অবশ্য লক্ষ্মীর মতো সম্পদের দেবী নন, তিনি সরস্বতীর মতো জ্ঞানের দেবী। পেঁচা অন্ধকারে অত্যন্ত ভালো দেখতে পায়, সেটাকে দিব্যচক্ষু মনে করা হয়, সেই অন্ধকারভেদী দৃষ্টিকে শিক্ষার আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাই পেঁচা হল এথেনার প্রতীক।
অবশ্য রোমানদের বিশ্বাস ছিল পেঁচার ডাক শোনা মানে মৃত্যুর পদধ্বনি শুনতে পাওয়া, জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে অগাস্টাস অনেকেরই নাকি  মৃত্যুর বার্তা বয়ে এনেছিল এই পেঁচা। শোনা যায় যে বণিকরা যদি পেঁচার দেখা পেতেন তখন হয় তাঁদের জাহাজডুবি ঘটত না হয় তারা পড়ত ডাকাতের খপ্পরে, এককথায় পেঁচা ছিল অযাত্রা। রোমের বণিকরা সমুদ্রযাত্রার সময় পেঁচাকে অযাত্রা মনে করলেও আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা কিন্তু পেঁচাকে জলের দানবের হাত থেকে তাদের বাঁচানোর রক্ষাকর্তা বলে মনে করতেন। অ্যাপাচে ইন্ডিয়ানরা আবার  পেঁচাকে যমদূত মনে করতেন। গ্রিকদের অতিপ্রাচীন টেট্রা দ্রাখমা মুদ্রায় ছিল দেবী এথেনার প্রতীক পেঁচা। গ্রিকরা তাদের অধুনিক মুদ্রাতেও সেই পেঁচার চিহ্ন বহন করেছে। 
 
পেঁচা অনেক রকম হয় তবে সব পেঁচা কিন্তু লক্ষ্মীর বাহন হয় না, শুধু ছোট্ট সাদা লক্ষ্মীপেঁচাই লক্ষ্মীর বাহন, দুধসাদা ছোট্ট এই পেঁচা নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক, পেঁচা অত্যন্ত দক্ষ শিকারি পাখি,সে যখন ওড়ে তখন বাতাস কাঁপে না  তাই শিকারও টের পায় না তার উপস্থিতি, একইভাবে মনে করা হয় সম্পদ আহরণও করতে হয় একদম নিঃশব্দে, আর তা রক্ষাও করতে হয় অতন্দ্র ভাবে, নিশাচর পেঁচার আচরণে এই সব গুণাবলিই  বিদ্যমান তাই হয়তো লক্ষ্মীর বাহন এই পেঁচা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours