স্বপন দাস, প্রবীণ সাংবাদিক, কলকাতা:

দেবী দুর্গা মর্তে এসেছেন। সদলবলে তাঁর এই আসাটাকে বাহুবলীর মত ক্যাশ করতে চাইছে সবাই। রাস্তা ঢেকেছে নামী কর্পোরেট কোম্পানির হোর্ডিং আর ফ্লেক্সে। সবাই ধন্য ধন্য করছে। এত ব্যান্ড , আর এত প্রোডাক্ট আমাদের রাজ্যে পাওয়া যায়। তাহলে যে দুর্জনেরা বলেন , আমাদের এখানে নাকি শিল্পায়ন নেই, কর্ম সংস্থানের সুযোগ নেই। মোমো ,চপ আর ঢপ শিল্পের মধ্যেই নাকি উন্নয়নের দিশা খোঁজার চেষ্টা চলছে। আর এর হাত ধরেই নাকি রাজ্যে অন্য এক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ার আসবে।
তোমার সন্তানের হাতে কাজ নেই। রাজ্যের অনেক মানুষের পেটে ভরপেট খাবার যায় না। নেতাদের আবার ফুর্তির সীমা নেই। তাঁদের চাটুকারেরা আবার তোমার একান্ত ভক্ত। তাঁদের হাত ধরেই তোমার প্রচারের এত বাড়বাড়ন্ত। এখন তোমার চক্ষুদান করেন যে নেতাদের সর্বময় কর্ত্রী। তাঁর সৃষ্টির চোখ দিয়েই তো তুমি সব দেখো। তাই হয়ত তোমার চোখে সব পড়ে না। 
এদিকে আবার একদল জাহিরি করছে একটি বিশেষ ফুল ছাড়া দুর্গা পুজো হয়না। তাই তারাই মায়ের কাছের লোক। তারাও রাজ্যের জন্য নানা হুংকার দিলেও , আমাদের জন্য সদর্থক সুরাহার কোন বাণী শোনাতে পারেনি।
ভাবছেন , এই পুজোর আনন্দের কটা দিনের মাঝে এসব কথা কেন ? তাঁর কারণ  আর কিছুই নয়। এই পুজোতে যত ব্যানার বা হোর্ডিং লেগেছে , সব কিন্তু অসন-আসন –আর ভূষণের। বিলাশ দ্রব্যের সম্ভারের হাতছানিতে সম্মোহিত হয়েছে আপামর বাঙ্গালী। অনলাইন কেনা কাটা ধ্বংস করে দিয়েছে স্থানীয় বাজার আর কুটির শিল্পকে। ধনেখালি আর ফুলিয়ার শাড়ির কারিগররা মাথায় হাত দিয়ে দাদনের টাকা কিভাবে শোধ করবে সেই চিন্তায় দিশেহারা। মাছ থেকে মাংস ও পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে,আর সস্তায়, তাই ভিড় কমেছে মাংসের দোকানেও। তবে হ্যাঁ , ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় যতটা না লাইন মণ্ডপে, তাঁর কাছাকাছি ভিড় কিন্তু সুরার দোকানে। অসীম ধৈর্যে পাওয়ার অপেক্ষায়। হয়ত বলবেন তাতে আপনার কি ? আমার কিছুই নয়। যে যার আনন্দ সে তাঁর মত করেই করেই করবে । এটাই স্বাভাবিক। গৃহস্থের কথায় , ৭০ টাকার পিঁয়াজে সাড়ে ছয়শত টাকা কিলোর মাটনের থেকে , তিন প্লেট মাটন বিরিয়নি এনে, পাঁচ জনে ভাগ করে খাবার মধ্যে ঝুট ঝামেলাও কম। কিন্তু তাঁর বাড়ির পুরুষ সিংহ কিন্তু এই সময়ে যতই খরচা সুরায় হোক না কেন , একটু ঢুকু ঢুকু করবেনই। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া পুত্রটিও বাবার পথেই হাঁটছে।সেও বিন্দাস। কলেজ থেকে বেরোনর পর সামান্য একটা কিছু জুটিয়ে নিয়েছে। ফলে বাবা ,ডোন্ট কেয়ার। 
যাই হোক আনাদ যে যার মত করবে এতে আর বলার কি আছে। এক বছরের অপেক্ষার পর পুজো আসে।
গত এক বছর ধরে চুপ থাকার পর হঠাৎ বেহালার সাধারণ ভুক্তভোগি মানুষের বিবেক মনে হয় একটু জেগে উঠেছে। সপ্তমীতেও যাঁদের অফিস করতে হচ্ছে।
তাঁদের বাড়ি ফেরা বা যাওয়া ,অনেকটা চাঁদে পাড়ি দেওয়া। কখন অফিস পৌছাবেন আর ফিরবেন , তাঁর নিশ্চয়তা নেই। পুজো দেখতে আসা মানুষের ঢল বেহালার  রাস্তায়। আর নাভিশ্বাস বেহালার সাধারণ মানুষের। প্রসঙ্গ মাঝের হাট ব্রিজের ভেঙ্গে পড়া। পুজো কমিটিগুলোর বৎসারান্তের ফুর্তি আর ব্যবসার জায়গাটাকে সচল রাখতে হবে। এই বিষয়ে মাথা দিলে চলবে।
রাজ্যের সর্বোচ্চ সুপ্রিমো বেহালায় পুজো উদ্বোধনে এসে , নিজের দোষ ঢাকতে ,গলাবাজি করে মাঝের হাট ব্রিজ নিয়ে বেশ কয়েকটি সাফাই দিলেন। পাছে কেউ জিজ্ঞেস করে বসেন,’দিদি এত দেরি হচ্ছে কেন ?” তাই তিনি আগে ভাগেই দোষ চাপিয়ে দিলে সেই কেন্দ্রের ঘাড়ে। ফলে বেহালার মানুষ বুঝে গেলেন আবার ভাওতাবাজির একটা খেলা হয়ত শুরু হল। বেহালার সঙ্গে এবার টালা ব্রিজ  পেরিয়ে যাঁদের আসতে হয়, তাঁদের ঘাড়ের ওপর খাড়া নেমেছে। বেহালার থেকে অনেক আগে থেকেই সরব তাঁরা।
আচ্ছা , বলুন তো চারদিন শেষে পালতে যাবে কি সব? কমে যাবে কি সব কিছুর দাম ? শিল্পের বন্যা বইবে রাজ্যে ?
হে মা দুর্গা , কাল অস্টমীর সময় সবাই অঞ্জলীতে চাইবে ,”রূপ দাও,ধন দাও ,যশ দাও,সন্তান দাও , আতিশয্য দাও’।সবটাই নিজের জন্য চাইব আমরা। কই মন্ত্রের মধ্যে থাকবে না , মাঝের হাট ব্রিজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য সবাইকে সুমতি দাও, শিল্প গড়ার জন্য আশির্বাদ দাও,বেকারদের কর্মের সুযোগ করে দাও ...।ইত্যাদি ইত্যাদি।
মা তুমি হাসছ। হাসো আমাদের দুর্দশা দেখে। মা তোমায় আগাম বলে রাখি।আসছে বছর তোমার আরাধনা আরও বেশি হবে , কেন জানো। একুশে ভোট আছে যে। তুমি হাসি মুখেই বাড়ি ফেরত যেও। এখন যে তুমি রং বদলাও। হাওয়ার সঙ্গে চলে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours