জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা: 

কোন সমাজ বিজ্ঞানী, যিনি কালের সামনে দাডিয়ে, গনতন্ত্রে  সাম্যে-অভিমুখের  প্রতিনিধীত্ব করবেন, তাকে মেনে চলতেই হবে,  ইতিহাসের যে মুখে তিন দাড়িয়ে, সেটা মহাকালের গর্ভে কালের পর কালকে স্থাপন করে,  কালান্তরের পথে  মালাঁগাথা।টাই তার কাজ। আর যদি স্মরন রাখা হয় ইতিহাসের অর্থই  অর্থটাই বৈপিরত্বের সংঘাতে কালে কালে একটা সন্ধি, যাকে দর্শনের ভাষায় বলা যাবে বৈপিরিত্বের একতা। 
---- ইতিহাস গবেষক মাত্রেই অবগত,  এই সংঘাতের মুল মুখ দুই পরস্পর বিরোধীতা এবং একের বিনাশের মধ্যেই অন্যের উত্থান।  সেখানে এই উত্থানকে কখনোই সংহত করা সম্ভব নয়, যখন নিজের অতীত এবং বিজিতের ইতি এবং নেতিবাচকতার দিকগুলি কালান্তরের পরিকল্পনায়, তুল্য মূল্যে বিচারের নিয়মকে অস্বিকার করা হয়।
---  পরম্পরাকে অস্বিকার করে শুধু যে একটা বিজয়কে ধরে রাখা সম্ভব নয়, ইতিহাসের সেই সত্য যদি মাথায় না রাখা হয়, এক একটি শ্রেনী শাসনের উত্থান এবং তার ধারাবাহিকতা আসলে অতীতের দীর্ঘ পরম্পরার যোগফল।লেলিনের পরে মাও-জে-তুং আরো পরিস্কার করেছেন, কিভাবে ইতিহাসের দুই পিপরীতের সংঘাতে, এক পক্ষের অনেক অনেক 'বোধ' অন্যপক্ষে্র মধ্যে ডুকে গিয়ে লতায় পাতায় বিস্ফোরিত হওয়ার সুযোগ করে নেয়। 

----- এইভাবে দ্বন্দ্বের অজস্ত্র শ্রোত থেকে, যা কিছু প্রয়োজনীয় সেগুলিকে তুলে নিয়েই, কিংবা ইতিহাসের সব ফুলের মালাগাথার ভেতর দিয়েই নতুনের পরিপ্রেক্ষিতটিকে নির্মান করতে হয়। সেখানে অনেক অনেক ফুল পাওয়া যাবে, যেখানে পোঁকা-মাকর বাসা বেধেছিলো। সেখানো কোন ফুলই পরিত্যজ্য নয়, কেবল সেই পোকা-মাকড়  ফেলে দিয়ে, ইতিহাসের প্রয়োজনের মতো করে নিতে হয়।
----- যদি শ্রম কিংবা সাম্যের অগ্রগতি-ধারার  কথা বিবেচনা করা হয়, সেটা তো শ্রমের উৎপত্তি, তার গুনগত উত্তোরনের ইতিহাসের সাথে বাঁধা এবং বিপ্লবের প্রকৃতিটি নির্ভর করবে, শ্রমের শৈ্লীগত বিকাশের ধাপ অন্যযায়ি।  । সেখানে সংঘাতের রাজনৈ্তিক প্রতিবিম্ব ধরা পড়তে শুরু করলো স্পার্টাকাস বিদ্রোহ থেকে। এর ক্লাসিক্যাল উত্তোরন ঘটার প্রথম ধাপ  ১৮৪৮ সাল এবং পরে ১৮৭১ সালের প্যারীর বিদ্রোহে । এই বিদ্রোহেরই , বিশ্বমানবিক উত্তোরন ঘটলো, ১৯১৭ এর অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।
কাজেই ভারতীয় গনতান্ত্রিক বিপ্লবে যদি, সাম্যের অভিমুখে নিয়ে আসতে হয়, তবে নিশ্চিতভাবে রেনেশা বর্নীত গনতান্ত্রিক অভিমুখটি যথেষ্ট মর্য্যাদাপাবে। সেখানে কংগ্রেস কিংবা অন্যান্য গনতান্ত্রিক দলগুলির কর্মধারায় যে সব বৈপ্লবিক উপাদান বিদ্যমান ছিলো আছে কিংবা ছিলো - সেগুলিই প্রধান ভূমিকা নেবে। কিন্তু  আজকের ইতিহাস নির্দেশ করে দিয়েছে, বুর্জোয়া বিপ্লব কিংবা উদারনীতিক অভিমুখ আর নিজের পায়ে চলার যোগ্যতা হারিয়েছে। এই সুত্রেই, সি পি আই এম এর কর্মসূচীতে, সাম্য বা শ্রমিকদের সামনে রেখেই গনতান্ত্রিক  বিপ্লব সমাধা করার কথা বলা হয়েছ। উল্লেখ করা হয়েছে, ওটি না হলেই কিছুই হবে না, যা হবে তার কিছুই থাকবে না।
ইতিহাসের অভিসাপ এখানেই, ভারতে ব্রহ্মন্নত্বের উত্তর রেখায় সব রাজাদের মতোই, অনেক উদারবাদী নেতাদের মতোই, আমি নিশ্চিত হয়েছি
------ সাম্যবাদী শ্রমিক আন্দোলনের নেতারাও সেই বুর্জোয়া অমরত্বের নীতিকে কখনো ঘোষনা হিসেবে না রাখলেও, মনে মনে অনেকেই - এই আকাশে দুই সূর্য্য না থাকার কথনে অনেক দিক থেকে প্রভাবিত। অথচ সাম্যবাদী সৃজনীর মূল কথা এক আকাশে লক্ষ কোটি সুর্য্যের  এক নিদৃষ্টল শৃংখলার যুগল বন্দি।
------  যদি গভীরে যাওয়া যায়, দেখা যাবে একটা সাম্যবাদী আন্দোলনের ভাবাদর্শ থেকেসংঘঠন এবং সেখান থেকে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে সম্পর্কের সবকিছুই, একটা নি্দৃষ্ট কিংবা ফ্লেক্সিবিল নীতিতে শৃংখলিত।
------  ভারতের ক্ষেত্রে বিপ্লবের অভিমুখটাই যেখানে গনতান্ত্রিক, সেখানে ভারতীয় উদারবাদী সংহতিতে, ইতিহাসের কালে যেসব সামন্ত বিরোধী কিংবা  উপনিবেশবাদী সংগ্রামের অবদানগুলি স্থান করে নেবে। সেখানে নশ্চিতভাবে স্থান পাবে। 
------- অন্যপ্রান্তে সাম্যবাদী অভিমুখ হিসেবে, বিশ্ব শ্রমিক এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের অভিমুখ হিসেবে 'কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টোর সিড়ি বেয়ে পুরো সাম্য এবং শ্রমিক আন্দোলনের নির্য্যাসগুলি সমন্বিত হয়ে, ভারতীয় সাম্যবাদী আন্দোলনের নির্য্যাসগুলিকে খুজে খুজে বের করে এনে মেহনত এবং মেহনতীদের আত্মমর্য্যাদাকে সংগহত করে ক্রমাগত বিপ্লবী স্তরে উঠিয়ে  আনার চেষ্টা যেমনভাবে চলতে থাকবে
-----   তেমনভাবেই দেখাযাবে, একপ্রান্তে  সেই, বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্রনাথ, তার সাথে মহাত্মা, আহম্মেদকর থেকে নেহেরু এবং এমন কী ইন্দিরা পর্য্যন্ত সব আবেগ মন্থিত যুক্তিবাদ্ ও ভৌতিকবাদী ভাবসত্বা, ঔপনিবেশিক এবং আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্র বিরোধি অভিমুখ এক তরংগে ধরা পরবে।  
-------  সেখানে  সাম্য - তার আন্তর্জাতীক অভিমুখের সাথে একাত্ম হয়ে ভারতের সেই প্রথম শিল্পপুজি আসার   পর থেকে আজকের আধুনিক শ্রমিক শ্রেনী আসা পর্য্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতা সমুহের সাথে সেই এক'শ  বছরের সাম্যবাদী আন্দোলনের ইতিবাচক দিকগুলিকে সংহত করেই, একটা নেতৃ্ত্বদায়ী প্রতিমুর্তী গড়ে তোলার প্রয়োজন যাবে।
------- আমরা নিজেরাই যখন, সামন্তিক বুর্জোয়াদের মতোই 'এক আকাশে দুই সূর্য্য' বিরাজমান না থাকতে পারার তত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরেন, তখন তা শিল্পপূজীর নিজেকে এক রেখে, তাদের রাজনৈ্তিক আধিপত্ত খাটানোতে একেবারে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হন,  তবে মানতে হবে
------- এই একাত্মহীনতাই, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের সাথে আধুনিকতার প্রশ্নে নেহেরুকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাই, আদিভৌতিকবাদ সমেত ফ্যাসিবাদের উত্থানের বড় কারন। এমন কী ইন্দিরার আমলেও, নেহেরুকে স্বাধীন ভাব্রতের  আধুনিকতার প্রতিভু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয় নাই। পরিনামে দেখুন, ভারতীয় ফ্যাসিস্তরা ইন্দিরাকেও নয়, নেহেরুকে আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছে। 
------  অন্যপ্রান্তে যখন দেখি, সাম্যবাদীরাও, তার অতিবিপুল অতীতের ঐতিহ্যকে বিশ্লেষন করে, "একখন্ড সাম্যের  রজনীগন্ধা" উপহার দিতে পারার  ব্যর্থথাও বোধ হয় কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলের আধুনিক সত্বাকে টিকিয়ে রাখার  প্রশ্নে নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
আধুনিক শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধী হিসেবে, সারাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছেঃ এদেশের সাম্যবাদীদের মধ্যে, লাইন হিসেবে ভূল হলেও - ---'এ আজাদী ঝুটা হ্যায়' কালের প্রভাব কমে যাওয়ার পর থেকেই, যেভাবে সাম্যবাদী এবং শ্রমিক আন্দোলনে, যে মাত্রায় পচাজল জমেছিলো এবং মাঝখানে সোভিয়েতের ভাংগন পর্য্যন্ত সময় বাদ দিলে আমরাও বোধ হয়, অনেক  'সূর্য্যে'র গুতোগতি থেকে বেড়িয়ে আসার সংগ্রামটা ভূলেই গেছি। দলে কেন্দ্রিকতা নষ্ট হয়ে, ফেডারালিজমের উত্থান, ট্রেড ইউনিয়নের উপরে দলিয় কেন্দ্রিকতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবৃত্তি থেকে শুরু করে
----- নিজেকে খুজে বেড় না করার প্রবৃত্তিটাই সম্ভবতঃ এই আন্দোলন সৃজনীহীনতায় গনতান্ত্রিক শক্তির সংহতি থেকে নেতৃ্ত্বে সাম্যবাদী অভিমুখের বিষয়টি ক্রমাগত বিলম্বিত হতে হতে, ফ্যাসিবাদের পথ যখন উন্মুক্ত করেছে, তখন  হাজার দুয়ারীর মূল দরজাটাি বুঝি অধুরা।
----- কিছুদিন পূর্বে লেনিনের একটি ছবিতে  ভারতীয় সাম্যবাদী আন্দোলনের প্রথমকালের প্রান পুরুষ মানবেন্দ্র রায়ের প্রতিকৃ্তিতে আননাপ্লুত হয়ে ছবিটি, পোস্ট করে এই লেখক বিশ্চিক দংশনে পড়ে গিয়েছিলেন। 
------ ময়দানের সংগ্রামে জীবনের সিংহভাগ কাটানোর দৌলতে, একটা কথা বুঝেছিলাম, অতীতের সবাইকেই এখন পাশে নিতে হবে, এই নেওয়ার সময় পরিত্যক্ত অংগগুলি বাদ দিয়েই নিতে হবে। বলেও দিতে হবে, কেন বাদ দেওয়া হোল। এইভাবে, ইতিহাসের মন্থন করে, সাম্য যখন প্রতিবিম্বিত হওয়ার মতো একটা চালচিত্র খুজে পাবেন, দেখা যাবে
------ এখনো টিকে থাকা উদারবাদীরাও গনতন্ত্রে সাম্যের অভিমুখে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে।
এর পর সেই নির্য্যাষ থেকে, ঃ
'দুই বা তিনটি মূর্তী বের করে নিনঃ 
আমি কয়েকবার উল্লেখ করেছিঃ
সেখানে -- কমরেড বি টি রনদিভে এবং জ্যোতি বসুর যুগলমূর্তীই
কালগত দিক থেকে ভারতীয় সাম্যের প্রতিনিধী হতে পারেন এবং তেমনটিই হতে হবে।
এমন যারা আছেন, ট্রেড ইউনিয়নে কিংবা দলে
ধর্মঘটের বিরোধীতা করেছেন প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, তাদের কিছুতেই এই যুগলমূর্তীর কাছাকাছি আসতে দেওয়া চলবে না। (ক্রমশ)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours