ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ শক্তি - আরাধনার অন্যতম ক্ষেত্র বীরভুম জেলা! এই জেলায় আছে পাঁচটি সতী পীঠ, তারাপীঠের মতো অন্যতম সিদ্ধ পীঠ, এবং জেলার উত্তরের শেষ সীমায় ভদ্রপুরে মহারাজ নন্দকুমারের ' দুহাতের ' গুহ্যকালী ' কষ্টিক পাথর- নির্মিত শিবহীন সর্পালঙ্কারে ভূষিতা ও জোড়া সর্পের উপর উপবিষ্টা অনুপম কালী মায়ের বিগ্রহটি মহারাজ চৈত সিংহের কুলদেবী হলেও কিংবদন্তী, এই বিগ্রহটি মহাভারতের জরাসন্ধের কুলদেবী ছিলেন!
তাই এই জেলায় শক্তির বিশেষ করে মা কালীর আরাধনার খ্যাতি থাকাটাই স্বাভাবিক! তাই সমগ্র জেলা জুড়ে বিভিন্ন আচারে কালী পুজো হয়!
এই জেলার উত্তর প্রান্তে অজয় নদের দক্ষিন তীরে প্রত্যন্ত গ্রাম 'লোবা' গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি কাজ ও দিনমজুরী! যদিও গ্রামের নীচে আছে 'কালো হীরে' অর্থাৎ প্রচুর কয়লা! এই গ্রামের প্রয়াত জীতেন বাদ্যকর ' ঢোল' বাজানোর জন্য পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ! সুদুর আমেরিকাতে ঢোল বাজিয়ে মিলেছিল সন্মান!
এই লোবা গ্রাম বিখ্যাত গ্রামের মা কালী ' লোবা মা'-এর জন্য!এই কালীপুজোয় প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহন থাকে, ব্রাক্ষ্মন, কায়স্হ,কেওট , বাউরি ও বাগদী সকলের!
আজ থেকে প্রায় তিন'শ বছর আগে নিকটস্হ জোবলাই গ্রামের কেওটরা দামোদরের উত্তর পাড়ে গৌরবাজার( অধুনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্তর্গত)গ্রামের তালপুকুরে ( কালীদহ নামেও খ্যাত )মাছ ধরতে গিয়ে একটি মা কালীর শিলামূর্তি পান! সেই মূর্তিটি লোবা গ্রামের তৎকালীন জমিদার কায়স্হ সম্প্রদায়ভুক্ত 'ঘোষ' দের বাড়ীতে দেয়! ঘোষরা সেটি গৃহে পুজা করতে থাকেন
ইতিমধ্যে অবধূত রামেশ্বর দন্ডী নামে এক কাপালিক গ্রামে এসে ঘোষেদের বলেন, তাঁদের বাড়ীতে যে মা আছেন তিনি তাঁর আরাধ্যা! তিনি মায়ের পুজা করবেন! শুরু করেন কালী পুজা! মা কালী লোবা মা নামে খ্যাতা হ'ন! কাপালিকের পর নিত্য পুজার খরচ বহন করেন ঘোষ পরিবার পুজা করেন চক্রবর্তী পরিবার!
মা দুর্গার বিজয়া হওয়ার পর পুকুর থেকে মায়ের কাঠামো তুলে১ মন্দিরে আনা হয়! পরদিন একাদশীতে মায়ের কাঠামোয় মাটি দেওয়া হয়! মাটি আনা হয় গৌরবাজার গ্রামের তালপুকুরের ( কালীদহ) ঈশান কোন থেকে! মাটি আনার দ্বায়িত্ব পালন করেন বাগদী,পরিবার! কাঠামোয় খড় দিয়ে ম্যাড় বাঁধার বাবুই দড়ির যোগান দেয় বাউরীরা!
লোবা মায়ের নিশি পুজা হয়! অনেক ছাগ বলি হয়! পুজোর দিন রাত্রি লোবা মায়ের পুজার দায়িত্ব ঘোষ পরিবারের! পরদিন থেকে বিসর্জন পর্য্যন্ত কেওট বা ধীবররা সব দ্বায়িত্ব পালন করেন!
লোবা মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে! পুজো উপলক্ষে মেলা বসে অংশ নেয় মুসলিমরাও!
প্রতিপদে দেবীর বিসর্জন হয় গ্রামের ' কালী ভাসা' নামে একটি পুকুরে! একসাথে তিনটি প্রতিমার নিরঞ্জন করা হয়! বড় মা অর্থাৎ লোবা মা, মেজো মা ( বাবুদের মা) ও ছোট মা (বয়াড়ির মা)!
পুজোর দিন শুধু নয় সারা বছর ভক্তরা মনস্কামনা নিয়ে১ লোবা মায়ের মন্দিরে আসেন! মায়ের শিলামূর্তি নিত্য পুজিতা হ'ন!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours