জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আজ ৩১ শে অক্টোবর। দেশের  সবথেকে জনপ্রিয় প্রধান মন্ত্রীর প্রয়ান দিবস আজ।  হত্যা করা হয়েছিলো - শব্দকটি  ভয়ংকর নিষ্ঠুর। তাই বরং বলি জাতীয় অখন্ডতার কারনে এই দিনে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। এই দিনে আমার, আমার পরিবার এবং সেই অগনীত মানুষ, যারা এই রাষ্ট্র নেতাকে শহীদ বলে মেনেছেন, তাদের সবাইকার পক্ষ থেকে অবণত মস্তকে স্মরন করছি।

মনে মনে মানলেও, জাতী এই শহীদের সম্মান দেয় নাই। কোন সময় হয়তো বা রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল অনুযায়ী, দেশের প্রধান মন্ত্রি রাজঘাটে গিয়ে, অঙ্গ রক্ষীদের হাত ধরে,দিনের সব থেকে বড় মালাটা দেবেন শ্রীমতি ইন্দিরার সমাধিতে। তবু, সেই চরম আতংকের দিনটিকে জাতীকে স্মরন করিয়ে না দিয়ে তিনি, অন্য এক রাষ্ট্র নেতার জন্ম তিথিকে তিনি বার বার প্রতিপক্ষ হিসেবে উপ্সথাপিত করতে থাকেন
----- আসলে চিত্তভাবনায় ইন্দিরাকে দেওয়া মালাটাও সেখানেই চলে যায়।

----  তাই হয়তো, আরো একটু নির্দয়ভাবে বলতে হয়, যে দলকে শ্রীমতি ইন্দিরা  এবং তার পিতা সারা জীবন লালন  পালন  করেছেন, মহাত্মাজীর 'যাও ফিরে জোড়া বলদ' কালের অন্ধকার থেকে পশ্চাত্যের আলোকবর্তিকায়,  পথ নির্দেশ করেছিলো, সেই দলও
----- যদি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতার অখন্ড প্রতিমূর্তীতে কিংবা শতভাগ বিরোধীতায় না থাকতে পারলো,  অর্থনৈ্তিক স্বয়ংসম্পুর্ণতা এবং জাতীয় একতার প্রতীক হিসেবে, এদের দু'জনকে প্রতিষ্ঠিত করার যে উদ্যাওগ নেওয়া উচিত ছিলো, সেটা করেন নাই।
বরং সম্ভবতঃ নরসিমহারাও-মনমোহন সিং, প্রবর্তীত তথাকথিত তথাকথিত, বিশ্ববাজার নীতির তোষামোদ করতে গিয়ে, জাতীয় একতা এবং অর্থনৈ্তিক স্বয়ংসম্পর্নতাকে পেছনে ঠেলেছে এবং এই পেছনে ঠেলাটাই আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রের চাকরবৃত্তির দিকে যদি কোন জাতীকে ঠেলতে থাক্বে
----- স্বাভাবিক কারনেই অতীত গৌ্রব সমুহ ফিকে হতে দেওয়া হয় প্রথমে এবং পরে ক্রমে সাম্রাজ্যবাদের পদ লেহণ করাই নীতি হয়ে দাড়ায়। তখন এককালে স্বাধীনতা, আত্মমর্য্যাদা এবং স্বয়ংসম্পর্নতার দিকে যারা দেশকে এগিয়ে দিয়েছেন, তাদের অমরত্বকেই সমুদ্রের জলে বিষর্য্যন দেবন নিশ্চিত।
------ নিজের দল যখন অর্থনৈ্তিক দাসত্বের নীতিকে, সামাজিক      আত্মমর্য্যাদাহীনতাকে ক্রমে সামাজিক দাসত্ব এবং সেখান থেকে,  রাষ্ট্রের মহিলাদের চরম অমার্য্যাদাকে ক্রমে 'সামাজিক সম্পত্তিতে' বদলে দেওয়ার রাজনৈ্তিক ভ্রুন নির্মান করে দেবেই। তখন মনে মনে এমনো মানষিকতা, দাড়িয়ে যায়
------ নেহেরু কিংবা ইন্দিরা কেন, দিল্লী পথে পথে নেহেরু প্রপৌ্ত্রের প্রস্তরমূর্তী বসিয়ে দিলে ভালো হয়ত।  এই পরিস্থিতিতে যখণ কোন অসভ্য ও বর্বর সরকার ক্ষমতায় আসবেন,
-----  তখন সংসদে কোন সর্বসম্মত প্রস্তাব এনে, ইন্দিরাকে শহীদের মর্য্যাদা দেওয়ার পরিবর্তে, যার বা যাদের নেতৃ্ত্বে  মহাত্মা গান্ধী হত্যা হয়েছিল কিংবা যিনি বৃটিশের কাছে বার বার 'এজেন্টের' কাজে ভূষিত করার আর্জি জানিয়েছেন অথবা দেশের একতার জন 'মল ও মুত্র' ছাড়া কিছুই ত্যাগ করেন নাই, তাদেরজকেই 'ভারত রত্ন' পদে ভূষিত করবেন।

কংগ্রেস দল, আর এক বিশ্ব রেকর্ড করলেন। এমণ একজণকে প্রধান মন্ত্রী করলেন এবং ১২ বছরের জন্য  রাখলেন, যার অর্থ, উনার হাত ধরে দেশে অর্থণীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন  করবে, রাজনীতি নয়। আরো একটা ভয়ঙ্কর কাজ করলেন, প্রধান মন্ত্রীর রাজনৈতিক মুখ হিসেবে এমণ একজনক ঠিক করলেন যিনি রাষ্ট্রপতি অবসর নিয়েও, পুরংবার অর্থমন্ত্রী হওয়ার টোপে, ফ্যাসিস্ত চুড়ামনিকে নিজের হাতে মিষ্টান্ন খাইয়ে এসেছেন।অন্যপ্রান্ত থেকে কার্য্যতঃ টুপী পড়িয়ে ছেরেছে। এদের কী কখণো রাজনৈতিক ম্যানেজারির দায়ীত্ব দেওয়া যেতো।
 --- পরিনামে শতাব্দীর সব থেকে মুর্খামীদের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, আই এম এফ এর হুকুমে, কমিউনিষ্টদের তাড়িয়ে দেওয়া। অনেক সময়েই এসব 'রাজনৈতিক পন্ডিতরা' বুঝতেই পারেন না,---  নেহেরুর জনশ্রুতির অর্ধেকটাই স্তালিন-নেহেরু অর্থনৈতিক চুক্তি এবং  ভারতে সাম্যবাদীদের  সাথে কংগ্রেসের  বিরোধ-সহযোগীতার নীতি। অনুরুপভাবে, ১৯৭১ থেকে ইন্দিরার মৃত্যুর দিন পর্য্যন্ত, সাম্যবাদীদের সাথে  যতই বিরোধীতা থাকুক না  কেন - প্রথমে ব্রেজনেভ-সোভিয়েতের হাত ধরে অর্থনৈ্তিক স্বয়ংসম্পূর্নতার নীতির অলংঘ্নীয় সুতোটি ইন্দিরার জনপ্রিয়তার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে।

এতো লিখতে হচ্ছে একটা কারনেই। আজ যদি দেশের এতো দুর্গতির পেছেনে একটা বড় কারন, নেহেরু এবং পরে ইন্দিরার জনপ্রিয়তাকে দলের পক্ষে ধরে না রাখতে পারা বলে বিবেচিত হয়, , তার দায় মূলতঃ কংগ্রেস দলকেই নিতে হবে।কংগ্রেস যে কারনে ডুবেছে, তার অন্যতম কারন এখানেই।

সম্ভবতঃ সে কারনেই সাম্যবাদীরা, সেই স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রস্ন তুলেছিলো। যখন চিন পারলো, দীর্ঘ দিনে মাও-সেতুং এর সাথে কণফিউসিয়াস কে নিয়ে চলতে, এবং পরে এই দুজনের সাথে প্রয়োজন অনুজায়ী দেন-সিয়াও-পিং কে যুক্ত করে নিতে
----- ভারতে নেহেরু এবং ইন্দিরাকে বিসর্জন দিয়ে এসব আত্মমর্য্যাদাহীন লোকেরা,  এই দুই নেতারা যায়গায়, মণমোহনের যায়গা করে দিয়ে দেশকে ডুবিয়েছে, নিজেরা ডুবিয়েছে এবং সাম্য এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের চরম ক্ষতির কারন হয়েছে। পরিনামে নিজেরা আরো ডুবেছে।

ভারতের ভারতের  যারা রাজনীতি আধারিত অর্থনীতি বা পলিটিক্যাল ইকনমিকেই  যারা এখনো জীবণ রেখা বলে মেনেছেন,তাদেরো চাপের মুখে বিভ্রান্ত বলেই মনে হয়েছে অনেক সময়
----- কেন যে তারা , কার্য্যতঃ পুজিতন্ত্রের অর্থনীতিকে মেনেই, কী করে যে বলিষ্ট রাজনৈতিক অভিমুখকে,সামনে, সাম্যবাদী  নিয়ন্ত্রনে যে কি করে বিকাশের দিক দিয়ে, আমেরিকাকে টপকে যাচ্ছে শুধু নয়,টাকার দুনিয়ায় ডলারের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে, সে কাহিনী বোঝায় না তা বুঝতে পারি না।
----- এদেশের সরকারকে, সাম্যকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিলো না, নেহেরু-ইন্দিরায় যদি সোজা হয়ে, জাতীটাকে দাড় করিয়ে রাখতে পারতো। আর আমরা ভয়ের চোটে এদের পেছনে ঠেলে দিয়ে,অর্থনীতিটাই শিল্পপুজির হাত থেকে বানিজ্যিক পুজির বকলমে ইউরোপ এবং আমেরিকার পুজিতন্ত্রের হাতে তুলে দিলো। সিংগুর থেকে টাটা এবং পুরুলিয়া থেকে জীন্দল ইস্পাতকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর, ভারতবর্ষেই ক্যাপিটাল গুডস শিল্প বন্ধই হয়ে গেলো। এসব স্পেয়ার পার্টস আমাদানী শিল্পও বারোটা বেজেছে, কাচা-মানুষ রপ্তানী ছাড়া আমদানির খরচা মেটানোর সব পথ বন্ধ।
এইভাবে মূর্খ্য, ভিতু এবং দৃষ্টিহীনদের পাল্লায় পরে, দেশটাই নয় চাকর হয়ে গেলো  তাই নয়, মণণটাই চাকরামীতে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।

আজকে ভারত সহ, পুরো উপমহাদেশের শক্তি সাম্য যে ক্রমে গণশত্রুর দিকে ঝুকছে, এবং পশ্চিম বাংলা তথা ভারতের শক্তি সাম্যের বিপর্য্যয় কর পরিস্থিতি যে, বাংলাদেশ, ভূটান এবং নেপালের শক্তি সাম্যে যদি নেতিবাচক প্রভাব পরতে থাকে
---- তার যে অনেকটা দায় ভারতের সাম্যবাদী দলের বাবু বা সরকারী করন, সেটাও হয়তো, দলের নেতীবাচক  শ্রেনীগত কম্পোজিজণ প্রভাব ফেলেছে। অন্যথায় সাম্যবাদী দলগুলি কেন বুঝবে না - ভারতে কতটুকু এবং কেমনভাবে অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পুর্নতা কিংবা সেকুলারিজম কাজ করবে, রাজনৈ্তিকভাবে, তা যে মুলতঃ নির্ভর করছে, সাম্যবাদী দলটির
সাম্যের অভিমুখে নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার প্রশ্নের সাথে
------ সেই কথাটি সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর থেকে যেভাবে সাম্যবাদী দলগুলি ভূলে গেছে, তাতে মনে হয়েছে, দলের নেতা কর্মীদের
শ্রেনীগত অবস্থানটাই যদি আপোষকামী থাকে তবে, কংগ্রেসের মতো দলগুলি ধ্বসে যাবে,, সাম্যবাদীরাও একদিন কংগ্রেস হয়ে যাবে।
----- এই লেখার সাথে দুটি ছবি রয়েছে। একটি সোভিয়েত শাসনের সাথে ভারতের সম্পৃক্ততা দ্বিতীয়টি, ভারতের মিশ্র অর্থনীতির স্বাধীন ধারা ভারতের মর্য্যাদাকে কিভবে খোদ আমেরিকার পরিবর্তণকামীতাকে স্পর্শ করতে পেরেছিলো। ১৯৫৪ সালে নেহেরু-ইন্দিরার আমেরিকা ভ্রমনের সময় সেদেশের পরিবর্তণকামীতাকে পাগল করে দিয়ে ছিলো। শ্রীমোদীর আমেরিকা ভ্রমনের মতো সাজানো ফুলের বাগান ছিলো না।  It was virtually a madrasah  of youthfulness.

শিরোনামার উপরে দুটি কথা বলে উপসংহারে যাবো। কথা এখানে - এটা যদি স্মরনে রাখা হয়, রাজনীতি যারা করেন, তারা সব সময় নিজ থেকে যে শ্রনী শাসণ করছেন, তাদের দ্বারা প্রভাবিত হণ, তবে মানতে হবে, সেখানে যেমণ অনেক উজান থাকবে, ভাটাও। শ্রীমতি গান্ধীর জীবনে দুটোই ছিলো বিপুলভাবে। তবু, কোন রাজনীতিকের মূল্যায়ন হতে হবে, তার ইতিবাচক দিকগুলির সাথে নেতিবাচক দিকগুলির তুল্য মূল্যে। সেখানে, নেতিবাচকতার পেছেনে, যে সব ঘটনা বাধ্যবাধকতার সুত্রে গড়িয়ে চলে আসে, সেগুলিক কোন ব্যক্তির ইতিহাসে স্থান পাওয়ার প্রশ্নটিকে খাটো করে দেখা অপরাধ।
---- যদি মেনে চলা হয়, আজকের দিনে সামগ্রিকতার বিচারে কোন বুর্জোয়া দলের বুর্জোয়া নৈতিকতায় দাড়িয়ে কাজ করা অসম্ভব, তবে এটা মাানতে হবে, এমণ একটা দলের সর্বোচ্চস্তরে  স্বৈরতন্ত্রী  হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এর পরেও, ভারতের সাম্যবাদী দল দুই টুকরো হয়ে যাওয়া, চিন-রাসিয়া বিরোধ ইত্যাদি শ্রীমতি গান্ধী কেন, যেকোন দেশের মাঝামাঝি দল গুলির প্রধানদের মতি বিভ্রম হতে বাধ্য।

------ আরো মানতে হবে, যদিও মেনে চলতে হয়, খালিস্থান সমস্যার
কিংগ্রেস দলের সতরঞ্জ খেলা হিসেবেই উঠে এসেছিলো। কিন্তু শেষ বিচারে যে শক্ত হাতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, তা শ্রীমতি গান্ধীতেই সম্ভব ছিলো। কাজেই,ইন্দিরা উত্তর কালে শিখ সম্প্রদায়কে যত নির্যাতণই তাকে ভোগ করতে হোক না কেনয়া? সব বেদনার কথা মেনে নিয়েও বলতে হয় ---
সেই সংকটকালে ইন্দিরা বিহীনতায়, নিশ্চিতভাবে পাঞ্জাব ভাতের হাতছারা হয়ে যেতো।

সব শেষে সেই দিনটির স্মৃতি থেকে দু'চারটে কথা বলেই লেখাটি শেষ করছি। ১০৮৪ সালের ৩১ শে অক্টোবর দিনটিতে দুর্গাপুর ইস্পাতের প্রশাসনিক ভবনের সামণে ইউনিয়ানের নামেই একটা বিশাল বিক্ষোভ চলছিলো।উনারি নীতির বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, উনি অর্থনীতির প্রশ্নে উলটো হাটা শুরুকরেছিলেন। সেদিনের সেই  হত্যা, তাকে এই বিপরীত হাটা থেকে দায়মুক্ত করে দিয়ে গেছে।

মনে  আছে তখন সেই সভায় আগুন ঝরছিলো। জীবন রায়ের হাতে মাইক। একেবারে, জিটি রোড থেকে কারখানা গেট পর্যন্ত মাইকে আগুন বেরুচ্ছে। বক্তা সেই ১০৭০ এর আগষ্ট থেকে পুরো একটা বছর, উনার প্রশ্রয়ে, সিদ্ধার্থ রায়ের দৌলতে জেল খেটা এসেছেন জোড়া খুনের মামলা  নিয়ে। কাজেই আক্রমনের  বহরটা উচুমাত্রাতেই ছিলো।

------সে সময়েই কেউ, কানে কানে খবরটা দিয়ে গ্যালেন। বিকেল তিন হবে। খবরে প্রকাশ ছিলো তিনি বিচে আছেন তখনো। তবে, আসলে তখনই তিনি নেই ।

----- এক মূহূর্তের মধ্যে কিভাবে সেদিন সব দান উলটে গিয়েছিল, তা দেখে সবাই মুগ্ধ । সেদিন দেখেছিলাম, কীভাবে শ্রমিকদের ঘারে যখন জাতীয় দায়ীত্ব চেপে যায়, কত বলিষ্ঠতার সাথে সে দায় পালন করে।সারা দেশ যখন দাংগায়, দুর্গাপুর দূঃখ বেদনা এবং শ্রদ্ধায় সমাহীত।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours