জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:       এদেশে ধর্রমের জিগির তুলে,  সুযোগ পেলেই গরিব মুসলিম হত্যা বা লিঞ্চিং এর পাশাপাশি যখন দলিত হত্যা, দলিত পরিবারের মৃতদের সাধারন শ্মশানে দাহ করতে না দেওয়ার আখচার ঘটনা, অসবর্ণ বিবাহ বন্ধে হত্যাকান্ড, দলিত মেয়েদের উপরে বলাৎকারকেও, প্রাচীনত্বের কথা বলে সমর্থন করা 
----- ইত্যাদি ঘটনা, অন্ততঃ একটা কাজ করে দিয়েছে। এদেশে বর্ণাশ্রমের উপস্থিতির কথা বল্লে, যে সব ভদ্রমহোদয়রা, হাড়ে হাড়ে করে তেড়ে  আসতেন  তাদের অন্ততঃ মুখে ঝামা ঘাষা হয়েছে।  

আরো একটা লাভ হতে পারে সামাজিক ভাবে,
যদি সেসব কমরেডরা যারা এখনো সাম্যবাদী আন্দোলনে গবেষনার মনন নিয়ে কাজ করছেন,অন্ততঃ তারা গবেষনাকে বিপথগামী হতে দেবেন না। অন্ততঃ সাধারনভাবে সাম্যবাদীদের না হোক, শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের বুঝাতে পারবেন
------ সত্তোর দশকের শেষভাগ থেকে, কমরেড বি টি আর যে বলে আসছিলেন, দেশে এই 'রক্তের' প্রশ্নেই একটা প্রতিবিপ্লব হতে যাচ্ছে, তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অপরাধই দেশকে আজ চরম  বিপদের মধ্যে ঠেলেছে। 
-----  তারা যদি আরো একটু গভী্রে  যান এটাও দেখতে পাবেন, এই যে দেখেও না দেখার ভান করাটা, একপ্রান্তে স্তালিনের শেষ রাজনৈতিক-ভাবাত্মক সতর্কবার্তাকে আমল দিতে দেয় নাই । এমনো হতে পারে, স্তালিনের সেই ঐতিহাসিক কথনকে পেছনে রাখার মধ্যে, বিশ্বে স্তালিন বিরোধী আমেরিকান প্রচার, ভারতের সাম্যবাদীদের বাবু অংশকে প্রভাবিত করেছিলো।
------ সেই প্রভাবটাই কোলকাতার বাবু অংশকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিলো। কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্ত এবং জ্যোতি বসু সামনে থাকলেও, মুলতঃ নীতির প্রশ্নে বাংলাকে উনারাই প্রভাবিত করতেন। উনাদের নেতাই  কম্পিউটার বা অন্ধপ্রযুক্তিকরন বিরোধী আন্দোলনকে, বনিক সভাতে 'ননসেন্স' বলে সম্বোধন করতে পেরেছেন।  

প্রশ্নগুলিকে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া বলে মনে হওয়ার কারন থাকে না, যখন স্মরনে রাখা হয় - আপনি কিংবা আমি, গুরুত্বপূর্ন বিষয়গত সামাজিক- রাজনৈতিক-ভাবাদর্শগত অবস্থান নিয়ে থাকি , সেটা শেষ পর্য্যন্ত , বিশ্ববোধ সংক্রান্ত  সাধারন দৃষ্টিকোন থেকে উদ্ধুত এবং বিষয়গত সিদ্ধান্তগুলি শেষ পর্য্যন্ত, সেই সাধারন বোধ সত্বার সাথেই মালা গাথতে শুরু করে।


একই চিন্তার সংঘাতে, দুটি ধারা কীভাবে পৃথক হয়ে গেলো, সেটা বোঝা যাবে, যখন পশ্চিম বাংলা নামক রাজ্যের কমিউনিষ্ট পার্টীকেই নয়, জনগনকেও, ১৯৭৯ সালে, মোরারজী সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কার্য্যতঃ বিদ্রোহ হতে দেওয়া হয়েছিলও।

সে সময়ে জীবন রায়ের নেতৃ্ত্বাধীন দুর্গাপুর ইস্পাত এবং শুনেছি, রেল আাঞ্চলিক কমিটি ছাড়া, সারা বাংলা কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধীতা করেছিলেন।
-----  পরে অবশ্য পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত রাজ্য মেনে নেয়। কিন্তু ভাবাদর্শের দিক থেকে 'কোন কিছু মানা কিংবা না মানা' যতটুকু গুরুত্বপূর্ন  তার থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ন, 'কোন ভাব থেকে মানা হচ্ছে" এবং 'কোন ভাব থকে মানা হচ্ছে না'। 
-----  এখানে যে 'মানা হোল না' প্রথমে এবং পরে 'মানা হোল' - দুটো মিলে যদি ব্যপক গন শিক্ষায় সে কথাটা না গিয়ে থাকে যে --- সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি শ্রেফ্ জনতা দলে বিজেপি অংশের দাংগা লাগাণোর সাথে যুক্ত ছিলো না, তবে কংগ্রেসে গিয়ে মেনে আসায়, ইতিমধ্যে ক্ষতি যা ক্ষতি হয়েছে, সেটা চক্রাকারে কমরেডদের ভাবকে আবর্তিত করতে থাকবে।
আসলে বিষয়টা যে স্তালিনের সেই শেষ সতর্কবানীর সাথে সরাসরি যুক্ত এবং ইতিহাসের কোন এক বিশেষ সময়ে, যখন সাম্যবাদীদের সাম্প্রদায়ীক লোক জনদের সাথে হাত মিলাতেও
----- তখন কীভাবে অন্য একটি ঐতিহাসিক বিপর্য্যয়ের মুখে, কত দ্রুততার সাথে দলকে সাম্প্রদায়ীকদের কাছ থেকে পৃথক করে নিয়ে, কোন সাম্যবাদী দল নিজের স্বাধীন উদ্যোগকে বিকশিত করার সুযোগ করে নেবেন।
----- সেখানে 'কোন কোন রাজ্যে ছিটফুট্ সরকার চালানোটাকেই যদি প্রধান বলে মানা হয়, তখন স্তালিনের পরামর্শ তো বটেই পুরো মার্ক্স-লেনিনবাদটাই মাথায় উঠে যেতে বাধ্য। 
আরো স্মরন রাখতে হয়, ভাব যখন প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি, সেটাকে আজকের ইচ্ছা অনুযায়ী একরকম, আবার কালকে আর এক রকম এমনিতে ভাংগা গড়া যায় না। ঝগড়া করা হোল সারা দেশের মানুষকে নিয়ে, আর সংশোধনের সময় ঘরে-ঘরে, সেটাও কদ্যাপী হয়েছে। 

----- তাই, দেশ এবং মানুষকে যদি বাঁচাতে হয়, তবে বিষয়কে এলেবেলে দেখাটাও হবে আরো বিপদজনক।প্রথমতঃ সাম্যবাদী দায়দায়ীত্বের কথা সর্বাগ্রে মাথা নিচু করে মেনে নেওয়া প্রয়োজন হবে। কারন একটাই। 
---- যদি বিশ্বাস রেখে চলেন যে, 'রক্ত সম্পর্কীয় ' যেকোন বিবাদে অপরাধীরা, মূলতঃ আধিবিদ্যা এবং আদিভৌতিকবাদকে, রাজনৈ্তিক ভিত্তি হিসেবে কাজে লাগানো হয়, তবে এটাও মানতে হবে
----- এর বিপরীত একটাই। 'ভৌতিকবাদ' এবং অনুমান ভিত্তিকতার বিপরীতে 'বিজ্ঞান' এবং 'যুক্তিবাদ' সাম্যবাদীদের হাতে ছাড়া অন্য কারুর হাতেই থাকার কথা নয়। 
সেখানে ঠিক সোভিয়েত ভেংগে  যাওয়ার কারনে যেমন যুক্তিবাদী সাহিত্য ও  সংগীত সহ বিজ্ঞানের মানবিক রুপান্তর সংক্রান্ত সব উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনেই, 
----- আজকের বিশ্বে চলমান  মানবিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈ্তিক সংকটে মানুষ দিশেহারা, তেমনি ভারতের সাম্যবাদী আন্দোলনে বিকল্প ভাবশ্রোত অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে, 
------ অন্যান্য মাঝামাঝি এবং দক্ষিন কিন্তু কংরেসের মতো মধ্যমুখীন দলগুলি ক্রমেই ভাবের দিক থেকে সর্বহারা হয়ে যাচ্ছে।

এই সুত্রেই তো বুঝে নিতে হোত, দল কিংবা কোন রাজ্য কমিটি সরকার সর্বস্য হতে গিয়ে, মার্ক্সবাদী ভাব তো বটেই সম্পর্কগুলিকেও, সরকারীয়ানার মানদন্ডে বিচার করছে,
------ সাম্যবাদী সমর্থিত শ্রমিক আন্দোলন জাহান্নামের সেই পর্য্যায়ে পৌছেছিলো, যেখানে, সে এখন সংবিধান বদল করে, আন্তর্জাতীকতাকে জেলাস্তরে ফ্রেঞ্চাইজ দেয় এবং প্রকাশ্যে বলতে শুরু করে ---সেই ট্রেড ইউনিয়ন নাকি, একটি বিশেষ দলের 
---- তখন সেখান থেকে সর্বাত্মক শ্রমিক একতার কমরেড বিটি আর এর নীতিকে যে এক পা' এগিয়ে নিয়ে যাওয়া  সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে চায় না নেতারা
এই সুত্রে অন্য গুরুতর প্রশ্নটি সামনে আসবে, 
---- সব সময় উল্টো যাওয়ার প্রবৃত্তিটা কোথা থেকে আসবে। ট্রেড ইউইয়নে শরীর সর্বস্বতাকে, চিন্তন বা মনের ক্ষুদার নিচে যায়গা দেওয়া, দেশের সর্বশ্রেষ্ট ভাবাদর্শগত  এবং আন্তর্জাতীক ব্যক্তিত্বতো বটেই স্তালিনের শেষ বার্তাকে ভাবাদর্শগত গ্রহন যখন অস্বিকার করা হয়
-----সেখানেও তো একটা ভাবগত অবস্থান ভেতরে ভেতরে যে কাজ করে সেটাও বোঝার দরকার । এখানেও কমরেড বি টি রনদিভের সেই যুবধের কাছে কথা - শতভাগ বিদ্রোহী সত্বা চাই, অশ্রেনী নেতাদের মেহনতিদের প্রতি  আননুগত্য শতভাগ চাই।  অন্যথায়,
----- ভারতের মতো বর্নাচ্ছাদিত ব্রাহ্মন্যবাদ লোমকুপে লোমকুপে বিপ্লবী সত্বাকে প্রভাবিত করবে, শ্রেনীর নামে, ব্রাহ্মন্যবাদ শ্রেনী আন্দোলনকেও প্রভাবিত করবে।
দলের সর্বোচ্চ পদে আসিন ছিলেন, এমন একজন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত অভিবাবক যখন তার লেখা পুস্তকের কভার শিরোনামায় লিখে দেন 'নাৎসি জার্মানীর জন্ম এবং মৃত্যু', নিশ্চিতভাবে নাৎসিবাদের জীবন কথাকে খুবই ছোট করে দেখায় এবং ভারতে ' নাৎসিবাদের' উদয়ের ব্যখ্যা পাওয়া যায় না। এসব স্বতস্ফুর্ততাও, নিশ্চিতভাবে
------ একাধারে , ভারতে ক্রমবর্ধময়ান নাৎসিবাদের প্রকোপ সম্পর্কে  কম বি টি আর এর সতর্কবানী অস্বিকার করা এবং  স্তালিনের সেই সতর্কবানীর প্রতি আন্দেখা করা একসাথে ধরা পরে। যে কেউ বইটি মন দিয়ে পড়বেন মনে হবে হিটলারের পরাজয়ের ভিত্তিটি কিছু কিছু 'ভগবানের' সদিচ্ছার কারনেই হয়েছে। 'রক্তবাদের'  বিপরীতে বিশ্বজোরা মেহনতির জাগরনের বিষয়টির উপস্থিতি খুজে বেড়াচ্ছি,
------ পেয়ে গেলে জানাবো। এই স্বতস্ফুর্ততার বিপদ সেখানেও নয়, শতভাগ শ্রমিক আনুগত্ব যদি না থাকে আনুগত্বের অন্য অংশ ভারতে বর্ণবাদে ঢেলে পরবেই - বিচার বিবেচনা, লেখায় এবং ভাষনে।
------- আবার এই নাজিবাদের ধ্বংস তত্ব আবার তখনই আসে যখন মেনে চলা হয়, যেন নাৎসিবাদের উৎস এবং  ধ্বংস জার্মানীতেই ছিলো। পুরো ইউরোপের শিল্প ও যুদ্ধ পুজির কেন্দ্রিকতা একযোগে যদি হিটলারকে সমর্থন না করতো, তবে একের পর এক ইউরোপের দেশগুলি হিটলারের আক্রমনের মুখে নখদন্তহীন হয়ে পরতো না। 
------    বস্তুত অর্থে স্তালিন পুরো রননীতিটাই নির্মান করেছিলেন, সেই লেনিনিয় তত্ব নিয়ে, ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী পুজি একযোগে, সোভিয়েত এবং শ্রমিক শ্রেনীকে তার প্রাথমিক জাগরনের কালেই শেষ করা হবে।

তাই যুদ্ধের পর স্তালিন বিশ্বকে বোঝালেন, -- HITLER HAS GONE, BUT NOT HITLARISM. তিনি আরো এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর কালে হিটলারের উত্তরাধিকার হিসেবে আমেরিকাকে
চিহ্নিত করলেন। বোহ হয়, এই চিহ্নিতকরনের কারনেই কমরেড স্তালিনকে অকালে মরতে হোল। (ক্রমশ)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours