ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ  বর্তমান  পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  আউসগ্রাম  ২ নং  ব্লকের  সোঁয়াই  গ্রাম!অতীতের  ঐতিহ্যশালী  এই  গ্রামের  অতীত  ইতিহাসও  বর্ণময়! এই  গ্রামটি  ছিল  সংস্কৃত  চর্চার  অন্যতম  কেন্দ্র! গ্রামে  একদা  বাইশটি  সংস্কৃত  টোল  ছিল! তাই  গ্রামটিকে  বলা  হতো ' বাইশ খ্যাপার  গাঁ '!
          ভারতের  প্রথম  ' বিদ্যালঙ্কার ' উপাধী  পাওয়া  মহিলা  হটী  বিদ্যালঙ্কারের  বাড়ী  এই  সোঁয়াই  গ্রামেই!
             প্রাচীন  গ্রামে  দেবদেবীর  পুজা পাঠ  হওয়াটা  খুবই  স্বাভাবিক! গ্রাম্য  দেবতা  সোমেশ্বর  শিবের  নামানুসারে  গ্রামের  নাম ' সোঁয়ই'! এই  গ্রামের  'মুখার্জী বাড়ীর  দুর্গাপুজো' সম্ভবতঃ জেলার  প্রাচীন  পুজোগুলির  অন্যতম! পুজার  রীতিও  ভিন্ন!
         
   গ্রামে  প্রায়  সব  দেব  দেবীর  মন্দির  আছে! গ্রামে  প্রতিবাড়ীতেই  ঐশ্বর্য্যের  দেবী  মা  লক্ষ্মীর  আরাধনা  হলেও কোজাগরী  পূর্নিমায়  গ্রামের  সিংহ (কায়স্হ) ও চ্যাটার্জী পরিবারে  ধুমধাম  সহকারে মা লক্ষ্মীর  পূজা  হয়! দুটি  পরিবারের  না লক্ষ্মীর  পাকা  মন্দির  আছে!
সিংহ  পরিবারের  পুজোটি  আনুমানিক  শতবর্ষ প্রাচীন! লক্ষ্মীপুজোর  রাত্রে  থাকে  নিরামিষ  পংতিভোজের  ব্যবস্হা! এই  লক্ষ্মীপুজোয়  একটি  বিশেষ  আকর্ষন  থাকে ' নারকেল  খেলা ' অর্থাৎ  লারকেল  লটারী! প্রতিমা  এখানে  তিন  পুতুলের  মধ্যে  মা  লক্ষ্মী  দন্ডায়মানা  দুই  পাশে  জয়া  ও বিজয়া!
            গ্রামের  প্রাচীন  লক্ষ্মীপুজোটি  চ্যাটার্জী  পরিবারের!  পুজোটি  প্রায়  দেড়'শ বছরের প্রাচীন! এই  পরিবারের  সরোজাক্ষ  চ্যাটার্জী, বর্তমান  উত্তর  ২৪ পরগনার  নবাবগঞ্জ ( ইছাপুর) এ থাকতেন! প্রত্যহ সকালে  গঙ্গা  স্নান  করে  তিনি  পুজা পাঠ  করতেন! একদিন  তিনি  স্নান  করার  সময়  একটি  লক্ষ্মীমুর্তি  পান! সেই  মূর্তিটি  গঙ্গার  ঘাটে  রেখে  আবার  ডুব  দিয়ে  মূর্তিটি  নিতে  গিয়ে  এক  অলৌকিক  ঘটনা  প্রত্যক্ষ  করেন! সেই  লক্ষ্মী  মূর্তির  স্হলে  এক  সন্ন্যসী  দাঁড়িয়ে  আছেন এবং  ত আদেশ করলেন  "বাড়ীতে  লক্ষ্মীর  পুজা  কর "
তিনি  যে  লক্ষ্মী  প্রতিমা  গঙ্গায় পেয়েছিলেন  সেটি  ছিল  তিন  পুতুলের! মধ্যে  মা  লক্ষ্মী  দুই পাশে  জয়া  ও বিজয়া  নামে  দুই  কিন্নরী!এই  পরিবারের  দেবী  প্রতিমার  আর  একটি  বৈশিষ্ঠ  দেবী  এখানে  ত্রিনয়না! ত্রিনয়না  দেবী  দুর্বলতা ও মা  কালী ! কিন্তু  চ্যাটার্জী বাড়ীর  মা  লক্ষ্মী  ত্রিনয়না রূপে  পুজিতা  হ'ন!
        একটা  সময়  চ্যাটার্জী  পরিবারের  আর্থিক  অবস্হা  খুব  ভাল  ছিল! লক্ষ্মীপুজোর  ঝাঁকজমকও  ছিল  চোখে  পড়ার  মতো! বর্তমানে  আর্থিক  করানে  সেই  জাঁকজমক  অনেকটা  ম্লান! কিন্তু  ঐতিহ্য মেনেই  আজও  কোজাগরী  পুর্ণিমায়  ধন, সম্পদ, ঐশ্বর্যের  দেবী  মা  লক্ষ্মীর  আরাধনা  করা  হয়! লক্ষ্মীপুজার  রাতে খাকে  নিরামিষ  পংতিভোজের  আয়োজন!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours