অপর্ণা ভট্টাচার্য লেখিকা ও সমাজকর্মী, আসানসোল:
কি অবিশ্বাস্য, মাত্র ষোলো বছর বয়সে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়! যায় তো। পনের দিন ধরে সেই সুদূর ইংল্যান্ডের প্লিমাথ থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পথ সৌর বিদ্যুৎ বাহিত পাল তোলা নৌকায় পাড়ি দিল এই দস্যি মেয়ে। শুধু সমগ্র বিশ্বের মানুষকে সজোরে ধাক্কা দেবার জন্য। এই নৌকায় ছিটেফোঁটা কার্বন ও খরচ হয়নি।
এই সফরে যে বার্তা গ্রেটা দিতে চাইছে তা বিশ্ববাসীর কতখানি হৃদয়ঙ্গম হবে তা অবশ্য জানা নেই। গ্রেটা তার এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছে পড়ুয়াদের। তা বেশ। আমরা বড়রা যা পারিনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তা করার চেষ্টা নিয়েছে।
গ্রেটারা রাজনীতি বোঝেনা, বয়স্কদের মনের গতিবিধিও বুঝতে চায় না। না বোঝাই ভাল, সেখানে যে অনেক বিষ জমে গেছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা গ্রেটারা এমনি নিস্পাপ বিষ মুক্ত থাকুক।
গ্রেটা চেয়েছে তার এবং তার প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হোক। ছোট্ট চাওয়া। এটুকু চাহিদা পূরণের জন্য মেয়েটা আগুপিছু না ভেবে এমন মরণপণ অভিযানে নেমে পরল? এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।
ওই ছোট্ট মেয়েটি যা ভেবেছে , যে ভাবে ভেবেছে তা বড়রা কোনদিন ভাবতে পারেনি।
আসলে বড়রা সুখ পেতে পেতে সুখী থাকায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই জেট গতির গতির যুগে গ্রেটার মত পনের দিন ধরে ইংল্যান্ড থেকে আ্যমেরিকায় গেলে সভ্যতাই যে স্তব্ধ হয়ে যাবে। এটাও কিন্তু খুব বড় সত্য। কিন্তু গ্রেটার ভাবনাও তো অমূলক নয়। গ্রেটারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত হবেই। কি ভবিষ্যৎ দিচ্ছি ওদের? কার্বনের প্রভাবে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে ধ্ববংসের দিকে। আমরা দিব্য সুখের স্বর্গে বাস করে একটা ছিড়কুটে ক্ষয়া পৃথিবী গ্রেটাদের জন্য রেখে যাব। একবারো কি ভেবেছি ওরা কি ভাবে বাঁচবে?
এই যে গ্রেটা প্লেনে না চেপে কার্বন না পুড়িয়ে এত বড় একটা ঝুঁকি নিল সেটা কিন্তু শুধুমাত্র বড়দের শিক্ষা দেবার জন্য।
গ্রেটা অনেক কিছু বোঝে না, কিন্তু যারা বোঝেন, দেখা যাক তারা কতটুকু তার চেষ্টাকে সম্মান দেন। সত্যি গ্রেটা তুসি গ্রেট হো। তোমায় অসংখ্য কুর্ণিশ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours