ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য ফিচার রাইটার দুর্গাপুরঃ   বর্তমান  পূর্ব  বর্ধমান  জেলার আউসগ্রাম  ২ নং  ব্লকের  ছোট্ট  একটি  গ্রাম  ' গোপালমাঠ ' ! ভট্টাচার্য্য পদবীধারী  কয়েক ঘর ব্রাক্ষ্মন, বাউরী, বাগদী, কৈবর্ত, ডোম  আর  মুচি  সম্প্রদায়ের  বাস! মানকরের  সাথে  সংপৃক্ত গ্রামটি বহু প্রাচীন ! খুব  সম্ভবতঃ বর্ধমানের  মহারাজ  পরিবারের  কুলগুরু  হিতলাল  মিশ্রের কুলদেবতা শ্রীশ্রীগোপালজিউ- এর নামে বর্ধমানের  মহারাজা  গোপালের  নামে ভুমি দান  করেন  তাই স্হানটির  নাম 'গোপালমাঠ'! পরে  এখানে  বসতি  গড়ে  ওঠে!
               এই  গ্রামের  ভট্টাচার্য্য  পরিবারের  নীলকন্ঠ  ভট্টাচার্য্য  প্রায়  দেড়'শ  বছর  পূর্বে  লক্ষ্মীদেবীর  পুজার  পত্তন  করেন! মা  লক্ষ্মীর  পুজার  পত্তন  সম্পর্কে  একটি  কিংবদন্তী  আছে! এই  পরিবরারের জ্যেষ্ঠ  গৃহবধু (নীলকন্ঠের  পুত্রবধূ)ঐশ্বর্য্যের  দেবী  মা  লক্ষ্মীর  স্বপ্নাদেশ  পান! তিনি  স্বপ্নে  দেখেন, মা  লক্ষ্মী  তাঁকে  নির্দ্দেশ  দিলেন  গ্রামের  পূর্ব প্রান্তে  তাঁদের  ধান  ক্ষেতের   ঈশান  কোনে  তিনি  বিরাজ  করছেন  তাঁকে  ঘরে  এনে  যেন  প্রতিষ্ঠা  করা  হয়!
               
 এরপরই  তাঁর  ঘুম  ভেঙে  যায়, তখন  রাত্রির  শেষ প্রহর! তিনি  তাঁর  শ্বশুর  মশাই -এর  ঘুম  ভাঙ্গিয়ে ,মা  লক্ষ্মীর  স্বপ্নাদেশের  কথা  বললে  নীলকন্ঠ  ভট্টাচার্য্য  সেই  ধানক্ষেতের  ঈশান কোনে  ধানের  মাঝে  এক  শিষ  চাল  ফলেছে  দেখে  হতবাক  হয়ে  যান! তিনি সেই  চালের  শিষটি  এনে  ঠাকুর  ঘরে  রাখেন! সেই  বছরই  শুরু  করেন  মা  লক্ষ্মীর  আরাধনা! এরপরই ' ভট্টাচার্য্য  পরিবারের ' আর্থিক  সচ্ছলতা  বাড়তে  থাকে!মা লক্ষ্মীর  পুজোর  জৌলুষ  ও আড়ম়্বরও  বাড়তে  থাকে!
                বর্তমানে  ভট্টাচার্য্য  পরিবারের  বহু  সদস্য  দেশের  বিভিন্ন প্রান্তে  স্হায়ীভাবে  বসবাস  করছেন! কয়েক জন  বংশধর  গোপালমাঠ  গ্রাম  ত্যাগ  করে  স্হায়ীভাবে  মানকরে  বসবাস  করছেন! মা  লক্ষ্মীর  মন্দির  নির্মিত  হয়েছে  মানকরে!
                  এই  পরিবারের  বর্তমান প্রবীন সদস্য সনৎ  ভট্টাচার্য্য মা  লক্ষ্মীর  পুজার  বিধি  সম্পর্কে জানালেন,তাঁদের  পূর্ব পুরুষ  নীলকন্ঠ  ভট্টাচার্য্য  দুর্গাষ্টমীর  দিন  তাঁর  ধানক্ষেতে  মা  লক্ষ্মীকে  চাল রূপে  পান! তাই  দুর্গাষ্টমীর  দিন  না লক্ষ্মীর  প্রতিমা  নির্মান  শুরু  হয়  কাঠামোয়  মাটি  দিয়ে! মায়ের  প্রতিমা  তিন পুতুলের, মধ্যে  মা  লক্ষ্মী  তাঁর  বাহন  পেঁচার  উপর  দন্ডায়মানা  দুই  পাশে  জয়া  ও বিজয়া! যারা  পুজোয়  অংশ  গ্রহন  করবে, অর্থাৎ  ঘট  বারি  আনবে    বা  পুজার আয়োজন  করবে  প্রত্যেককে  গঙ্গাস্নান  করতে  হবে  পুজোর  আগে!
                    কোজাগরী  পুর্নিমার  সন্ধ্যায়  মায়ের  পুজার  জন্য দশ  সের  এক  পোয়া  চিঁড়া,পাঁচ  সের  চিনি, পাঁচটি  নারকেল, পাঁচ সের  দুধ  দিয়ে  ভোগ  দেওয়া  হয়! রাত্রে পঞ্চব্যঞ্জন  সহ  খিঁচুড়ি  ও পায়েস  ভোগ  দেওয়া  হয়! পুর্বে  পঞ্চগ্রামী  ব্রাক্ষ্মন  ভোজনের  ব্যবস্হা  ছিল! কিন্তু  বর্তমানে  আর্থিক  কারনে  পুজার  রাত্রে  তিন চার'শ  জনের  পংতিভোজের  ব্যবস্হা  থাকে!
               পুজোর  পরদিন  বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে   জৌলুষপুর্ন বিসর্জন  আজও  মানকরবাসীর  কাছে  বিশেষ  আকর্ষন! ভট্টাচার্য্য বাড়ীর  না লক্ষ্মীর  পুজো  শারদ উৎসবের পর  পুনঃ  উৎসবের  মাত্রা  পায়!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours