নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

একজন ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কাছে সবসময়ই সন্তান বা শিশু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন।
শিশুদের হাসিতে চোখ রেখে জগতের বহু যন্ত্রণা ভুলতে পারি আমরা । ওরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র। যে ঘরে শিশু আছে, সে ঘরে যেন স্বর্গ।
আমি নেই কোনখানে আমি নেই ...
ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় ......

আজ অ্যাডিলেডের রোদ ভীষণ ঝাঁঝালো , এসিডের মতো । প্রর্যাপ্ত আলো আমি ধারণ করতে পারি না , মাথা ধরে , চোখ গড়িয়ে জল ঝরে! 
স্যুটার পার্কের গাছের মাথায় , সূর্যের আলো যেই না দেখতে গেলাম ,জ্বলে উঠল আগুন চোখের তারায় । ওই যে চোখ আতঙ্কিত হলো , আর খোলে না! 
এখানে সবাই বাহারী টুপি পরে , সানগ্লাস পরে আলট্রাভায়লেট রশ্মি থেকে বাঁচতে। তাই টুপি চিনে কেনার মধ্যেও মুন্সিয়ানা জরুরী । শকুন তাড়িত সূর্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য। 
এখানে আসার পর জানতে পারলাম , আমি এক বিদঘুটে বিমারীতে ভুগছি । আমার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব বেশী মাত্রায় লক্ষনীয় । ছয় মাসের ঔষধ সেবন প্রকল্পে যোগ দিয়েছি । 
সূর্য  প্রত্যাখ্যান করেছিলাম বলে সূর্য  থেকে অভিসপ্ত  আমি । আজকাল টুপি বাদে দিব্বি সুর্যের রেণু মেখে  ঘরে ফিরি হিসেব করে দু...ই ঘন্টা।
সেদিন পার্কে আমার হৃদপিণ্ডের ধুকপুক দুটো কে নিয়ে খেলছিলাম , কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোঁ । খেলতে খেলতে একসময় আমি বিশাল দেহী একটা গাছের পেছনে লুকিয়েছি। 
যখন আমার ছোট মেয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেখলো আমি তার সামনে নেই , বার বার জিজ্ঞেস করছিল .. আপি মা কোথায় ? .. আপি মা কোথায় ? আমি শুনছিলাম .. কিন্তু ইচ্ছে করে সামনে আসছিলাম না। 
কেন আসছিলাম না সেটাও ঠিক জানি না , জাস্ট ওর উদগ্রীবতার মজা নিচ্ছিলাম । একসময় দেখি আমার দুটো মেয়ে আমার ঘাসের উপরে রাখা ব্যাগ স্কার্ফ সানগ্লাস ছুঁয়ে কাঁদছে ... মা প্লিজ চলে আসো , আমরা ভয় পাচ্ছি , তুমি কোথায় মা , তোমার সব স্টাফ এখানে ... এক সময় রুহা বলছে আপি মা কে মনে হয় ব্যাড গাই ধরে নিয়ে গেছে । কিন্তু আমরা পার্কেই থাকি মার স্টাফের পাশে । মা যদি এসে দেখে আমরা ওকে না বলে চলে গেছি মা খুব স্যাড হবে। 
আমি দূর থেকে দেখছিলাম । তাদের আকুতি , মা হারিয়ে গেছে ... অসহায় দুটো শিশুছানা  পার্কের মানুষ গুলোর মুখ দেখছে আর তাকিয়ে থাকছে ,কিছুই বলছে না । একজন স্কার্ফ আর একজন ব্যাগ জড়িয়ে কাঁদছে । মা আমরা এলোন ভয় পাচ্ছি  ... মা ভয় পাচ্ছি মা । তুমি চলে এসো মা । আমার চোখে জল এলো ... আহা রে , বুকের ধন , আহা রে মানিক ! ইস এমন কত শিশুই তো মা হারা , তাদের হৃদপিণ্ড মোচড় দিয়ে না জানি কত কান্না গুমড়ে কাঁদে । ওদের জড়িয়ে আমিও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম । ওরা যেন পাখির ছানার মতো আমার ডানার ভেতরে ঢুকে যেতে চাইছে । ওদের গাল ভেজা । আল্লাহ কে বললাম ইয়া আল্লাহ ওদের জন্য আমাকে আরো কিছুটা দিন বাঁচিয়ে রেখো রঙের দুনিয়ায়। 
মা ছাড়া সন্তান বড্ড অসহায় । ওদের আর একটু সামলে নেবার সময় দিও।
মা বিহীন শিশুরা বেড়ে ওঠে স্বাভাবিক ভাবে .. কিন্তু কোথায় যেন একটা শূন্যতা থাকে , মনের মাঝে একটা তো বড় অভাব নিয়ে বড় হয় ,যা সারাজীবন একটা মানুষকে কখনো কখনো যেমন আত্মবিশ্বাসের কমতি নিয়ে বাঁচতে হয় , কেউ আবার পথভ্রষ্ট হয়ে .. ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। 
মায়ের তুলনা মা!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours