প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
বন্দিনিবাসের জ্যোৎস্নায় তখন শ্বাস। সোনা ঝরা দিনের অপেক্ষা৷ অবিনশ্বর দ্রাঘিমা ছুঁয়ে আছে স্মৃতিমন্থন। তক্ষশিলা জুড়ে আছে অনন্তপুণ্য। জখম রূপকথার বুকে কথারা গল্প শোনায়...
আঠারো বিদ্যা জুড়ে আছে উত্তরাখণ্ডের চর্চাক্ষেত্র। বন, উপবন, সরোবর জুড়েই তো আবাসভূমি। পৃথিবী যে সবটুকুই সাজিয়ে রেখেছে নিজের মতো করে। চন্দ্রসরবরের তাই নিয়ম মেপেই ভোর হলো৷ শুভ্র বস্ত্র, উত্তরীয় পরে নিলেন জীবক৷ শয্যার পাশে একা নিবু নিবু শিখায় দাঁড়িয়ে আছে প্রমাণের অপেক্ষায় প্রদীপ। আজ তো পরীক্ষা জীবকের৷ এই তো! এই কয়েকদিন আগেই তো ষোল বছরের কিশোর এসেছিলেন চর্চাক্ষেত্রে, আজ হবেন "ভিষগরত্ন"। চোখ বলছে এইতো, কালের বুকে আঁচড় দিয়ে পাণিনির মতো তাঁকেও স্থান করে নিতে হবে, অনায়াসে। তাঁর তো পালক পিতা কুমার অভয় ছাড়া আর কেউ নেই। পরিচয়ের কি বা এসে যায়!! অভয় তো পিতার মতোই শিক্ষা দিলেন; শিক্ষা দিচ্ছেন, "উপার্জনক্ষম হও!! " শিক্ষা তো কেবল তোমার আভরণ নয়, তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
পালক পিতা তো রাজা বিম্বিসারের জন্য সাতটি সাদা ঘোড়া টানা এক শ্বেতবর্ণ রথ তৈরি করেছেন৷ আর! উজ্জয়িনীর প্রদ্যোতের মতো ষোলটি কালো ঘোড়ায় টানা রথ, ও তো সোনালী ঝলক৷ উদয়নের জন্য দুর্লভ কারুকার্যময় ষোল চাকার রথ, অসামান্য। কোশলরাজ প্রসেনজিৎ - এর ত্রিতল রথ, কুশলকর্মী দিবারাত্র পরিশ্রমের ফসল৷ তাই তো জীবকের উদ্দেশ্যে বললেন, "বিদ্যা - ই অস্ত্র "।জীবক অসফল নয়। পঞ্চম বেদে সে যে ভিত্তি করে নিজেকে গড়েছে। আয়ত্ত করেছেন, সৌর সংহিতা, সোম সংহিতা, অশ্বিনী সংহিতা।
শীত শেষ হয়ে গেছে। আহা! বসন্তের মূলে তো শিশির চুম্বন আছেই। দিকবলয়ে সোনা বিন্দু, জীবক গুরুর কাছে এলেন। এমন বাহুল্যের মুখে জীবক যে নিঃস্ব, তবু মেধা যে শূন্য নয়, ঋদ্ধ জীবক। আচার্য আত্রেয় সাদরে আঁকড়ে নিলেন। এ যেন স্নিগ্ধ সূর্যের আয়ত চক্ষু, হ্যাঁ, আচার্য তার। গুরু বললেন, "জীবক কজ্জলবনের এমন উদ্ভিদ নিয়ে এসো, যা ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগে না। " কিন্তু, অর্জুন, ধাত্রী, হরিতকী কোথাও তো নেই সেই উদ্ভিদ। আচার্যকে জীবক সে কথা জানালে, শিক্ষক খুশি হলেন। এই তো যথার্থ শিক্ষা পেয়েছে সে।
এবার হলো শল্য পরীক্ষা। একটি পা একজন কিশোরের হাঁটু পর্যন্ত ফুলে গেছে। আচার্য বরুণ পা টি কেটে বাদ দিতে চান। না, জীবক চিমটে দিয়ে গোড়ালি থেকে কাঁটা বার করে রক্ত, পুঁজ বার করে ফেললেন। তারপর কর্পূরজলে ধৌত করে রক্তচন্দনের প্রলেপ দিলেন আর শুভ্র বস্ত্রখণ্ডে ক্ষত বেঁধে দিলেন। এবার উষ্ণ দুগ্ধ পান করিয়েই কিশোরটিকে শুয়ে দিলেন৷ এবার চিকিৎসক বরুণ দত্ত অপ্রতিভ৷ আত্রেয় উল্লসিত। এরপর সময়ের ব্যবধানে আচার্য মিহির তাঁকে "ভেষক পঞ্জিকা " দিলেন। ঘন কুজ্ঝটিকায় আবৃত জীবক অভয়ের কোলে ফিরে যায়৷
জীবিত থেকেই জীবক৷ বিম্বিসারের নির্দেশেই প্রসন্ন নামকরণে এই "জীবক "। পরবর্তিকালে তিনিই হয়ে ওঠেন বহু মানুষের জীবনদাতা। মাটির সাথে গভীর যোগ, জীবক কথা।
বন্দিনিবাসের জ্যোৎস্নায় তখন শ্বাস। সোনা ঝরা দিনের অপেক্ষা৷ অবিনশ্বর দ্রাঘিমা ছুঁয়ে আছে স্মৃতিমন্থন। তক্ষশিলা জুড়ে আছে অনন্তপুণ্য। জখম রূপকথার বুকে কথারা গল্প শোনায়...
আঠারো বিদ্যা জুড়ে আছে উত্তরাখণ্ডের চর্চাক্ষেত্র। বন, উপবন, সরোবর জুড়েই তো আবাসভূমি। পৃথিবী যে সবটুকুই সাজিয়ে রেখেছে নিজের মতো করে। চন্দ্রসরবরের তাই নিয়ম মেপেই ভোর হলো৷ শুভ্র বস্ত্র, উত্তরীয় পরে নিলেন জীবক৷ শয্যার পাশে একা নিবু নিবু শিখায় দাঁড়িয়ে আছে প্রমাণের অপেক্ষায় প্রদীপ। আজ তো পরীক্ষা জীবকের৷ এই তো! এই কয়েকদিন আগেই তো ষোল বছরের কিশোর এসেছিলেন চর্চাক্ষেত্রে, আজ হবেন "ভিষগরত্ন"। চোখ বলছে এইতো, কালের বুকে আঁচড় দিয়ে পাণিনির মতো তাঁকেও স্থান করে নিতে হবে, অনায়াসে। তাঁর তো পালক পিতা কুমার অভয় ছাড়া আর কেউ নেই। পরিচয়ের কি বা এসে যায়!! অভয় তো পিতার মতোই শিক্ষা দিলেন; শিক্ষা দিচ্ছেন, "উপার্জনক্ষম হও!! " শিক্ষা তো কেবল তোমার আভরণ নয়, তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
পালক পিতা তো রাজা বিম্বিসারের জন্য সাতটি সাদা ঘোড়া টানা এক শ্বেতবর্ণ রথ তৈরি করেছেন৷ আর! উজ্জয়িনীর প্রদ্যোতের মতো ষোলটি কালো ঘোড়ায় টানা রথ, ও তো সোনালী ঝলক৷ উদয়নের জন্য দুর্লভ কারুকার্যময় ষোল চাকার রথ, অসামান্য। কোশলরাজ প্রসেনজিৎ - এর ত্রিতল রথ, কুশলকর্মী দিবারাত্র পরিশ্রমের ফসল৷ তাই তো জীবকের উদ্দেশ্যে বললেন, "বিদ্যা - ই অস্ত্র "।জীবক অসফল নয়। পঞ্চম বেদে সে যে ভিত্তি করে নিজেকে গড়েছে। আয়ত্ত করেছেন, সৌর সংহিতা, সোম সংহিতা, অশ্বিনী সংহিতা।
শীত শেষ হয়ে গেছে। আহা! বসন্তের মূলে তো শিশির চুম্বন আছেই। দিকবলয়ে সোনা বিন্দু, জীবক গুরুর কাছে এলেন। এমন বাহুল্যের মুখে জীবক যে নিঃস্ব, তবু মেধা যে শূন্য নয়, ঋদ্ধ জীবক। আচার্য আত্রেয় সাদরে আঁকড়ে নিলেন। এ যেন স্নিগ্ধ সূর্যের আয়ত চক্ষু, হ্যাঁ, আচার্য তার। গুরু বললেন, "জীবক কজ্জলবনের এমন উদ্ভিদ নিয়ে এসো, যা ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগে না। " কিন্তু, অর্জুন, ধাত্রী, হরিতকী কোথাও তো নেই সেই উদ্ভিদ। আচার্যকে জীবক সে কথা জানালে, শিক্ষক খুশি হলেন। এই তো যথার্থ শিক্ষা পেয়েছে সে।
এবার হলো শল্য পরীক্ষা। একটি পা একজন কিশোরের হাঁটু পর্যন্ত ফুলে গেছে। আচার্য বরুণ পা টি কেটে বাদ দিতে চান। না, জীবক চিমটে দিয়ে গোড়ালি থেকে কাঁটা বার করে রক্ত, পুঁজ বার করে ফেললেন। তারপর কর্পূরজলে ধৌত করে রক্তচন্দনের প্রলেপ দিলেন আর শুভ্র বস্ত্রখণ্ডে ক্ষত বেঁধে দিলেন। এবার উষ্ণ দুগ্ধ পান করিয়েই কিশোরটিকে শুয়ে দিলেন৷ এবার চিকিৎসক বরুণ দত্ত অপ্রতিভ৷ আত্রেয় উল্লসিত। এরপর সময়ের ব্যবধানে আচার্য মিহির তাঁকে "ভেষক পঞ্জিকা " দিলেন। ঘন কুজ্ঝটিকায় আবৃত জীবক অভয়ের কোলে ফিরে যায়৷
জীবিত থেকেই জীবক৷ বিম্বিসারের নির্দেশেই প্রসন্ন নামকরণে এই "জীবক "। পরবর্তিকালে তিনিই হয়ে ওঠেন বহু মানুষের জীবনদাতা। মাটির সাথে গভীর যোগ, জীবক কথা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours