Desh bivokto
গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

পাকিস্তানি সাম্রাজ্যবাদ এবং শোষণের কাহিনী আর পাকিস্তানের স্বরূপ হয়তোবা স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মানুষ ভুলে গেছে, কিন্তু দেশ ছেড়ে সর্বস্ব খুইয়ে পালিয়ে আসা, জন্মভূমি, জন্মভিটে ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হওয়া হতভাগ্য বাঙালীরা নিশ্চয়ই ভোলে নি!    কেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় এতো অনুপ্রবেশ! সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব ধরলে দেখা যাবে স্বাধীনতার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যতো অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার কয়েক লক্ষ গুণ বেশি পূর্ব বাংলা থেকে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, আজ তাদের অধিকাংশই NRC নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছে। কেন  এই দলে দলে পালিয়ে আসা! এর ইতিহাস জানতে হলে একটু ফিরে যেতে হবে বাহাত্তর বছর আগে;- 1947 থেকে 1971 পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ, আর পাকিস্তানের অধীনে থাকা পূর্ব বাংলার জন্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের থেকেও ভয়ংকর এক সময়। এই সময় কালে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নির্লজ্জ শোষণের সব সীমারেখাই অতিক্রম করে ফেলেছিল! রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্মমভাবে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের সব ধর্মের মানুষকেই। ধর্মের ধোঁয়া দিয়ে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া পূর্ব বাংলা, আজকের বাংলাদেশের চরম বঞ্চনার ইতিহাস থেকে গেছে পাকাপাকি ভাবে।

সেই সময় বর্ধিষ্ণু পূর্ব বাংলার অর্থ সম্পদ কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন নগর ও বন্দর নির্মাণ হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে বিপুল ভাবে ব্যয় হয়েছে তার আশ্চর্য কাহিনী আজ অনেকটাই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে।

পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এত দুরের বাংলায় ভিখিরি পাকিস্তানের শকুনের চোখ কেন পড়েছিল, তা অবশ্যই শুধু ধর্মীয় কারণে নয়! আর সেই গল্পটা নতুন করে জানা আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় বাংলাদেশ বা অবিভক্ত বাংলা ছিল সত্যিই সোনার বাংলা, দেশভাগের পর  পূর্ব বাংলায় যখন প্রায় 622 মিলিয়ন টাকা বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত তখন পশ্চিম পাকিস্তানের 912 মিলিয়ন টাকা বাণিজ্যে ঘাটতি! এই নিয়েই কিন্তু যাত্রা শুরু করে নতুন জন্ম নেওয়া দেশ "পাকিস্তান"। এবার তাহলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কোনো কারণ নেই যে অধুনা বাংলাদেশের মুসলমানদের ভালোবেসে পূর্ব পাকিস্তান তৈরী হয়নি!! অর্থ আর প্রাচুর্যের লোভেই এতদুরের বাংলাদেশে চোখ পড়েছিল জিন্না সাহেবের!

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার আয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অনেক অনেক বেশী, পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার 56% মানুষই পূর্ব বাংলায় বসবাস করলেও পূর্ব বাংলার মানুষের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ পেত মোট আয়ের মাত্র 25% অথচ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রতিনিধিত্ব ছিল পূর্ব বাংলার প্রায় 60% .... কি অসাধারণ মুরগি পোষা ভালোবাসা!!!                  পূর্ব বাংলার সোনালি আঁশই ছিল পাকিস্তানের প্রধান রপ্তানি পণ্য, মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য তৈরী করা হয় ধীরে ধীরে, 1960 তে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় ছিল 32% বেশি, সেটা দশ বছর পর 1970 তে গিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় 61%, কারন বাংলায় অবস্থিত প্রায় সব শিল্প প্রতিষ্ঠানেরই মালিকানা ধীরে ধীরে চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষী শিল্পপতিদের হাতে, ছলে বলে কৌশলে, প্রয়োজনে বল প্রয়োগ, এমনকি খুন জখম করেও বাঙালী ব্যবসায়ীদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সব।

অবিভক্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় 60% এর জোগানদার ছিল পূর্ব পাকিস্তান কিন্তু মাত্র 30% আমদানি ভোগ করত, আর 70% ভাগই পেতো পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ। সমস্ত সরকারি দপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে, বেশির ভাগ সরকারি চাকরি পেতো পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষরা, কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়া কোনো নিয়ম না মেনেই প্রায় সব চাকরিতে অগ্রাধিকার পেতো অবাঙালি উর্দুভাষীরা, তাছাড়া একজন পূর্ব বাংলার পরীক্ষার্থীর পক্ষে  দু হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন, প্রায় অসম্ভব কাজ, এইভাবেই এই দুই পাকিস্তানের অসমতা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙালিরা যখন মুড়ি মড়কির মতো সচিব বা অতিরিক্ত সচিবের পদ পেত তখন বাঙালি আমলাদের দৌড় ছিল বড়জোর সাব-ডিভিশনাল অফিসার পর্যন্ত। এই ধরনের অধস্তনতা চরম বৈষম্য, সহ্য করা কোনো সচেতন বাঙালির পক্ষে সম্ভব ছিল না তাই ক্ষোভ বাড়ছিল নিজের গতিতে।                     

 নবাব বংশীয় অভিজাত  উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা  কখনোই পূর্ববাংলার দুঃখ দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করেনি বরং অত্যাচার চালিয়ে গেছে, না হলে এতো লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের জন্মভূমি পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা ছেড়ে, স্বাধীনতার পরও উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে পালিয়ে আসত না।                                                          খাজা নাজিম উদ্দিন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই 1952 তে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা মিছিলে নির্মমভাবে গুলি বর্ষণ করা হয়, আজ যখন বাংলাদেশে ঘটা করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় অথচ পাশাপাশি পাকিস্তান অটুট প্রেমও দেখতে পাই !  যাইহোক আরও অসংখ্য উদাহরণ আছে বৈষম্যের, ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা কখনও এগিয়ে আসেনি বাঙালিদের সাহায্য করার জন্য, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ 1970 তে নভেম্বরে যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে পূর্ব বাংলায়, স্যাটেলাইটে এই তিব্র বেগে ধেয়ে আসা সাইক্লোনের পূর্বাভাস পেয়েও, প্রথমে মহা বিপদ সংকেত দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয় তৎকালিন পাকিস্তান সরকার ! বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিল এর মোকাবিলা করার জন্য, এই ঘূর্ণিঝড়ে হিন্দু মুসলিম মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় সরকারি হিসেবে প্রায় দু লক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো কখনও ধর্ম বুঝে আঘাত করে না তাই হিন্দু-মুসলিম কেউ রেহাই পায় নি সেই সময় !  সত্যিকারের চিত্রটা ছিল আরো ভয়াবহ, জানা যায় শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পৌছেছিল প্রায় দশ লক্ষে।  উদ্ধারকাজেও তৎকালিন সরকারের চরম গাফিলতি আর উদাসীনতা নির্লজ্জতার সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছিল, যখন পাশ্চাত্যের উদ্ধারকারি দল পৌছে যায় সাহায্য নিয়ে, তখনও কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কোনো উদ্ধারকারী দল এসে পৌছোতে পারেনি  আক্রান্ত প্রজাদের পাশে! আকাশে ফ্রান্সের হেলিকপটার চক্কর মারছে ত্রাণের কাজে অথচ পাকিস্তান আর্মির কোনো হেলকপটারের দেখা পাওয়া যায়নি, এরপর ছিল বিদেশি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে চুড়ান্ত অসহযোগিতা! এরকম জঘন্য নরঘাতকদের হাতে 1971 এ মাত্র তিরিশ লক্ষ সংগ্রামী হিন্দু-মুসলিম মানুষের শহীদ হওয়া তাই নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা।

আরও আছে বঞ্চনার ইতিহাস, পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান দুই অঞ্চলের খাদ্যশস্যের দামেও ছিল সব সময় বিস্তর ফারাক, প্রধান দুটি খাদ্য শস্য ধান এবং গমে পূর্ব আর পশ্চিমের ব্যবধান ছিল লক্ষণীয়, পশ্চিম পাকিস্তানে যখন আঠারো টাকা মন দরে চাল বিক্রি হত তখন পূর্ব পাকিস্তানে তার দাম ছিল প্রায় তিন গুন বেশি 'পঞ্চাশ টাকা' মন। গমের দাম যখন পশ্চিম পাকিস্তানে দশ টাকা মন তখন পূর্ব পাকিস্তানে এর দাম 'পঁয়ত্রিশ টাকা' মন প্রায়  সাড়ে তিন গুণ বেশি! অথচ একই দেশের দুই অংশে এতোটা পার্থক্য থাকার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া যায় না! অর্থাৎ নারকীয় শোষণ চালিয়ে গেছে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে আলাদা করে ছিনিয়ে নেওয়া পূর্ব বাংলার বাঙালীদের ওপর সবদিক দিয়েই।

তার ফলেই তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বদেশ পেয়েছে বাঙালীরা সে হলো 'বাংলাদেশ'।  দেশভাগ, ঘৃণা ও শত্রুতার বাহাত্তর বছর পেরিয়ে গেছে, ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত ও পাকিস্তান এখন দুই প্রতিবেশী দেশ, তবু পারস্পরিক সম্পর্কে তিব্র অবিশ্বাস৷ সত্যি কথা অস্বীকার করা সম্ভব নয়, শুকায়নি এখনো দেশভাগের দগদগে ক্ষত৷

ধর্মের ভিত্তিতে, অবিশ্বাস ও অনৈক্যের যুক্তি দিয়ে জোর করে সৃষ্টি করা হয়েছিল একটি দেশ তার নাম 'পাকিস্তান', তাই এই অবাঞ্ছিত জন্মের জন্য চিরকাল আমাদের যন্ত্রণা, দাঙ্গা এবং মানসিক কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হবে, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক তাই কখনো ঠিক হবে না হয়তো ঠিক হবারই নয়।       

পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিরা যখন নিজেদের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয়, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ শুরুতেই তাদের ‘ভারতের দালাল' আখ্যা দেয়, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হলেও পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সাথে পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের একটা স্বাভাবিক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থেকেই গেছিল দেশ ভাগের পরও, সেটাই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চক্ষুশূল ছিল৷                                     

পশ্চিমে প্রচুর রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ হলেও পূর্বে তেমনটা হয়নি,খুব নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নেই রাতারাতি ভাগাভাগি সম্পন্ন করে ফেলা সম্ভব হয়ে ছিল অথচ মজার ব্যাপার হলো, সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কিন্তু এই বাংলাতেই। ভারতের সংখ্যালঘুদের আইনি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের যে স্বপ্ন জিন্নাহ দেখেছিলেন, তার উত্তরসূরিরা হাঁটেছিল তাঁর ঠিক উলটো পথে,পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ বাঙালিদের কোনো দাবি মানা তো দুরের কথা, বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার করে তাদের আটকাতে চেয়েছে সব সময়, তার ফলশ্রুতিতেই পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ, সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিহত হয় লাখ লাখ বাঙালি, ধর্ষিতা হয়েছিল হাজার হাজার নারী, অবশেষে ভারতের সম্পূর্ণ আন্তরিক  সহায়তায় স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷

জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্বের' ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দেশ পাকিস্তানে এখনও ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলছে, অথচ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন, তখন বুদ্ধিজীবীরা রে রে করে তেড়ে আসছেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদরা শশব্যস্ত হয়ে সমালোচনা শুরু করে দিচ্ছেন, তাই এই আলোচনা এখন আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। হিন্দুত্বের নবজাগরণে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই কারণ, এই দেশটার নাম ভারতবর্ষ, অসভ্য পাকিস্তান নয়! রাজনৈতিক  পালাবদল চলতে থাকবে কিন্তু ভারতবর্ষ জাতি ধর্মের উর্ধে উঠে সম্প্রতির পরম্পরা বজায় রেখে এক  ঐক্যবদ্ধ নতুন ভারতবর্ষ হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে, শুধু আফসোস একটাই যখন সকল ভারতবাসী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি তখন ভিটেমাটি হারা বাঙালীদের জন্য উদযাপনের উপলক্ষ্য তেমন কিছুই নেই তাদের দেশ কোনটা ভারত না বাংলাদেশ তারা জানে না, সঙ্গে ঘাড়ের ওপর নতুন করে চেপে বসা NRC আতঙ্ক  !!  মনে হয় যেন স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর নয়, শত্রুতার বাহাত্তর বছর!! দেশভাগের ইতিহাস আর পালটানো যাবে না, কিন্তু ঘৃণার বা যন্ত্রণার ইতিহাসটা আদৌ মোছা যাবে কোনো দিন!
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours