ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
আজ যে দেবী দুর্গার কথা বলবো, সেই দেবী কোন বনেদী বাড়ীর পুজো নয়! রাঢ় বঙ্গের সর্বপ্রচীন দুর্গাপুজা! বর্তমান পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের গড় চন্ডী খেরোবাড়ী মৌজায় রয়েছে ' মা শ্যামরূপার মন্দির!
এই শ্যামরূপা মায়ের পুজাই রাঢ় বঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো! আনুমানিক এক হাজার বছর পুর্বে এই পুজার পত্তন হয়! দেবী চন্ডী রূপে পুজিতা হ'ন!
জনশ্রুতি, অজয় নদের তীরে ( তখন অজয় নদ ছিল না, ছিল নদী, নাম ছিল কৃষ্না) এক তান্ত্রিক দেবী চন্ডিকার পুজা শুরু করেন! তখন গৌড়ের রাজা লক্ষন সেন! পরম বৈষব কবি জয় দেবের কাছে সংবাদ যায় সেই কাপালিক সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার জন্য একটি বালিকাকে দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার জন্য বলিদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে! জয়দেব তাঁকে নিরস্ত করার জন্য সেখানে উপস্হিত হয়ে 'শ্যাম' অর্থাৎ কৃষ্নরূপে দেবীর দর্শন করান! উদ্ধার করেন সেই বালিকাকে! শ্যামরূপে দেবীর দর্শন হওয়ায় দেবীর নাম হয় ' শ্যামরূপা '!
পরবর্তীকালে ত্রিষষ্ঠি গড়ের অধিপতি ইছাই ঘোষের আরাধ্যা দেবী ছিলেন মা শ্যামরূপা! আর ইছাই ঘোষ লাউসেন ও দেবী শ্যামরূপার আখ্যানকে কেন্দ্র করেই রচিত হয় ' ধর্ম মঙ্গল কাব্য '!
শ্যামরূপার মন্দিরে প্রথমে দুটি স্বর্ন - নির্মিত দেবী দুর্গার মূর্তি ছিল! কথিত আছে, একটি বর্তমানে দেবী কল্যানেশ্বরী মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে!অন্য মূর্তিটি ইছাই ঘোষের মৃত্যুর পর মা শ্যামরূপার প্রতি ক্রুদ্ধা হয়ে ইছাই ঘোষের অভিমানিনী কন্যা নিকটস্হ দীপ সায়রে বিসর্জন করেন! ( মতান্তরে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়)!পরে একটি অষ্ট ধাতুর মূর্তি স্হাপন করলে সেটিও চুরি হয়ে যায়! বর্তমানে একটি পাথরের মূর্তি পুজিতা হ'ন!
পুজো চারদিন নিয়ম মেনে পুজো হয়! অষ্টমী ও নবমীতে অগনিত ভক্ত সমাগম ঘটে! অষ্টমী ও নবমীতে ভুরিভোজের ব্যবস্হা থাকে! অষ্টমীতে লুচি, কুমড়ো, ছোলার ডাল , পায়েস, ও বোঁদে! নবমীতে খিঁচুড়ি, সব্জী,মাংস,চাটনি! অষ্টমীর সন্ধিক্ষনে ও নবমীতে ছাগ বলি হয়!
কিংবদন্তী, অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষনে এই মন্দির থেকে তোপের আওয়াজ হয় এবং সেই তোপধ্বনি শুনেই পার্শ্ববর্তী গ্রামের সন্ধিক্ষনের বলিদান সম্পন্ন হয়! কিন্তু এটি সম্পুর্ন ভ্রান্ত! তবে বহু পূর্বে গড় জঙ্গল যখন দুর্ভেদ্য অরন্য ছিল! বিশাল বিশাল শাল গাছ ছিল, সেই সময় পাকা দালানবাড়ীর সংখ্যা ছিল নগন্য! সেই সময় বাঁকুড়ার বিষ্নুপুরের রাজ বাড়ীতে কামান দাগা হ'তো সেই ধ্বনি শাল বৃক্ষে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি হতো! সেই আওয়াজই শোনা যেত! আজ তা শুধুই অতীত স্মৃতি!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours