সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ দুর্গাপুরঃ
উলটো
অভিমুখে গাড়ি চালিয়ে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করলেও দুর্গাপুরবাসী সুনীত
চক্রবর্তী বিশ্বরেকর্ড করার দৌড়ে এগোতে পারছেন না স্রেফ আর্থিক ও
পরিকাঠামোর অভাবে। যদিও এই দেশে যে কয়জন উলটো দিকে গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন
নজীর স্থাপন করেছেন তার মধ্যে সুনীতবাবু একেবারে প্রথম সারিতে।
দুর্গাপুরের
প্রান্তিকা লাগোয়া ইস্পাত কলোনিতে বসবাস করেন বছর আটচল্লিশের সুনীতবাবু।
১৯৯৮ সালে তিনি দুর্গাপুরে একটি গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু
করেছিলেন। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে সবচাইতে কঠিন কাজটা হল উলটো দিকে গাড়ি
চালানো। আর এই শক্ত কাজটাকেই করায়ত্ব করতে তিনি উঠেপড়ে লাগলেন। চেপে বসল
নেশা অদম্যকে জয় করার। তাই নেহাতই খেয়ালের বসে পরের বছর দুর্গাপুর থেকে
উলটো ভাবে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন বর্ধমানে। যাত্রাপথের সুচনা করেন
তদানীন্তন জেলাশাসক দেবাশিস সেন। এরপর শুরু হল শুধুই চলা। কলকাতা থেকে
বর্ধমান একই পদ্ধতিতে এসেছিলেন। পতাকা নাড়িয়ে সেই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন
তখনকার কলকাতার মেয়র তথা বর্তমানে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত
মুখোপাধ্যায়। লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ২০০৬ সালে
বোলপুর থেকে তার যাত্রার সুচনা করেন। সেবার তাঁর গাড়ি গিয়েছিল বাংলাদেশ
সীমান্ত। একের পর এক সাফল্য আসতে থাকায় এবার সুনীতবাবু ঝাঁপালেন জাতীয়
রেকর্ডের উদ্দেশ্যে। কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে পাকিস্থানের ওয়াঘা সীমান্ত
পর্যন্ত পারি দিয়েছিলেন ২০০৭ সালে। সমকালীন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ
চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন যাত্রার সুচনায়। প্রতি ঘন্টায় গড় ৫৫ কিলোমিটার
বেগে উলটো অভিমুখে গাড়ি চালিয়ে ৬২ ঘন্টায় তিনি অতিক্রম করলেন ২০১২
কিলোমিটার পথ। তাঁর এই অসাধারণ দৃষ্টান্ত লিমকা বুক অব রেকর্ডসে জাতীয়
রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেল। গত ২০১৩ সালের মার্চ মাসেও দুর্গাপুর থেকে
মুম্বাই পাড়ি জমিয়ে ছিলেন প্রতি ঘন্টায় গড় ৭০ কিলোমিটার গতিতে।
এবার
বিশ্বরেকর্ড ভাঙ্গার নেশায় সুনীতবাবু যোগাযোগ করলেন গিনেস বুক অব
রেকর্ডসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তাঁরা জানিয়ে দেন, যৌথ ভাবে আমেরিকার ব্রেন
কিনি ও জেমস রাইট একটি রেকর্ড করেছেন। অন্যদিকে কানাডার রব গিবনে একক
পর্যায়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন। এইসব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন নজীর সৃষ্টি করতে
গেলে দরকার উন্নতমানের মোটরস রেস পার্ক। যা আমাদের দেশে নেই। সুতরাং ভারতে
প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় বিদেশে গিয়ে প্র্যাকটিস করা প্রয়োজন। এরজন্য
দরকার পর্যাপ্ত অর্থ। কিন্তু সেই প্রয়োজনীয় অর্থ সুনীতবাবুর নেই। যদিও একটি
গাডি ডিএসপির পক্ষ থেকে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
ব্যাস ওই পর্যন্ত। অনেক স্পনসরারদের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বরেকর্ড গড়ার
উদ্দেশ্যে তিনি কোথাও কোনও সাহায্য আজ অব্দি পাননি। তাই আক্ষেপ করে
সুনীতবাবু বলেন, ‘সম্ভবত বিশ্বরেকর্ডটা অধরাই থেকে গেল পরিকাঠামো এবং টাকার
অভাবে। এই আক্ষেপটা রয়েই গেল। কোথাও সাহায্য পেলাম না। সুযোগ পেলে হয়ত
বিশ্বজয় করতে পারতাম। এই বিশ্বাসটা আমার এখনও আছে। দেখি অন্যকিছু করা যায়
কিনা।’ একই সঙ্গে তিনি কলকাতা বা দিল্লি থেকে স্থল পথে লন্ডল যাওয়ার
পরিকল্পনা নিয়েও সম্প্রতি ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours