শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

"কাশ্মীরে ‘সামরিক একনায়কতন্ত্র’ চালাচ্ছে মোদি সরকার" গত শুক্রবারে কোলকাতা প্রেসক্লাবে বলেছেন, সিপিআই নেত্রী কবিতা কৃষ্ণান। যিনি আবার সমাজ কর্মিও। 
মুসলিম মৌলবাদীরা কেন কাশ্মীরের জঙ্গিদের সমর্থন করবে তা অনুমান করতে পারি। এমনকি স্বাভাবিক ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে  ধর্মপ্রান মুসলিমরাও মৌন  সমর্থন করতে পারে জিহাদীদের। কিন্তু কেউ সমাজতন্ত্রী হয়েও কেন কাশ্মীরি জঙ্গিদের সমর্থন করবে তা  গবেষনার বিষয়। কেউ দাবী করতে পারেন; একজন কমিউনিস্ট তো নির্যাতিত ব্যাক্তি ও সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার হলে তার পক্ষ নেবেই। নিশ্চয়। তা তো নেবেই তা না হলে তিনি কি করে একজন কমিউনিস্ট হবেন। একজন কমিউনিস্ট তো  অবশ্যই নিপীড়িত মানুষ ও গোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়াবেন। বিপক্ষে দাঁড়াবেন নিপীড়কের।

তাহলে দেখি কবিতা কৃষ্ণানেরা  ৮৪ তে  শিখ সম্প্রদায় এবং ৯০ এ  হিন্দু পন্ডিতদের পক্ষে কথা বলেছেন কি না! ইতিহাস বলে,  ৮৪ সালে  দিল্লীর পথে শিখদের যখন প্রকাশ্য জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো ; তিনশর মত পোড়া দেহ পাওয়া গিয়েছিলো। এবং চার হাজার শিখকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। তখন  বামপন্থীদের দায়সারা গোছের বিবৃতি ছারা আর কিছু পাওয়া না ! আর যা,সব চেয়ে বেশি বিস্মিত করে তা হলো ৯০ সালে যখন  তিন লাখ হিন্দু পন্ডিতদের  কাশ্মীর ছাড়া করা হয়; এবং খুন করা হয়। শত শত নারী ধর্ষিত হয়ে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয় কাশ্মীর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও জেকেএলএফ জঙ্গিদের তান্ডবে। তা নিয়ে না তখন কোন বিবৃতি দিয়েছে, না নির্যাতিদের পক্ষে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় বামপন্থীরা! কেন শিখ সম্প্রদায় ও  কাশ্মীরের হিন্দুপন্ডিতদের  পক্ষে কথা বলে না ভারতীয় বামপন্থীরা? আমার পরিচিত একজন ভারতীয় বামপন্থীকেও কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিতদের বিতারন নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী হতে দেখিনি। আর ঢাকার বামপন্থীরা বোধয় জানেই না  ৯০ এ কাশ্মীরের জঙ্গিদের দ্বারা  হিন্দু  বিতাড়ন ও খুন ধর্ষনের খবর। সম্ভবত ভারতীয় বামপন্থীরা ঢাকায় কাশ্মীরের সব খবর দিলেও এ খবরটা দেননি। তাই ঢাকার বামপন্থীরা তা জানেন না। আমিও জানতাম না। সৌভাগ্য বলুন আর দুর্ভাগ্য আমি কাশ্মীরে গিয়েই তা জেনেছি। তার আগে আমিও জানতাম না।  ৯০ সালে কাশ্মীরের জঙ্গি দ্বারা লাখ লাখ  হিন্দু বিতাড়ানের খবর! এমন নয় যে তখন আমি ঢাকার  বামপন্থীদের সাথে চলিনি বা বুদ্ধিজীবীদের সংস্পর্শে ছিলাম না। বা দৈনিক পত্রিকা পড়তাম না। কি চমৎকার ভাবেই না এড়িয়ে গেছে সে খবরটি! আর অতীতের কথা কি বা বলবো; এই তো কদিন আগেও স্বচোখে দেখলাম পৃথিবীর সব থেকে পরাক্রমশালী দেশের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যই গায়েব করে কাটছাট করে পত্রিকায় ছাপা হলো! কারন, পাঠক ও সমাজ কি শুনতে চায়, জানতে  চায়। আর কি শুনতে চায় না , জানতে চায় না। তা সংবাদপত্রগুলো ভালোভাবেই আমল করে চলে! টিআরপি বলে কথা। কিন্তু সত্য ও বাস্তবতা থেকে পালাতে চাইলে বা গোপন রাখতে চাইলেই কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। একদিন মুখোমুখি হতে হবেই তিক্ত সত্যের।
 
ইরানের কমিউনিস্টরা বেশ আগ বারিয়েই ইরানের খোমেনীর বিপ্লবী আন্দোলনে যুগপৎ সহযোগী ছিলো। ফলাফল সবার আগে খোমনীর কর্মীদের হাতে বলির পাঠা হয়েছিলো ইরানের কমিউনিস্টরাই!  ইতিহাস  থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে চায় না, এটা বেশ পুরোনে কথা। বহুবার শুনেছি,বলেছিও।

এবার দেখি আমার প্রিয় কমরেড কবিতা  কৃষ্ণানেরা কাদের পক্ষে মালকোচা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। আমি একটি নমুনা নিচে তা তুলে ধরছি।

'"Kashmir was never part of india, said a young man who seemed to be the group's chief spokesman.  'Our culture has always been different. We believe in Muslim ideology, the Indian's preach socialist ideology. We believe in Muslim educational values , they believe in Darwin's theory. We are part of the global Islamic movement against the materialistic ideology of the West."
("Kashmir A Tragedy of Errors " writer  Tavleen Singh ) 

প্রিয় কমরেড বৃন্দ, যারা এমন আইডিলজি ধারন করে ; আপনি তার পক্ষে কথা বলছেন। এমন ব্যাক্তি ও গোষ্ঠীর পক্ষে আপনার বুক ভরা ভালোবাসা যে ঘোষণা  দিয়ে আপনার বিরোধীতা করে। আর একজনও মৌলবাদী   কাশ্মীরী মুসলিম পাবেন না, যারা "মুসলিম কমিউনিস্টদের " মুসলমান মনে করে! যতই কাশ্মীরী জঙ্গিদের দরদ দেখান, ভারতের  দরদী  হিন্দু কমিউনিস্টেদেরও নাস্তিক, কাফের, অপবিত্রই মনে করে কাশ্মীরি "জেহাদীরা" । (ম্যায় ইয়ে দাবা কে সাথ বাতা সাকতা হু) । কেবল কাশ্মীরী মৌলবাদী মুসলিম নয়  বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ যে কোন জেলায় গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।, আর যতই  কমিউনিস্টদের সম্পর্কে কি ধারনা পোষন করে সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। একজন কমিউনিষ্ট যতই নামাজি হোক আর যতবড় হাজী হোক তাকে কি মনে করে তা আপনার আশে পাশে খোজ নিন। ( হিন্দু কমিউনিষ্টও যতই গয়াকাশি ঘুরে আসুক একই কথা প্রযোজ্য)  একজন কমিউনিস্ট তার রাজনৈতিক দর্শন না জানলেও একজন কমিউনিস্ট বিরোধী ঠিকই খোজ রাখে কমিউনিস্ট দর্শনটা কী!

বিচিত্র বিষয় হলো, ভারত উপমহাদেশে দু ধরনের কমিউনিস্ট পাওয়া যায়। এক ধরনের কমিউনিস্ট হলো যারা মনে করে;  ভারত ভাঙ্গতে পারলে পৃথিবীতে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাবে(?)! আরেক ধরনের কমিউনিস্ট হলো যারা মনে করে পৃথিবীতে শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা করতে  হবে। লুটেরা পু্ঁজিবাদীদের হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।  তাদের দৃষ্টিতে।  ভাঙ্গাভাঙি নয়। পুরো পৃথিবীটা  এক করতে হবে। কেন না, তাদের ভাষায় পৃথিবীতে ধনী ও দরিদ্র ছাড়া আর কোন শ্রেনী নাই। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মকে তারা মনে করেন শাসক, শোষকের হাতিয়ার। এমনকি এই ধরনের কমিউনিস্টরা মনে করেন, মানুষের অধিকারকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য ধর্মকে শোষক শাসকেরা আফিমের মত সাধারন মানুষের সামনে আনে।
দূর্ভাগ্য জনক হলো, প্রথম ধাচের কমিউনিষ্ট এ উপমহাদেশে বেশি সক্রিয়। তারা মনে করেন; ভারত ভাংঙ্গতে পারলেই সমাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাবে! কিন্তু এ স্বপ্ন কমিউনিস্টদের জন্য আত্মঘাতি। ভারতবর্ষ ভাঙ্গার পর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেরদের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। কমিউনিস্টরা মৌলবাদীদের ধাক্কায় জাদুঘরে ওঠার পথে। আমি মনে করি কমিউনিষ্টদের টিকে থাকার জায়গা ভারত। যদিও ভারতে মুসলিম ও হিন্দু মৌলবাদ দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু কখনো যদি ভারত ভাঙ্গে  কমিউনিস্টদেরও এ উপমহাদেশে কবর রচিত হবে। আজ যারা, কমিউনিষ্ট হয়েও কাশ্মীরি জঙ্গিদের পক্ষে কথা বলতে দেখি। তারাই আগে নিষিদ্ধ হবেন কাশ্মীরে। যদি কখনো কাশ্মীরি জঙ্গিরা  কাশ্মীরক পৃথক করে তাদের "নেজামে মোস্তফা " কায়েম করতে পারে। নিশ্চয়ই  "নেজামে  মোস্তফা"র তুলানায়  আজকের "মোদীর রাজ " থেকে কমিউনিস্টদের জন্য কখনোই  সুখকর হবে না।  বরং নেজামে মোস্তফা হবে কমিউনিস্টদের জন্য অগ্নীকূন্ড। ইরানে খোমেনীর গ্যাং এর হাতে  কমিউনিস্টদের বলি হওয়ার ইতিহাসটা মনে রাখা উচিৎ। 

সুজানা অরুন্ধতী রায, (দ্রঃ অরুন্ধতী রায় খুব ধূর্ততার সাথে সুজানা নামের অংশ বাদ দেন) অমর্ত্য সেন, কমিউনিস্টদের আইডল হলে, এবং তাদের প্রোপাগান্ডায় এ উপমহাদেশের কমিউনিস্টরা পথ চললে, ভারতের মেহনতি মানুষদের মুক্তি তো আসবেই না। কমিউনিস্ট রাই গনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কমিউনিষ্টদের কমিউনিস্ট ই থাকতে হবে। তা না হলে কোন সম্প্রদায়ই বিশ্বাস করবে না। কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস কে সামনে রেখে কমিউনিস্টদের পথ চলতে হবে। কমিউনিস্টদের পুঁজি ঐ দুজনই। তাদের রেখে কাশ্মীরি জঙ্গিদের মুখপাত্র হলে কমিউনিস্টরা তখন আর কমিউনিস্ট থাকে না। কমিউনিস্টদের মানবতা কখনো সিলেক্টেড থাকার কথা নয়। যা,কবিতা কৃষ্ণানদের কথায় সবয় সময়ই প্রমানিত হয়।
 
কেবল কোন জনগোষ্ঠী নয় একজন কমিউনিস্ট হিসেবে সারা পৃথিবীর মেহনতি মানুষের মুক্তি চাই। আমি বিশ্বাস করি সমাজতন্ত্র মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।  একজন কমিউনিস্ট যেমন "মোদীইজমের" পক্ষে থাকতে পারে না। তেমনি "নেজামে মোস্তফার" আন্দোলনে সংযুক্ত হতে পারে না। যদি কেউ তা করে তবে ধরে নিতে হবে তিনি বা,তারা মার্কসইজম নয় অন্য কোন কিছু কামনা করেন।
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours