শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যত কি? ফেসবুকে এমন একটি পোষ্ট দেয়ার পর ফেসবুক বন্ধুদের  মন্তব্যগুলো ছিলো এইরকম।
মনসুন সরকার লিখেছেন; "অতিত বর্তমানের চেয়ে খারাপ হবে।"
"এই শিল্প আছে নাকি! থাকলেও ফকফকা আন্ধার।" সালাউদ্দীন মুকুল
"কোন ভবিষ্যৎ নাই, 
যত সম্ভবনা আর ভবিষ্যৎ সব ওয়াইজিনদের।" আরিফুল ইসলাম মুফাস্সেল।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ,  "অন্ধকার " লিখেছেন; উত্তম কুমার রায়,মিত্রানী পোদ্দার,
রাজীব ভৌমিক,তুষার বিশ্বাস।
অলি উল্লাহ্   সাটায়ার করে, অন্ধকার বুঝাতে, 
সাটায়ার করে,বলেছেন, "দারুন'!
"ছিঃনেমা-ছিঃনামা" বলেছেন মাইন উদ্দীন।
কিশোর কুমার,  "অন্ধকারের জোনাকি পোকা আলোর মতো"
লেখক, ফটোগ্রাফার সুদিপ্তো সালাম বলেছেন; চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে, "আশা করাও ভুল মনে হয়" 
এডভোকেট জহির উদ্দিন সাব্বির, চলচ্চিত্রের বর্তমান হালহকিকত দেখে; ক্ষোভে দুঃখে বলেছেনঃ " উনিতো কবেই মারা গেছেন।" 
চৌধুরী এমএ জেড , আরো ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, "ভবিষ্যতে আমদানীকৃত সিনেমা দেখানো হবে প্রেক্ষাগৃহে-এতে প্রযোজকদের লাভ বেশী হবে; দেশে সিনেমা নির্মান ১০/১৫ বছর পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এফডিসি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওয়াতাধীন হবে তখন ।" 
আহমেদ জাহিদ খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন; 
"আমাদের সিনেমা শিল্পের কোন ভবিষ্যৎ নাই। সাহিত্য সংস্কৃতির যে আকাল দেশে বর্তমানে আছে সেখানে সিনেমা শিল্পের ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না। কারণ একটার সাথে আরেকটি রিলেটেড।"

"আমি মনে করি বই পড়ে মানুষ শিক্ষত হওয়ার মতো সিনেমা নাটক দেখিয়েও মানুষকে শিক্ষত সচেতন করা সম্ভব কিন্তু সেরকম সাহসি মেধাবি পরিচালক দের সংখ্যা আমাদের দেশে তুলনা মুলক কম এটা বারাতে পারলে ভবিষ্যতে শুধু সিনেমা না দেশের ভবিষ্যতও ভাল বলে আমি মনে করি।" লিখেছেন আব্দুল হক।

ইমতে আহসান লিখেছেন" 
মনোযোগ দিয়ে এবং সিরিয়াসলি কোন কাজ করার মতো ধৈর্য্য স্থিরতা কোনটাই নেই আমাদের, তাছাড়া এখন যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে তাদের প্রথম চিন্তা কী করে ইনিয়ে বিনিয়ে বিদেশের যেন তেন মানের যে কোন একটা ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করা । আর ফারুকীজি সব সময় ধান্ধায় থাকেন কখন আরেকটা হলি আর্টিজানের মত ঘটনা ঘটে । আমাদের দেশে মোটামুটি রাজ চক্রবর্তী মানের একজন দুইজন চলচ্চিত্র পরিচালক থাকলে সিনেমাটা জাতে তোলা যেত । কারণ আমাদের দেশে এই মূহুর্তে সুস্থ বিনোদনের ভীষণ অভাব।" 
"পুরাই অন্ধকার। কিছু করার ইচ্ছা আছে কিন্তু জায়গা নাই।" আক্ষেপ, মোঃ সোহাগের। 

মোহাম্মদ সোহাগের মত আক্ষেপ ও আকাংক্ষা নিয়ে, আমি ২০/২১ বছর আগে দিল্লীর নয়ডা ফিল্ম সিটিতে অবস্থিত AAFT তে এডমিশন নিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। কেন না, ৪/৫ বছর অর্থ খরচ করে আমার পক্ষে পড়া লেখা করা সম্ভব নয়। কেন না, ভারতে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায় না। তাছাড়া ভারতে তো ইনকাম ইউরোপের মত নয়। যদিও রেজিস্ট্রার সাহেব, আমাকে ভর্তি হতে বলেছিলেন, পরে আমার থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা তিনি করবেন।কেন না,  তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন,আমি ঢাকা থেকে দিল্লীতে গিয়ে চলচ্চিত্রের উপর পড়া লেখা করতে চেয়েছিলাম বলে। সে বছর মাত্র দুজন বাংলাদেশি ছাত্র ভর্তি হয়েছিলো AAFT তে।

ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নাম পারিবর্তিত হয়ে, বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নাম নিয়ে  বাংলাদেশে সিনেমা জগতের পুনযাত্রা শুরু হয়। সত্তুর থেকে আশি দশক ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের সিনেমার স্বর্ন যুগ।  বাইস্কোপ প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ উপমহাদেশে সিনেমা জগতে প্রবপশ করে। ২৮ ডিসেম্বর ১৮৯৫ সালে, Lumiere brothers   বানিজ্যিক ভাবেচ,বাইসকোপ প্রদর্শনী শুরু করে প্যারিসে।  সেই সময়েই ভারত উপমহাদেশেও প্রদর্শনী শুরু হয়। কোলকাতার ব্রাডফোর্ড বাইসকোপ কোম্পানী ঢাকা ও কোলকতায় বাইসকোপ প্রদর্শনী পরিচালনা করতে থাকে। চলচ্চিত্রের , নবৃবইতিহাস নিয়ে আজ লিখছি না৷ 

বৃটিশ ভারত ও পাকিস্তান আমলে, চলচ্চিত্র তথা সিনেমা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্য
তম শক্তিশালী গনমাধ্যম ছিলো। আশি,নব্বইয়ের  দশকেও কি শহর কি গ্রাম দর্শকের কমতি ছিলে না। আর  সিনেমা হলগুলোতেন উপচে পগিয়প রা ন থাকতো ঈদ ও  পুজার সময়। আমার মনে আছে, আমরা তখন ছোট।  ছুটির ঘন্টা সিনেমা দেখার জন্য বলা হতো স্কুল থেকে। আরো ছোট থাকতে মা বাবার সাথেও সিনে দেখতে গিয়ে ঘুমিয়ে পরতাম। সে সময় সিনেমা হলে এত নিরাপত্তা ছিলো যে মেটিনি শো তে আমি আমার ছেট বোনকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম। আমিও তখন কিশোর।  আার বোন আর ছোট। দুজন কাঁদতাম সিনেমা দেখে দেখে। আজ সিনেমা হলে, একজন কিশোর ও একজন মেয়ে শিশু সিনেমা দেখে নিরাপদে বাড়ি ফিরবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনা! এমন নয় যে, আমরা স্থানীয় এবং আমার বাবার পরিচিত ছিলো হল কর্তৃপক্ষ। প্রকৃত পক্ষেই সিনেমা হলগুলো নিরাপদ ছিলো দর্শকদের জন্য।

গতকাল  সিনেমা ব্যাবসায়  অভিজ্ঞ আব্দুল কাদের ভাই  সাথে কথা হয়। যার রয়েছে ৩০ বছরের সিনেমা হল পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা। সিনেমা দেখার নেশা  ও শখ থেকে জুট মিলের চাকুরী ছেড়ে কম বেতনে চাকুরী নেন। দ্রঃ সে সময় জুট মিলের চাকুরী, ভালো চাকুরী হিসেবে গন্য হতো। প্রথমে সিনেমা হলে চাকুরী, তারপর একসময়  সিনেমা হল লিজ নিয়ে মফস্বল শহর, সরিষাবাড়ি, মধুপুর ও ঘাটাইলে সিনেমা হল ব্যবসায় খুব ব্যাস্ত্য সময় পার করেন। এখন তিনি পুরোপুরি অবসর । কেননা, সিনেমা ব্যবসায়  এখন ধ্বস নেমেছে। আমি নিজেও তার সেই ব্যাস্ত্য সময়  প্রত্যক্ষ করেছি। প্রত্যক্ষ করেছি, চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাথে কাদের ভাইয়ের  ব্যবসায়িক ও ব্যাক্তিগত  সম্পর্ক। 

আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ব্যবসার ভাবিষ্যত কি? জবাবে এক বাক্যে বলেন, বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ব্যবসার কোন ভবিষ্যৎ নেই। তিনি অর্থনীতিবীদ নন, মার্কেটিং নিয়েও পড়ালেখা করেননি।তিনি  সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীও নন। একজন স্বশিক্ষিত, মানবিক মানুষ। তবে, তাকে যারা চেনে, তারা, তার এ বক্তব্যের বিরোধীতা করার সাহস রাখেন না৷ যেমন, "বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র ব্যবসার ভাবিষ্যত নেই" আমি এমন কথার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার সামনে আমি নিরব থাকতেও বাধ্য।

কেন বাংলাদেশে  চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করছেন অনেকেই? কাদের ভাই এর মতে হিরো তো নেইই, ভিলেনও নেই বলে দর্শক হল মুখি হচ্ছে না। নায়িকা সংকটও চলছে। পরিচালকদেরও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। তার সাথে সিনেমা হলে  দর্শকদের নিরাপত্তার অভাবকে  অনেকাংশে দায়ী করেন দর্শকদের সিনেমা হল বিমুখ  হওয়ার জন্য। কননা, তার মতে আগে  নারী দর্শকদের  যে হারে সিনেমা হলে উপস্থিতি থাকতো তার শতকরা পাঁচ ভাগও এখন  নেই। কেন নারীর সিনেমা হলে উপস্থিতি এত কম? উত্তরে  তার একই জবাব, নারীর জন্য পথঘাট ও সিনেমা হলে সরকার ও আমরা  নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ। স্মার্ট ফোন, পর্নোগ্রাফি সিনেমার জন্য হুমকি মনে করেন না।  তিনি মনে করেন যারা সিনেমা দেখার, তারা সিনেমা দেখবেই। এ বিষয়ে ভারতের চলচ্চিত্রের উদাহারন দেন। তবে, তার শেষ কথা ছিলো, সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে। এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ধ্বংস অনিবার্য।  

এ দেশে  একবার ময়মনসিংহ সিনেমা হলে
মৌলবাদীরা জঙ্গি হামলা করে ছিলো । তাতে চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধ্বস নমেছে তা কোন নির্বোধেও বিশ্বাস করবে না। প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ব্যবসার দুর্দিন চলছে এবং চলচ্চিত্র ব্যবসা সত্যিই হুমকির মুখে। প্রজোযকদেরও দাবী বিনিয়োগ করা পুঁজি খুব কমই ফেরত আসছে। দেশের সিনেমা হলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  অভিনেতা অভিনেত্রী চরম সংকট। কাহিনী সংলাপ নৃত্য, লোকেশন, মানসম্মত হচ্ছে না। শেখ সাদী বলেছেন, "হারচিজ প্যায়দা হোতে হ্যায় হার কারবালা কে বাদ।" অর্থাৎ,  সব কিছু সৃষ্টি হয়, ধ্বংসের পরই।

আমরা আশা করবো, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র  আবার ধ্বংসের ভেতর থেকেই,  নতুন ভাবে জন্ম নেবে। চলচ্চিত্র সমাজের আয়না। আজকের আধুনিক সময়ে  চলচ্চিত্র ছাড়া একটি রাষ্ট্র আধুনিক ও সভ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় না।  আমেরিকা একটি অংশ মুভি মুক্তি দিয়ে এক সপ্তাহে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে নেয়। আর ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১ কোটি ২ কেটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রযোজক তার বিনিয়োগ ফেরত পাচ্ছে না। এটা  বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ব্যবসার জন্য অশুভ লক্ষন। কেবল, দর্শক ও নিরাপত্তার অভাবের অজুহাত দেখালেই হবে না৷ মানসম্মত ছবিও দর্শকদের সামনে আনতে হবে। আফগানি আফগানিস্তানের ক্রিকেট টিম নিরাপত্তার অভাবে  ভিন্ন দেশে( ভারতের দেরাদুনে )  ক্রিকেট অনুশীলন করে বাংলাদেশের মত শক্তিশালী দলকেও হারিয়েছে! যদিও বিষয়টি ক্রিকেটের। কিন্তু যে কোন পেশার মানুষের জন্য এ ঘটনাটা দৃষ্টান্ত এবং  সাহস  জোগাবে। যে সবার আগে প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তি।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. আমার কাছে একটা গল্প আছে। হেড লাইন দেখার ‍সুজুগ হবে আপনার?

    ReplyDelete