ফের জেল হেপাজতে গেলেন বর্ধমানের প্রাক্তন পুলিস সুপার এসএমএচ মির্জা।
এবার কি মেজাজ হারাচ্ছেন মির্জা?
"ভিডিওতে না দেখা গেলেই যে উনি নেননি তা তো নয় ?" খানিকটা বিরক্ত হয়েই যেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন নারদকাণ্ডের এক অভিযুক্ত এসএমএচ মির্জা। তিনি বলেন, 'ইনভেস্টিগেশন উইল প্রুফ।"
তবে মির্জা যতই গলা ফাটান না কেন, এখনও তাঁর দাবিতে অনড় মুকুল রায়। ভিডিওতে কোথাও তাঁকে টাকা নিতে দেখা যায়নি। তাই কোনও টাকা লেনদেনের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে নেই।
এদিকে আজই শেষ মির্জার হেফাজতের মেয়াদ। সোমবার সকালেই তাঁকে নগরদায়রা আদালতে তোলা হয়। আরও চোদ্দ দিনের জন্য মির্জাকে হেপাজতে পেতে আর্জি জানায় সিবিআই। বিচারক সিবিআইয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে, আগামী পনেরো অক্টোবর পর্যন্ত মির্জাকে জেল হেপাজতের নির্দেশ দিলেন।
গত রবিবার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে সিবিআই। ম্যাথু স্যামুয়েলের ভিডিওগ্রাফির সঙ্গে মির্জার বয়ান মিলিয়ে পরীক্ষা করতে চান তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। তবে মুকুল রায় গোড়া থেকেই দাবি করে আসছেন, তিনি কোনও টাকা লেনদেনের মধ্যে ছিলেন না। গোটাটাই ষড়যন্ত্র। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
"নারদ কেলেঙ্কারিতে যাঁরাই ফাঁসছেন তাঁদের শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমার নাম নিতে," বলেন মুকুল রায়। তাঁকে আর বিজেপিকে 'ম্যালাইন' করতেই চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। "পুজোর আগে সবচেয়ে বড় রসিকতা!" মুকুলের অভিযোগের জবাবে মন্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। মুকুলকে খোঁচা মেরে তিনি বলেন, "সাধারণ ভাবে হলে ও প্রাইমারি টিচারের চাকরিও পেতো না।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃপাতেই সাংসদ থেকে মুকুল মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন বলে দাবি পার্থর।
মুকুল- পার্থর এই রেষারেষি বহু পুরনো। তখন মুকুলও ছিলেন তৃণমূলে। পার্থকে তিনি 'বাচ্চা ছেলে' বলে মন্তব্য করছিলেন। তার জবাবে মুকুলকে খোঁচা মেরে পার্থ বলেছিলেন, কাঁচরাপাড়ার 'কাঁচা ছেলে'। ঘটনায় পরিষ্কার, আজও সেই বাকযুদ্ধের অবসান হয়নি।
নারদকাণ্ডের তদন্ত জোর ধরায় খুশি ঘটনার নায়ক ম্যাথু স্যামুয়েল। "আমার জীবনে খুশির দিন।" মির্জার গ্রেপ্তারের খবর কানে যেতেই বলেছিলেন তিনি। ম্যাথু জানান, সত্যের উদ্ঘাটন করেছিলেন সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতায়। কিন্তু তারজন্য তাঁকে প্রচুর হেনস্থা হতে হয়।
২০১৪ সালে এক ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ম্যাথু ওই স্টিং অপারেশন চালান। একটি সংস্থাকে কিছু সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মোটা টাকা লেনদেনের ছবি ধরা পড়ে। মোট বাহান্ন ঘণ্টার ওই ভিডিও ফুটেজে, টাকা নিতে দেখা গেছিল তেরোজনকে। তাঁদের মধ্যে এক আইপিএস অফিসার ছাড়াও ছিলেন চার মন্ত্রী, সাত সাংসদ, এক বিধায়ক। দু'বছর পর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই স্টিং অপারেশনের খবর বাজারে ছড়াতেই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি ওই ভিডিওগ্রাফিকে 'জাল' বলেও চালানোর চেষ্টা হয়।
হাইকোর্টের আদেশে তদন্তে নেমে, ২০১৪ সালের সতেরো এপ্রিলে প্রথম এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। তাতে অন্যান্যদের সঙ্গে নাম ছিল মির্জারও।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours