সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর
মাঝারি
উচ্চতার শ্যামলা বরন ছেলেটার সাথে পরিচয় মাস দুয়েক আগে। মায়ের মৃত্যু
দিনে কিছু বাচ্চাকে খাওয়াবো সেই ইচ্ছের কথা বলি এক রিপোর্টার ভাইকে। তিনিই
বললেন চলে যান নবদিগন্তে।
কার্তিক আছে কোন অসুবিধা হবেনা। দুর্গাপুরের মধ্যে ও আরেক দুর্গাপুরের সন্ধান মিলবে সেখানে।
ফোনে
কথা হবার দুদিনের মধ্যে উপস্থিত কার্তিক।মৃদু ভাষী ছেলেটি জানালো তার
গ্রামের কথা। এক নির্বাশিত অভিসপ্ত গ্রামের কাহিনী।জাত ,ধর্মের বিভেদে
নয়,ছোঁয়াচে কুষ্ঠ রোগীরা এখানে পুর্নবাসন পান ১৯৮৯ সালে।টানা একমাস প্রায়
একশো জন কুষ্ঠ রোগী যারা রাইটার্সে ধর্না দিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কাছ
ওই জায়গা আদায় করেন।ওটা পুর্নবাসন না নির্বাসন তা আজও বোঝা ভার।গ্রাম থেকে
কাছাকাছি বড় রাস্তায় আসতে আজও প্রায় আড়াই কি মি রাস্তা হেঁটে বা সাইকেলে
আসতে হয়।বর্ষার সময় এক হাটু জল।দামোদরের ধারের এই কূষ্ঠ কলোনি।
এই
গ্রামের ছেলে কার্তিক কালিন্দী।কুষ্ঠ আক্রান্ত পরিবারের এই মেধাবী ছেলেটি
ব্যারাকপুরের উদয়ন হোমে পৌঁছেছিল কোন এক জাদু বলে।সেখানেও কুষ্ঠ রোগীর
সন্তান বলে বন্ধুদের কাছে অচ্ছুৎ ছেলেটি ইঙরাজীতে অনার্স করে।ওর নিজের কথায়
দিদি আমি না খুব ফিলমি টাইপের।ঐ "বাবা কেন চাকর",ঐসব সিনেমা দেখে খুব কষ্ট
হত বাড়ির লোকের জন্য।তাই কলকাতার জাকজমকপূর্ণ জীবন ফেলে চলে এলাম
গ্রামে।এরমধ্যে সে এক স্কুলে শিক্ষকতা করেছে।খরকপুর আই আই টি থেকে
হর্টিকালচার এ ডিপ্লোমাও করেছে।
সে যখন ফিরলো,গ্রামে
তখন কিছুই নেই।ঘোরাঘুরি শুরু হল।২০০৪সালে গ্রামে একটি স্কুল চালু করা
গেল।এই সময়েই কার্তিকের সাথে পরিচয় হল তৎকালীন এস ডি ও শঙ্খ সাতরার।মানবিক
শঙ্খবাবু ভালোবেসে ফেললেন এই গ্রামকে।কার্তিকের পাশে এসে দাঁড়ালেন।ওনার হাত
ধরে কিছু কিছু গঠনমূলক কাজ হলো এই গ্রামে।আশিস,লালনের মত কিছু সম
মানসিকতার বন্ধুদের নিয়ে কার্তিক আজ এগিয়ে চলেছে।
গ্রামের ষাট টি বাচ্চাই পড়াশোনা করে।বারোজন উদয়ন হোমে আছে।
কার্তিক
জানেন সাসটেনেবেল ডেভেলপমেন্ট ছাড়া জীবনের মান উন্নয়ন সম্ভব নয়।তাই
গ্রিনহাউস এ চলছে মাসরুম,ক্যাপসিকাম চাষ।মহিলারা শিখছেন টেলারিঙ।সেল্ফ
হেল্প গ্রোপ তৈরি হয়েছে।ভবিষ্যতে স্যানিটারি হাইজিনকে মাথায় রেখে মেশিন
বসিয়ে স্থানীয় মহিলাদের কাজের সুযোগ দেওয়া এমন অনেক স্বপ্ন কার্তিকের
ঝুলিতে।
এহেন কার্তিকের বাইকের পেছনে বসে বৃষ্টি
ভিজতে ভিজতে শুনেছিলাম দিদি, যেদিন কেউ আমাদের কোন বাচ্চাকে ভিখারির বাচ্চা
বলবেনা সেদিন আমার এই লড়াই শেষ হবে।
দূর থেকে একটা টোটো ভর্তি কুষ্ঠ রোগী আসছেন যারা আজও রবিবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত পাশের বাজার হাটে যান ভিক্ষা করতে।
এহেন
যার জীবন ,সেই বছর তিরিশের কার্তিক কালিন্দী যখন The Telegraph School
Awards For Excellence Award 2019 পান,তখন একরাশ খুশি, আনন্দে মন ভরে
ওঠে।সেই আনন্দের ভাগিদার হোন আরো অনেকে এই আশা রাখি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours