ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ     এরপর রানীমা  তাঁর  পরিবারের  কুশল  জিজ্ঞাসা  করলে, রপেন্দ্র  কুসুমমঞ্জরীর মৃত্যু, রূপমঞ্জরীর  জন্ম  এবং শ্যলিকা  তুলসীর  সাথে  দ্বিতীয়  বিয়ের  প্রস্তাব!
          কুসুমমঞ্জরীর  মৃত্যু সংবাদে, রানীমা  স্তম্ভিত  হলেও, কিছুক্ষন  পর  জিজ্ঞাসা  করলেন, ভবতারনবাবুর  দ্বিতীয়া  কন্যাটি  দেখতে  শুনতে  কেমন?
          রূপেন্দ্র  লজ্জিত  হলেও  জানালেন, তুলসী  যথার্থ  সুন্দরী, বুদ্ধিমতী  এবং  গৃহকর্মে  নিপুনা! কিন্তু  তিনি  দ্বিতীয়বার  সংসারী  না  হওয়ার  সিদ্ধান্ত  নিয়েছেন! এবং  এখন  তাঁর  একমাত্র  লক্ষ্য  কন্যাকে পন্ডিত  করে  তোলা! আজ  তাঁর  একমাত্র  ব্রত, সমাজের  পঙ্কিল  আবর্তথেকে  নারীদের  শিক্ষার  আলোয়  আলোকিত  করা! অষ্টাদশ  শতকের  ভারতবর্ষে  নতুন করে  মৈত্রেয়ী,গার্গী, খনা, মদালসাদের  অধিষ্ঠিতা  করা! গৌড়বঙ্গের বালিকাদের  সুযোগ  দিতে  তিনি  লড়াই  করবেন! এই  সমাজ  অতলায়তনে  বন্দী  করে  অধঃপতনের  দিকে  ঠেলে  দেওয়ার একটি  কারন  জাতিভেদ  হলে  অন্যটি সমাজের  অন্যতম  ধারক  ও বাহক  নারীদের  অশিক্ষিতা  করে  কুসংস্কারের  বেড়াজালে  বন্দী করে  রাখা! পঞ্চদশ শতকে  শ্রী চৈতন্যদেব  চন্ডালকে  বুকে  স্হান  দিয়ে  ব্রাক্ষন্যবাদের  মুলে  কুঠারাঘাত  করে অস্পৃশ্যতার  বিরুদ্ধে লড়াই শুরু  করেন, কিন্তু  নারী শিক্ষার,বিষয়টি  আজও  উপেক্ষিত!
       
  
     রানীমাকে  সরাসরি  রূপেন্দ্র  বললেন, তিনি  নারীশিক্ষার  বিষয়টি  নিয়ে  রাজা  মশায়ের  সহযোগীতা  চান! তিনি  শিক্ষার  প্রসারে  গ্রামে  গ্রামে  চতুষ্পাঠী  খুললেও  নারী শিক্ষার  বিষয়ে  কিছু  করেন  নি! যদি  এই  বিষয়টি  ভেবে  দেখেন!
       রানীমা  রূপেন্দ্রর  আর্জি  খারিজ  করে  সরাসরি  জানালেন, মহারাজের  সাথে  তাঁর  এ বিষয়ে  ইতিপূর্বে  আলোচনা  হয়েছে  এবং  তাঁরা মনে  করেন, গৃহের  মধ্যেই  ব্রাক্ষ্মন  কন্যার  অক্ষর  পরিচয়  হওয়া  উচিত  এবং  অষ্টম  বর্ষে  গৌরীদান!অন্যথায়  সমাজে  ব্যাভিচার দেখা  দেবে!সমাজ  ভেঙে  পড়বে!
              অসহায়ভাবে, রূপেন্দ্র  পুনরায়  জিজ্ঞাসা  করলেন, ' সতীদাহ ' সম্পর্কে  তাঁর  মত  কি? তিনি এই  লোকাচার  সমর্থন  করেন  কি না?
      রানীমা,স্পষ্ট  জানালেন,তাঁর মতে  'সতীদাহ'  কোন  লোকাচার  নয়  এটি  হিন্দুধর্মের  একটি  গুরুত্বপূর্ন  অঙ্গ!
          রূপেন্দ্র  রানীমা কে  হিন্দু  সমাজের কুপ্রথা যেমন, গঙ্গাসাগরে  সন্তান  বিসর্জন, বহুবিবাহ  সম্পর্কে  বোঝাতে  চেষ্টা  করেও,ব্যার্থ  হ'ন ! দেখা যায়  রানীমা  কুসংস্কার গুলি  সম্পুর্ন  সমর্থন  করেন  এবং  কৃষ্ন নগরের  রাজাও  শিক্ষিত  উদারচেতা  হলেও  সামাজিক  কুসংস্কার মুক্ত  নন! তাই  নারীমুক্তির  জন্য  'নারী শিক্ষা ' আন্দোলনে  তাঁর  পৃষ্টপোষতা  পাওয়া  সুদুরপরাহত!
(চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours