ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ

 বর্তমান  পশ্চিম  বর্ধমান  জেলার  আসানসোল  মহকুমার  রানীগঞ্জ  ব্লকের  তিরাট গ্রাম ! দামোদর  নদের  দক্ষিন তীরের  এই  গ্রামটি  বহু  প্রাচীন! একদা  গ্রামের  জমিদার  ছিলেন  ' চট্টোপাধ্যায়  পরিবার ' ! আর  জমিদার বাড়ীতে  দুর্গাপুজো  হবে  না  সেটা  সম্পুর্ন  বেমানান! তাই প্রায়  সাড়ে  চার'শ  বছর  আগে  দুর্গাপুজোর  পত্তন  করেন  বক্রনাথ  চট্টোপাধ্যায়!প্রথম  মাটির  মন্দির  নির্মান  করে  পুজা  শুরু  হয়! বক্রনাথের  মৃত্যুর  পর  তাঁর  সুযোগ্যা সহধর্মিনী  সৌদামিনী  দেবী  পাকা  দুর্গামন্দির  নির্মান  করান! বর্তমানে  সেই  মন্দিরটির  সংস্কার  হলেও  পুজার  ঐতিহ্য বজায় আছে!পুজার  আড়ম্বরের  বিন্দু মাত্র  বিচ্যুতি  ঘটেনি!

          চট্টোপাধ্যায়  পরিবারের  দুর্গাপুজোর  প্রধান  বৈশিষ্ঠ  সন্ধিপুজোয়  একটি  শ্বেত  ছাগ বলি  দেওয়া  হয়! নবমী  ছাগ,ছাড়াও  মোষ১ বলি  দেওয়া  হয়!এলাকায়  এই দেবী দুর্গা খুবই  জাগ্রতা দেবী  বলে  তিরাট  ছাড়াও  পার্শ্ববর্তী  গ্রামের  সাধারন  মানুষের!

           এই  দেবীকে  নিয়ে  অনেক  কিংবদন্তী  চালু  আছে! সপ্তমীর  পূজা  শুরু  হওয়ার  সাথে  সাথে  সন্ধি  পুজায়  বলিদানের  জন্য   শ্বেত  ছাগটিকে   সাড়ে  চার'শ  বছরের  প্রাচীন  একটি  দড়িতে  বেঁধে  দেওয়া  হয়( মুল  দড়ির  উপর  প্রতি  বছর  একটু  করে  পাট  জড়ানো  হয়)যদি  পাঁঠাটি  সম্পুর্ন  সাদা  হয়  তাহলে  পাঁঠাটি  সন্ধিপুজায়  উৎসর্গ  করা  যাবে,কিন্তু  কোন  একটি  লোমও  অন্য কোন  বর্নের  হলে  অষ্টমী পুজা  শুরু  হওয়ার  পূর্বেই  মারা  যাবে  ছাগটি! এমন  অলৌকিক  ঘটনা  সাড়ে  চার'শ  বছরে  তিনবার  ঘটেছে! কিন্তু  অদ্ভুতভাবে  প্রতিবারই  সন্ধিপুজার  বলিদানে  বিঘ্ন ঘটেনি  শ্বেত  ছাগ  পাওয়া  গেছে  ওই সময়ের  মধ্যেই!
 
       এই  পুজোয়  আরও  একটি  অদ্ভুত  ঘটনা  ঘটে  প্রতিবছরই! নবমীর পূজা  শেষে  ছাগ  বলি  দেওয়ার  সময়  দামোদর  নদ সংলগ্ল  দুর্গামন্দিরের  সামনে  একটি  খুব  ছোট  পুষ্করিনী  আছে  যেটি ' দুর্গাগড়ে ' নামে  পরিচিত! সেই  গড়ে  থেকে  একটি  চ্যাং মাছ দুর্গা মন্ডপে  চলে  আসে! সেই  মাছটি  খড়ের  মধ্যে  পুড়িয়ে দশমীতে  মায়ের ভোগ  দেওয়া  হয়!
          চট্টেপাধ্যায়  পরিবারের  অনেকেই  যেমন  কর্মসূত্রে  বাইরে  থাকেন,! আবার অনেকেই  রানীগঞ্জ, দুর্গাপুর আসানসোলে  স্হায়ীভাবে  বাস  করছেন!  কিন্তু  পুজোর  চারটি  দিন  তাঁরা  সকলেই  তিরাট  গ্রামে  আনন্দ  উৎসবে  মেতে  ওঠেন!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours