ভবানীপ্রাসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার দুর্গাপুরঃ  পালকি  এসে  পৌঁছালো  রূপেন্দ্রনাথের  পিতৃপুরুষের  বাস্তুভিটার  সামনে! এখন  আর  সেটা  ভিটা  না  বলে  ধ্বংসস্তুপ  বলাই  সঙ্গত! রপেন্দ্রনাথ তাঁর  পূর্বপুরুষের বাস্তুভিটার ধ্বংসস্তুপের  সামনে   একদৃষ্টে তাকিয়ে  অন্য  জগতে  চলে  গেলেন!....এখানেই  তাঁর  বাবা, ঠাকুর্দা  এক  সময়  বাস  করেছেন...এই  ঘরের  উঠানেই  তিনি  প্রথম  হাঁটতে  শিখেছিলেন! শৈশব, কৈশোর  যৌবনের  বেশ  কিছুটা  সময়  এই  ঘরেই  কেটেছে!অনেক  স্মৃতি  ভীড়  করে  মনে  আছে!মনে  পড়ছে...সন্ধ্যা বেলায়  তুলসীতলায়  প্রদীপ  জ্বালিয়ে  শঙ্খ বাজিয়ে  মা  সন্ধ্যা  দিতেন....সম্বিত  ফিরল  জমিদার  তারাপ্রসন্নের  ডাকে...দেখলে  তো ঘরের  অবস্হা ?
> রূপেন্দ্র  অস্ফুট  স্বরে  উত্তর  দিল  " হ্যা"
> রূপেন্দ্র  লক্ষ্য করলেন, উত্তর  ও পূর্বদুয়ারী  ঘরদুখানি  মাটির  ঢিপিতে  পরিনত  হয়েছে, শুধু  দক্ষিনদুয়ারী  ঘরটি  এখনো  গৃহস্বামীর  অপেক্ষায়  দন্ডায়মান! তুলসীমঞ্চটি  ভেঙে  গেছে, কিন্তু  অদ্ভুতভাবে  তুলসী গাছটি  উঁকি  দিচ্ছে...মনে হচ্ছে  কেউ  যেন  প্রতিদিন  তুলসীতলায়  ফুল  জল  আর  সন্ধ্যাবেলায়  প্রদীপ  জ্বালিয়ে  সন্ধ্যারতি  করে! পিতা  সৌরীন্দ্রমোহন  রোপিত  আম  গাছটি  আজও  উন্নতশির, পত্রে  পত্রে  এসেছে  নব  মঞ্জরী!
>         রূপেন্দ্র  গৃহের চৌকাঠে  মাথা  ঠেকিয়ে  প্রনাম  করলেন! ব্রাক্ষনের  ভিটায়  প্রনাম  করলেন  মালতীও, তাঁদের  দেখে  কিছু  না  বুঝেও  দরজার  চৌকাঠে  প্রনাম  করল  হটীও!
>          রূপেন্দ্র  মালতীর  উদ্দেশ্যে  বললেন," এই  ঘর  মেরামত  করতে  চার  পাঁচদিন  লাগবে! এই কটা  দিন আপনি  হটীকে  নিয়ে  তারাদার  গৃহেই   থাকবেন!উনি  আমার  বড় ভাইয়ের  মতো! আর আমি  এখানে  থেকে  বাড়ীটা  মেরামত  করাবো "
>         ইতিমধ্যে  সেখানে   উপস্হিত  হয়েছে  রূপেন্দ্রর  আয়ুর্বেদ - ছাত্র  জীবন! যার  হাতে  রূপেন্দ্র  তাঁর  দাতব্য চিকিৎলয়ের  দ্বায়িত্ব তুলে  দিয়ে  সস্ত্রীক  তীর্থযাত্রা  করেছিলেন  ছয়  বছর  পূর্বে!
>      জীবন  রাস্তার  মাঝেই  গুরুদেবকে  সাষ্টাঙ্গে  প্রনাম  করে  তাঁর  কুশল  জিজ্ঞাসা  করলেন!তারপর  গৃহ- সংস্কারের  সমস্ত  দায়িত্ব  নিজের  কাঁধে  তুলে  নিলো!
>         রূপেন্দ্র  নিজ বাস্তু  ভিটাতে  থাকতে  চাওয়ায়  তারাপ্রসন্ন  আর  বাধা  দিলেন  না, শুধু  অনুরোধ  করলেন, তাঁর  বাড়ীতে  দুবেলা  আহারের  জন্য! কিন্তু  একাহারী  রূপেন্দ্র সবিনয়ে  প্রত্যাখান  করে  তাঁর  কাছে  তুলসীর  দেওয়া  কুসুমমঞ্জরীর  অলঙ্কারগুলি  গচ্ছিত রাখতে  দিয়ে জানালেন," এগুলি  তাঁর  পিতা  কুসুমমঞ্জরীর  বিয়েতে  যৌতুক  দিয়েছিলেন! ভবিষ্যতে  হটীর  বিবাহে  এগুলি  কাজে  লাগবে!"
> (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours