ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ তারাপ্রসন্ন অবাক হয়েছিল এই কারনে, তাঁর থেকে তাঁর ছেলে শুভাপ্রসন্নের ভবিষ্যত নিয়ে রূপেন্দ্রর ভাবনা বেশী!এই নিয়ে রূপেন্দ্রকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করায়, বাধ্য হয়ে রূপেন্দ্র তাঁর মূল উদ্দেশ্য যে 'নারী শিক্ষা' সেটি ব্যক্ত করেন!
তিনি তারাপ্রসন্নকে বোঝাতে চান, হিন্দু সমাজের পতনের দুটি কারন :- ১.সমাজপতিরা সমাজের অর্ধেক অর্থাৎ নারীদের অশিক্ষার অন্ধকারে, কুশিক্ষার বেড়াজালে,আর অন্ধ কুসংসারে বন্দিনী করে রাখতে চাইছে! এতে সমাজ পিছনের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে! আর ২. অস্পৃশ্যতার কারাগারে সমাজকে আবদ্ধ করে রাখতে চাওয়ায় হিন্দু সমাজ থেকে দলে দলে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে! যদিও চৈতন্যদেব অস্পৃশ্যতার বিরূদ্ধে লড়াই করেছিলেন! যবন হরিদাসকে বুকে স্হান দিয়ে মানবতার জয়ধ্বনী করেছিলেন! কিন্তু নারী শিক্ষা নিয়ে কেউই ভাবেন নি!
বর্ধমানভুক্তির সোঁয়াই গ্রামের রূপেন্দ্র সেই কাজটাই করেতে চান! সেই জন্যই তিনি স্বগ্রামে যে 'নারী শিক্ষা নিকেতন ' গড়ে তুলছেন তার নামকরন করলেন,'ব্রজসুন্দরী বিদ্যানিকেতন ' সেই মহিয়সী আলোকসামান্যা নারীর নামে যিনি সামাজের ভ্রকুটিকে উপেক্ষা করে স্বামীর সাথে দিলা করেছিলেন সারস্বত সাধনা!
তারাপ্রসন্ন শুধু একটা কথা বললেন, " নারীদের জন্য শিক্ষায়তন গড়লে সমাজ মেনে নেবে না, পঞ্চায়েত ক্ষমা করবে না!
রূপেন্দ্র জানালেন তবুও তিনি আর১ পিছিয়ে যাবেন না!
গ্রামের মেয়েদের মধ্যে রূপেন্দ্র নারী - পাঠশালা প্রচন্ড প্রভাব পড়ল! গ্রামের গৃহবধুরা অনেকেই লেখাপড়া শিখতে চায়!এমনকি সদ্যজাতের জননীও পাঠশালায় যেতে আগ্রহী! সমাজপতি, পঞ্চায়েতের মাথারা তো আর বসে থাকতে পারে না! একবগ্গা রূপেন্দ্রর জন্য সমাজ রসাতলে যেতে বসেছে! এবার কিছু একটা করতেই হবে!সমাজপতি নন্দ চাটুজ্যে ঘরে ঘরে গিয়ে যুক্তি নিচ্ছে কিভাবে এই অনাচার রোধ করা যায়! মেয়েরা বিদ্যেধরী হলে সমাজ রসাতলে যাবে! যুবকদের বোঝানো শুরু হ'ল! নন্দ চাটুজ্যে শিরোমনি মশাই গোটা গ্রামকে রূপেন্দ্রর বিরূদ্ধে এককাট্টা করেছেন শুধু মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন বাচস্পতি মশাই ও ঘোষালবাবু রূপেন্দ্রকে সমর্থন করছেন!
নন্দ চাটুজ্যের নেতৃত্বে শুরু হলো রুপেন্দ্রর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র!
(চলবে)
**আমার কৈফিয়ৎ :-আমার অনেক শুভানুধ্যায়ী এবং সাহিত্যিক গবেষক বন্ধু নানা প্রশ্ন করেছেন! দুর্গাপুরের নামী সাহিত্যিক ও সাহিত্য গবেষক তারাপদ হাজরা আমাকে প্রশ্ন করেছেন 'তথ্য কই ?' আসলে ' হটী বিদ্যালঙ্কারকে ' নিয়ে সেভাবে গবেষনা হয়নি ! সামান্য ছোট একটা চটি বই আর বিভিন্ন সময়ে স্হানীয় লেখকদের লেখা থেকে আর স্হানীয় মানুষের কাছে তথ্য সংগ্রহ করে 'হটী ' কে নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি! 'হটী' আমাদের গর্ব তিনিই ভারতের নারী শিক্ষার পথিকৃৎ প্রথম নারী ' বিদ্যালঙ্কারে ' ভূষিতা! আমরা ধন্য তিনি বর্ধমানের সোঁয়াই গ্রামের বাসিন্দা! আমিও অতি সৌভাগ্যবান আমার বাড়ী থেকে সোঁয়াই গ্রামের দুরত্ব মাত্র ১৪ কিঃমিঃ
Post A Comment:
0 comments so far,add yours