প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
তোমার
মনের মণিকোঠায় নবমেঘের নধর দেহ। হ্যাঁ, তুমিই বলেছিলে সিঁথিতে সিঁদুরের
অরুণরেখা৷ মূল্যবানের শব্দরাজির বুকে আত্মীয় গুণে ভূষণ ভরা প্ৰশস্তি।
চিত্তের আকাশে যে ভেসে আসতো সেই শব্দের পাত্র৷ প্রশান্তির বুক ছুঁয়ে
পাঠকের মনের ধন্দ দূর হয়। প্রগতিশীল গোধূলি আলোয় এমন অনেক চিরকুটই আসে,
তবু যে, বাঁধি শব্দ বন্ধনে।
যখন
শব্দসমূহ সযত্নে মনের আকাশে গাঁথা হয় তখন সেই শব্দের সাথে একাত্ম হওয়াটাই
স্বাভাবিক। আর গুণী আত্মীয় লেখক শ্রদ্ধেয় সুকুমার হালদার সেই চিঠিগুলি
আমাদের ক্রমান্বয়ে সাহিত্যের আকাশে সুসজ্জিত করে এঁকেছেন। পত্র তো
কেবলমাত্র শব্দ সংযোজনী নয়, এ এক অনন্য দাতা ও গ্রহিতা মধুর কোলাজ মনে হয়৷
সময়টা
১৮৮৮ - ১৯৩৬। শ্রদ্ধেয় সুকুমার তখন কবি নৈকট্য যাপন করছেন।
ব্রাহ্মপরিমণ্ডলে অতি আদ্রিত রবীন্দ্রনাথের খ্যাতি তখন অপরিসীম। ১৯১৩
সালের সম্মান তখন তাঁর হাতে। হার্দিক স্নেহবন্ধন ছুঁয়ে আছে গভীর আড়ম্বর।
১৮৮৮ সালের ২৭ শে জুলাই - এর পত্রিকায় বর্ণিত মিষ্টিমুখ এক নিবিড়
বন্ধুত্বপূর্ণ সমভাব দেয়। পত্র বলছে তাঁর কথায় দেনা - পাওনা স্মরণশক্তির
সমান নয়। পারিবারিক সূত্র ধরে আছেন অন্তঃসত্ত্বা মৃণালিনী দেবী, শিশুকন্য
মাধুরী, স্বর্ণকুমারী দেবী, ইন্দিরা দেবী, সুরেন্দ্রনাথ ও সুরলা৷ তাই তো
তাঁরই কথায়..
" আমরা দুটিতে, এই নদী তটে সুমধুর স্বরে, সোহাগি অধরে / মনের হরষে বে- ড়া - বো। "
দ্বিতীয়
পত্রখানি তথ্য দেয় যে, কবি ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ সেই সময় বাংলার আইনসভার সভ্য পদপ্রার্থী কাশিমবাজারের
মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর রবীন্দ্রনাথের সহায়তার প্রয়োজন ছিল।
তখন
শান্তিনিকেতনে জ্যোতির্ময়ের অভিনয় আর পরিতোষের গান আশ্রমকর্তার মনোযোগ
আকর্ষণ করে। শ্রদ্ধেয় সুকুমার কবির ভীষণ প্রিয় আর তাঁর শারীরিক অসুস্থতা
কবিকে আঘাত করতো বহুবার।
এখানেও অপ্রকাশিত পত্রের
সাথে সময় উপযোগী সামাজিক চিত্র পাওয়া যায়। ১৮৯০ সালে কবির সাথে কলাভবনের
শিল্পী অসিতকুমার হালদারের পরিচিতি হয়৷
কবির
লেখা পঞ্চম পত্র কবির করুণ অবস্থা বর্ণনা করে। কিন্তু কোনোটাই তো নিজের
জন্য নয়৷ সহজ বহন যখন সামর্থ্যের বাইরে, তখনই কবি বললেন, তিনি যে ভিক্ষা
করতে পারেন না , তবু ফোঁটা বৃষ্টির জলকে ধরে রাখার জন্য ভূগোলের গল্প। ১৯২০
সালে কবি তখন রাঁচিগৃহে পৌঁছালেন। শিল্পী শ্রদ্ধেয় অসিতের বাবা,
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন৷ বাউল অঙ্গে এই নদীচরিতের মতোই তো কবি, তাই
অতিপুষ্টির নিষ্ফলতা অনেকক্ষেত্রেই সাকার।। পদমর্যাদার চেয়ে চিত্তমর্যাদার
আদর বেশী৷ আঙুলে উষ্ণতা, তবু শুষছে স্বর্গীয়। পদ্মার বোঁটায়, জলচরবৃত্তি
করেই স্থির মনে দেহচিন্তা৷
অতি
জীর্ণ খোলস ছুঁয়ে থাকে প্রাণ। সকল কর্মে নিষ্কৃতিই তো প্রচেষ্টা৷
আবর্জ্জনার সাথে বিস্মৃতলোকে অন্তর্ধান করচা৷ তবু মমতা কোনোভাবেই ত্যাগ নয়।
জীবনের নিয়মে দিনাতিপাত, আর সুকুমার পরিচর্যায় সজীব মনন৷
ঘুরপাকের গালিচায় এ যেন এক কাজলদাগ৷ বাঁশিতে ফোঁটায় ফোঁটায় প্রান্তিক জনপদ, তবু শব্দ বাঁধা ঘর, আমার বিশ্বাস।
অসাধারণ লেখনী শৈলী । মন ছুঁয়ে গেল তোমার পত্রাবলি পড়ে। আর আরো আরো লেখা উপহার চাই প্রিয়াঙ্কা।"পত্র তো কেবলমাত্র শব্দ সংযোজনী নয়, এ এক অনন্য দাতা ও গ্রহিতা মধুর কোলাজ মনে হয়৷"- খুব সুন্দর লাইন।
ReplyDelete