জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

প্রথম সভ্যতার দেশগুলির একটি হিসেবে ভারতের গনতান্ত্রিক বিপ্লবের উত্তরনে সব সময় দু'দিক থেকে দুটি ভাবগত চাপ  থাকবেই। একপ্রান্তে, যে দেশে দাসত্ব থেকে পুজিততন্ত্র পর্য্যন্ত এবং এমন কি সাম্যের দোরগোড়া পর্য্যন্ত, ইতিহাসের গতিমুখে প্রগতিতেও দাসত্বের প্রভাব কাজ করেছে বরাবর।
 
পরিনামে স্বাধীনতা আন্দোলে, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা লাতিন আমেরিকা দেশ গুলিতে যেমব স্বাধীনতা আন্দোলনও  যখন একপ্রান্তে, রাষ্ট্রশক্তির প্রতি অতি  আনুগত্য এবং অন্যপ্রান্তে 'বারুদের গন্ধের দুই ধারা বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই 
**একপ্রান্তে কংগ্রেস দলটিকে  আনুগত্য আধারিত স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে প্রকৃত গনতান্ত্রিক অভিমুখে ফিরিয়ে এনে, দলের বিপ্লবী রুপান্তরনের চেষ্টা করতে হয়েছে।
** অন্যপ্রান্তে, বিকট সামন্তিক ব্রাহ্মন্যবাদি নির্য্যাতন এবং বৃটিশ বিরোধীতার যে ঝোক ক্রমাগত ভারতীয়, বিশেষ করে গোলাবারুদের মননে ঢলে পরছিলো, সেটাকে সাম্যবাদী আন্দোলনে টেনে এনে, বন্দুকের নলা থেকেও, যারা বন্দুক চালাবে, তাদের উপরে জোর দিয়ে, সাম্যবাদী শ্রোত নির্মান করতে হয়েছিলো। কম। প্রমোদ দাসগুপ্ত, গনেশ ঘোষ, সতিশ পাকরাসিদের সবাই এই পথে সাম্যবাদী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এই প্রথায়। 
তবু এদেশে ব্রাহ্মন্যবাদের কারনেই রক্তের মধ্যেই যে কারনে দাসত্বের মনোভাব থেকে গেছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর বাদেও এর প্রভাব সব দলে এবং এমন কী, আমি নিশ্চিত হয়েছি,  শ্রমিক  নেতাদের অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। অন্যদিকে কংগ্রেস দলের মধ্যেও, সব ঝোক কাজ করেছে। বোধ হয়, তেমনটি না হলে সুভাষ চন্ত্র বসুর, জার্মানী যাওয়া আটকেই যেতো।   

যাইহোক, যে দেশ পাচ হাজার বছর ধরে দাসত্বের পরতে পরতে যে অনুভূতি জগত গড়ে উঠেছে, সেটা চুক্তিকরে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে মুছে যাওয়ার যে কথা নয়, 
------ তা দিল্লীতে শ্রীমোদি এবং কোলকাতায়, শ্রীমতি মমতার শাসন কালেই দেখাগেলো, এসব রোগ মাটি ফুড়ে পাতালপুরি থেকে উঠে আসে, সেটাই নতুন করে বোঝা গেলো। আর দাসত্বের মনন যে কিভাবে সব দল এবং শ্রমিকদের অনভুতি জগতকে অপবিত্র করে, সেটাও দেখা গেলো।
শ্রীমোদির শাসন এবং তার আগে কংগ্রেস যে কীভাবে, নিম্ন বর্ণ এবং মেয়েদের যে কীভাবে দাস হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে, পাহাড় জংগল থেকে যেভাবে আদিবাসিদের রুটী-রুজী থেকে উৎখাত করা হচ্ছে
------ তার  বিপরীতে শ্রমিক প্রতিরোধের পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে, অনেক সময় মধ্যবিত্ত থেকে আসা শ্রমিকেরা এই দাসত্বকে উপভোগ করেছেন। কয়েকদিন পূর্বে রাজস্থানের এক ছোট সহরের রাস্তায় একটি তরুনীক বলাৎকারের পর যে লোমহর্ষক  বিবরন মিডিয়াতে এসেছেম তার পরেও সামাজিক নিরবতা, বিপর্য্যয়েরই ইংগিত।

এখন ভারতীয় সমাজে দাসত্বের নিঃস্পেষন যে মহামারির  চেহারা নেবে, তা আজকের ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা কল্পনাও করতে পারছেন না। অন্যদিকে এই সামাজিক নিরপেক্ষতা, দলিতদেরকে যে সেই ফ্যাসিস্তদের দিকেই ঠেলবে, তার ইংগিত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে। 
------ কাজেই, এমনটিও মানতে হবে, যখন দাসত্বের এই বজ্রাটুনী যেমন বাড়তে  থাকবে,  তেমন ভাবে গোলাবারুদের গন্ধ  ছড়িয়ে পরতে থাকবে।

আজকালকার ছেলে ময়েদের কোন ধারনা নেই, যখন ব্রাহ্মন্যবাদ, জমিদারী মানষিকতার সাথে মিশে গিয়ে কী ঘটতে পারে, এবং সেখানে শ্রমিক নিরপেক্ষতা, কি উচ্চগ্রামে ব্যক্তিহত্যার রাজনীতিকে উস্কে দিতে পারে। 
এই সুত্রেই, আমাদের ছোটবেলায় শোনা একটা গল্পকে যদি বলে দি, বিষয়টি বোঝা যাবেঃ
------ এক জোতদার, গরীব পারায় গিয়ে লোক জড় করে, এক গরীকে বেধরক জুতো পেটা করেছিলো। পেটাতে পেটাতে, বাবু মহাশয়ের জুতো ছিড়ে যায়। জুতো ছিড়ে গেলে, বাবু তার 'টারগেট'কে মুক্ত করে দেন। 
------  এই পর্য্যন্ত গল্পটিতে নতুন কিছু ছিলো না। কিন্তু এবারে যা ঘটলো, সেটাই বিস্ময়কর এবং সেটাই ঘটতে শুরু করেছে, আজ দেশের প্রান্তে প্রান্তে, অঞ্চলে অঞ্চলে।
------- জুতো পেটা খাওয়া গরীব মনুষটি বল্লে, "আমার বাবুর মতো বাবু হয় না, নতুন জুতোটা ছিড়ে গেছে, দাম চায় নাই।

এতোবড় গল্প একটা কারনেই। ভারতীয় সমাজে বৃটিশ কালের শেষ দিকটা ফিরে আসার সব চিহ্নগুলি যখন দগদগে ঘায়ের মত ফুটে বেরুচ্ছে।
মাঝখানের উদারবাদীরা যখন ক্রমে ধরাশায়ী হচ্ছে, তখন
লেনিনবাদী রীতিনীতি এবং সাম্যবাদী দলের কর্মসূচী ও কর্মনীতিগুলিকে
------- আবার নতুন করে সামনে এনে, অতিদ্রুততার সাথে নিরক্ষন করে নেওয়া প্রয়োজন হবে। এখন তো ফ্যাসিস্ত এবং সাম্যের মাঝখানের সব ফাকা যায়গাটি 
------- শ্রমিক শ্রেনীর হাতে না আসলে নিশ্চিত ফ্যাসিস্তদের হাতে যাবে। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours