ইন্দ্রাণী সেন, সাংবাদিক, বাঁকুড়া:
'অরন্ধন' আভিধানিক অর্থ হল অ রন্ধন অর্থাৎ যেদিন রান্না করা হয় না বা রান্না নিষেধ। তবে এই অরন্ধন যখন উৎসবের আকার নিয়ে হুজুগে বাঙালির রান্নাঘরে ঢুকে পরে তখন তা আর বিনা রান্না বা রান্না নিষেধ কোন কিছুই আর থাকে না। ভাদ্র সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর আগেরদিন পারিবারিক কল্যানার্থে গৃহিনীরা শিবের মানস পুত্রী দেবী মনসার উদ্দেশ্য নানাবিধ পদ রান্না করে নিবেদন করেন। রান্না পুজোর দিন সাধারণত উনুন এর পুজো হয়। সারাবছর আমরা যে উনুনে রান্না করি তার উপাসনা করা হয় এই পুজোতে অন্যদিকে উনুন এর গর্ত হলো মা মনসার প্রতীক। তাই দেবী মনসার সৌজন্যই এই উনুন পুজো করা হয়। আর বৈদিক রীতি অনুযায়ী এই বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই সমস্ত বৈদিক রীতিনীতি আরম্ভ হয়। চলে চৈত্র মাসের গাজনের আগে পর্যন্ত। আবার তখন থেকে বিশ্বকর্মা পুজোর আগে পর্যন্ত চলে অবৈদিক রীতি।
দেবী মনসা বাংলার লৌকিক দেব দেবীর মধ্যে অন্যতম । ভরা বর্ষা কাটিয়ে যখন সূর্যের আলো ঝলমলে রোদ ভূমি স্পর্শ করে। শীত শুরুর পূর্বে শীত ঘুমের আগেই গ্রামাঞ্চলে সাপের আনাগোনা শুরু হয়। চাষ করতে গিয়ে অনেক মানুষের জীবন হানিও ঘটে। তাই দেবী মনসাকে সন্তুষ্ট রাখতে সংসার জীবনে দেবীর কৃপালাডের আশায় আগের দিনের রান্না করা পান্তা ভাত, সজনে শাক, ভাজাভুজি, ওলের বড়া, মাছের বিভিন্ন ধরনের পদ সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। ঐদিন বাড়িতে নতুন টাটকা রান্নার নিয়ম নেই।
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব রান্নাপুজো বলে পালিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই পুজোর জন্য দৈনন্দিন ব্যবহারের উনুনে গোবর জল দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে মনসা পাতা দিয়ে সাজিয়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে পুজো হয়। তবে গৃহিণী গৌরিদেবী বলেন, "ঠাকুরের রান্নার পাশাপাশি ভাদ্রমাসে কড়া রোদের কারনে পিত্ত ক্ষরণ বেশী হয়। শরীর গরম হয়ে যায়। গ্রামের মানুষ তাই এই রোদ থেকে বাঁচতে এই ধরনের খাবার খান।" এক কথায় বলতে গেলে ভোজনরসিক বাঙালি রান্না পুজোয় মেতে ওঠেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours