সুকন্যা পাল, সাংবাদিক, কলকাতা: 

রাজ্যপাট নাই বা থাকল কিন্তু সেকালের ঠাটবাঁট বজায় রাখতে খামতি নেই। অন্তত সিংহবাহিনী দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে। একেবারে দুর্গাপুর শহর লাগোয়া বাঁকুড়ার মালিয়ারার বড় রাজবাড়িতে। তাই এই পুজোকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই জমজমাট উন্মাদনা দেখা দেয় স্থানীয় এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবালবৃদ্ধার হৃদয়ে।
কথিত আছে, অষ্টধাতুর তৈরি এই দুর্গাপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা পায় আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে। ইতিহাসের পাতায় রাজা মান সিংহের নাম অবশ্যই স্মরনীয়। সেই মান সিংহের আমলে মালিয়াড়ায় স্থানীয় প্রায় পঞ্চান্নটি মৌজার এলাকা নিয়ে নতুন রাজ্যত্ব স্থাপন করেন তদানীন্তন রাজা মনিরাম সিংহদুর্য। এই মনিরামবাবুই অষ্টধাতু প্রতিমার প্রতিষ্ঠাতা বলে এলাকার জনমানসের বিশ্বাস।
মালিয়াড়ার বড় রাজবাড়ির এই পুজোর ঐতিহ্যই আলাদা। মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে মহাধুমধামের সঙ্গে শুরু হয় এখানকার সিংহবাহিনী দুর্গাপুজো। দশমীর সকালে সাঙ্গ হয় এই দুর্গোৎসব। এই পুজোর বৈশিষ্ঠ হল, পুজোতে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয় যা প্রতিপদ থেকে নবমীর দিন পর্যন্ত একটানা জ্বলতে থাকে। একই ভাবে তিলতেলের প্রদীপ টানা জ্বালিয়ে রাখা হয় সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত হোমের আয়োজন করা হয়ে থাকে শালকাঠ দিয়ে। এই হোমও চলে একটানা।
শুধুই কি এটাই? এই রাজকীয় পুজোর তিনটি বড় থেকে ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের পুরোপুরি রূপোর নির্মিত সিংহাসনের মধ্যিখানে দেবী অধিষ্ঠাত্রী রয়েছেন। প্রতিমার আবরণে শোভা পায় অজস্র স্বর্ণালঙ্কার। দুর্গাপুজোর অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের পুর্বে এই বিশালাকার রাজবাড়িতে একটি পিতলের ও অন্যটি লোহার তৈরি কামান থেকে তোপধ্বনি ফাটানো হয়। এই শব্দ শোনার পর এই পুজোর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় অন্য বহু পুজোর অষ্টমীর উপাচার আরম্ভ হয়। এই পরম্পরা আজও অটুট রয়েছে। এছাড়া অষ্টমীতে কুমারী পুজোর আয়োজনও করা হয় সেই শুরু থেকে। তবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ির অভ্যন্তরে স্থাপন করা বিরাট নাটমঞ্চে আগে বাইজী নাচের ব্যবস্থা রাখা হত। এলাহাবাদ, লক্ষৌ, কানপুর ও বেনারস থেকে বাইজীরা এসে এখানে নাচ করে যেতেন। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে এই প্রথা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এই পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই পরিবারের বর্তমান পুরুষ হিমাদ্রী চন্দ্রাদুর্য বলেন, ‘এই পুজো মালিয়াড়ার বড় রাজাদের পুজো বলে খ্যাত। তাই পুজোর আয়োজনে ঐতিহ্যের ঘাটতি রাখা হয় না। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখানকার পুজো দেখতে আসেন। আমরা শরিকেরাই এই পুজো পরিচালনা করে চলেছি।’



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours