ভবানী প্রসাদ ভট্টাচার্য ফিচার রাইটার দুর্গাপুরঃ রূপেন্দ্রর ঘরখনি বাসপেযোগী করে তোলার পর সত্যনারায়নের পুজো দিয়ে নতুন করে গৃহপ্রবেশ করলেন রূপেন্দ্র!এরপর তাঁর যে উদ্দেশ্যে গ্রামে স্বকন্যা প্রত্যাবর্তন সেই কাজটি শুরু করলেন!স্হাপন করলেন " স্ত্রী শিক্ষায়তন '!
সেই সময় নারী শিক্ষায়তনে চারটি পর্যায়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্হা ছিল!প্রথম পাঠ সূর্য যখন মধ্যগগনে !রোগী দেখে ফিরে রূপেন্দ্র শিক্ষাদান করতেন বয়জ্যেষ্ঠা তিন ছাত্রীকে গিরিবালা, পুঁটুরানী ও তারাসুন্দরীকে! তাঁদের শিক্ষা দিতেন বাংলায়! রূপেন্দ্র শোনাতেন উপনিষদের কথা, দিলা, মৈত্রেয়ী,মদলসার কাহিনী! নচিকেতা, সত্যকাম , উদ্দালকের উপাখ্যান! এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সারকথা!
দ্বিতীয় পাঠ মধ্যাহ্নভোজের পর , এখানেও তিনজন ছাত্রী,! মালতী,শোভারানী ও তারাসুন্দরী! এঁদের বাংলার সাথে শেখানো হ'তো সংস্কৃত এবং গার্হস্হ্যধর্মের নীতিকথা,শিশুপালন আর্তের সেবা,ও ধর্মকথা!
এরপর তৃতীয় পাঠের আসরে দু'জন ছাত্রী রূপমঞ্জরী ও সুজাতা এবং একজন ছাত্র শুভপ্রসন্ন! ছাত্রী দুজন শিখত বাংলা আর শুভপ্রসন্ন বাংলার সাথে সংস্কৃত কারন ছাত্রী দুজনের থেকে সে চার বছরের বড় ছিল!
পড়ন্ত বেলায় শেষ পাঠের আসরে একজন ছাত্রী মেহরুউন্নিসা, মৌলবী সাহেবের বোন ! তারপর হটী ছাড়া আর কেউই মেহেরুন্নিউন্নিসার সহপাঠী হতে রাজী না হওয়ায় রূপেন্দ্র মৌলবী সাহেবকে পাঠের আসরে ডেকে নিলেন! সাথে মেহেরুউন্নিসার দাদাকেও!
তিন চার মাসেই মেহের আর তার দাদা বাংলা হরফ চিনে নিল আয়ত্ব করে ফেলল পাঠও! মেহের সুর করে রামায়ন পড়তো, চোখবন্ধ করে শুনতেন মৌলবী সাহেব! রূপেন্দ্র অপ্রচলিত শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দিতেন, অলঙ্কারের ব্যখ্যা করে দিতেন! ক্রমে শুভ প্রসন্ন সেই আসরে যোগ দিল! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই বিধর্মী যবন কন্যার রামায়ন পাঠের আসরে যোগ দিল মালতী ও গিরিবালা!
রামায়ন পাঠের শেষে আল্লাকে নমস্কার করে পুঁথি বন্ধ করে, পদ্মদিঘীর পাড়ে ভাইবোন নামাজটা সেরে নিতেন! গিরি বালা দুটি কলাপাতায় সাজিয়ে দিতেন দেবতার প্রসাদ! ফল বাতাসা গুড়ের পাটালি! আজ থেকে আড়াই'শ বছর পূর্বে রূপেন্দ্র উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতীর এক উজ্বল নিদর্শন গড়ে উঠেছিল!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours