মুজতবা আল মামুন, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
ফের বোমা ফাটালেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। সম্প্রতি তিনি বলেন, দেশে একটা অপপ্রচার চলছে, মুসলিমরা নাকি সন্ত্রাসবাদী । পাকিস্তানের গুপ্তচর। তবে এ পর্যন্ত আমাদের দেশ থেকে যেসব পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-র চর ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই হিন্দু । তার মধ্যে খোদ সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রেই তা প্রকাশিত হয়েছে।
দেশবাসী জানে, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের পুঁজি হল মুসলিমবিদ্বেষ। ভারতীয় মুসলিমদের চাপে রাখতে, তারা প্রায়শই নানারকম বিতর্কীত মন্তব্য করে থাকেন। যার কোনও ঐতিহাসিক বা সামাজিক গুরুত্ব নেই। সবটাই মনগড়া কথা। সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বলতে থাকেন। যেমন, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদি। মুসলিম মানেই পাকিস্তানের চর। মুসলিমরা ভারতের খায়, পাকিস্তানের গুণ গায়। আর কোনও বিদ্বেষমূলক কথার প্রতিবাদ করলেই, মুসলিমদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হুমকি দেওয়া হয়। মুসলিমদের দেশভক্তি নিয়ে কটাক্ষ করা হয়।
বিজেপি-আরএসএসের এই দাবিকে এবার পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং । সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন , ভারতে মুসলিমদের চেয়ে বেশি অ-মুসলিমরা আইএসআই-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। গত শনিবার মধ্যপ্রদেশের ভিন্ড শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় দিগ্বিজয় এই কথা বলেন।
প্রায়শই সংবাদপত্রে দেখা যায়, পাকিস্তানের হাতে দেশের গোপন তথ্য দিয়ে ধরা পড়ছে কেউ না কেউ। তারা বেশিরভাগই আমাদের জওয়ান, যারা শত্রুর হাত থেকে দেশরক্ষার শপথ নিয়ে জওয়ানের পোশাক চাপিয়েছেন গায়ে। কেউ বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চাকুরে। অর্থের বিনিময়ে, শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের গোপন তথ্য বিদেশের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ ধরা পড়ছেন। হয়তো এমন অনেকে আছেন, যারা দেশের সঙ্গে গদ্দারি করছেন, কিন্তু এখনও ধরা পড়েন নি। এসবের প্রেক্ষিতে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং এ কথাগুলো বলেন। বলা যায়, তিনি সাহসের সঙ্গে সত্যি কথাটাই বলেছেন। সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পিত প্রচারের বেলুনে পিন ফুটিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে কাজ করছে বিজেপি এবং বজরং দলই। বিজেপি আইএসআই-এর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। আরও একটা কথা আপনাদের বলে দিই। আবার তিনি পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ভারতে মুসলিমদের চেয়ে বেশি আইএসআই-এর হয়ে কাজ করছে অ-মুসলিমরা।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের সাতনায় পাকিস্তান থেকে পরিচালিত সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা।ধৃতদের মধ্যে একজন, বলবীর সিং, বজরং দলের প্রাক্তন কর্মী। এর আগে ২০১৭ সালেও একই ধরনের অভিযোগে গ্রেফতার হয় বলবীর, কিন্তু জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় সে। সাতনার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই দিগ্বিজয় শনিবার তাঁর এই মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েন নিশান্ত আগরওয়াল। তিনি প্রতিরক্ষা দপ্তরের অফিসার। আমাদের ব্রম্ভস্ মিশাইল সম্পর্কীত গোপন তথ্য তুলে দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে। তার সঙ্গে গ্রেফতার হন সন্দীপ শর্মা, ধ্রুব সাক্সেনা। তারাও দেশরক্ষার শপথ নিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য পাকিস্তানের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন সুখবিন্দার সিং সিধু। ফরিদাকোট সেনা আবাস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হরিয়ানার সেনা জওয়ান রবিন্দর পাক সুন্দরীর ফাঁদে পড়ে বহু গোপন তথ্য পাচার করেন পাকিস্তানের কাছে। তিনিও গ্রেফতার হয়েছেন। এটাকে হানি ট্র্যাপ বলা হচ্ছে। পাক সেনাকর্তারা সুন্দরী মেয়েদের নামে ফেক আই ডি খুলে সোস্যাল মিডিয়ায় থাকা ভারতীয় জওয়ানদের কাছে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। লাস্যে ভোলায়। তারপর কোনও দুর্বল মুহূর্তে আমাদের গোপন তথ্য জেনে নেন। আমাদের সেনাকর্তাদের ধারণা, কমপক্ষে পঞ্চাশ জন জওয়ান সেই ট্র্যাপে ফেঁসে আছেন। ধরা পড়েছেন কয়েকজন, ধরা পড়ছেন না আরও কতজন, কে জানে! এসব দেখেশুনে সেনাকর্তারা জওয়ানদের সোস্যাল মিডিয়ায় আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য হয়েছেন।
সুখের কথা, সঙ্ঘ পরিবারের এই নিরবচ্ছিন্ন গোয়েবলসীয় প্রচারের বিরুদ্ধে কেউ তেমন মুখ খুলছেন না। সেখানে দাঁড়িয়ে দিগ্বিজয় সিং বাপের বেটা, সত্যি কথাটা সাহসের সঙ্গে বলেছেন। সবাই যদি এই বলাটা বলতে পারতেন, সঙ্ঘ পরিবার গুটিয়ে যেত।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours