মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ: 

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে (সব পুঁজিবাদী সমাজই পুরুষতান্ত্রিক) নারীরা এমনতি অবহেলা আর বঞ্চনার ষোলোআনা উপভোগ ,পর্নো ছবির ক্ষেত্রেও তারা প্রধানভাবে শিকার হচ্ছে। এরা পদদলিত করেছে সমাজের চিরকালের কিছু প্রয়োজনীয় প্রথা। কিন্তু পুঁজি কোনো প্রথা রাখতে চায় না। পুঁজি চায় তার মুনাফা অটুট রাখার জন্য নিজের গলায় প্রয়োজনে ছুরি চালাতে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় সেই ছুরিটি পুঁজি সমাজের বুকে, মানুষের বুকে চালিয়েছে। গড়ে তুলেছে কোটি কোটি টাকার পর্নো ছবির বাজার। শুধু পর্নো ছবির বাজারই নয়, বাজারের সঙ্গে সঙ্গে পর্নো ছবির করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। বাংলাদেশে টিভিতে সংবাদ উপস্থাপন, এবং অনুষ্ঠান উপস্থাপন এই কাজটিগুলোকে অত্যন্ত সৃজনশীল,মার্জিত এবং পারিবারিক ভাবে স্বীকৃত একটি মিডিয়া ওয়ার্ক ভাবা হয় । অনেক পরিবারের ছোটদের বড় হয়ে টিভিতে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য উৎসাহও করা হয়। তবে এর অন্তরালের খবর কয়জন রাখে? আশ্চর্য হওয়ার মতো বিষয় সংবাদ পাঠিকাদের পোশাক । আস্তে আস্তে এ কোন কালচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশে? আগে জানতাম এমন ড্রেস তারা পরে, যারা দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত, আকর্ষনীয় পণ্য হিসেবে ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা, যাতে করে চড়া মূল্য পাওয়া যায়। কিন্তু এখন দেখছি টিভিতে নিউজ পাঠকরাও এমন পোশাক পরা শুরু করেছে। 
আগে জানতাম এইগুলো সমাজের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু এখন দেখছি সমাজে এইগুলো সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে। এটা কেমন পরিবর্তন দেশে? এমন সংস্কৃতি তো আমাদের দেশে কখনো ছিলো না। মায়ের কাছে শুনেছি ঘোমটা দিয়ে কাপড় পরে চলতো মেয়েরা, আর এখন সবার সামনে জনসম্মুখে হাতা-কাটা ব্লাউজ, বুক ও দেহের ভাজ সবই দেখিয়ে চলছে। আমাকে মাফ করবেন, আমি জানিনা এই সংবাদ পাঠকরা এমন দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত কিনা, তবে স্বাভাবিক ভাবেই আমার সন্দেহ জাগছে কারণ গণ মিডিয়ায়, নাটকে, মুভিতে এমন শরীর প্রদর্শন কারীরা কোটিপতি ব্যবসায়ীদের নজর পেতেই এমন ভাবে শরীর প্রদর্শন করে থাকে। এখন তো পরিবারের সবাইকে মিলে একসাথে টিভির সামনে নিউজ দেখতে গেলেও লজ্জা পেতে হবে। 
যেখানে উন্নত বিশ্বগুলো যেমন, কানাডাতে, আমেরিকাতে সংবাদ পাঠিকাদের শরীর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন নয়, সংবাদ পরিবেশনই থাকে মূল লক্ষ্য। সেখানে বাংলাদেশে অনেক ভালো সংবাদ উপস্থাপনের যোগ্যতা পাশাপাশি দৃষ্টি নন্দন হলেও তাকে কাজে নেয়া হয়না। এর কারণ কি ? এর অভ্যন্তরের কারণ হিসেবে জানা যায় , চ্যনেলের মালিক হতে শুরু করে সংবাদ প্রযোজক পর্যন্ত অনেককে খুশি করতে না পারলে সংবাদ পাঠিকা হওয়া যায় না । অনেকে শুরুতেই এই সমস্ত ফেস করে শুধু মাত্র কাজটাকে পাওয়ার জন্যই সব মেনে কাজে আসে । আবার অনেকে কাজ শুরুর পর এই সমস্ত কিছু ফেস করে মেনে নিতে না পেরে অনেক দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্বেও ঝরে পরে । নাটকে সিনেমায় যা করছে তা না হয় এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু সংবাদটা তো পরিবারের সবাই মিলে দেখে, এখানে তো এমন হওয়া উচিত নয়। এ যেন মানিকের সেই অমর পঙ্ক্তির মতো,  ছোটলোকের মধ্যে ছোটলোক।
এখানে নারীকে বাধ্য করা হচ্ছে যৌনমিলনে, নয়তো কাজ পাওয়া যাবে না । তারপরও তারা ক্ষান্ত নয় , বারবার পাবার আশায় গোপনে কোনো ক্যামেরায় ধারণ করছে ভিডিওটি। আবার নারী কর্তৃক প্রতারণার সংখ্যাও রয়েছে। গিভ এন্ড টেকের সিন্ডিকেট, নারী প্রতারকসহ সমাজে সংগঠিত পুরুষতান্ত্রিকবোধের নানা অপরাধ এসব জায়গায় যেনো বড়ো বিস্তার লাভ করেছে।
উপস্থাপনার মতো কাজ করতে এসেও ফেঁসে যেতে হচ্ছে অনেককে। উপস্থাপনার ইচ্ছেটাকে পুঁজি করে সুন্দরী নারীদের বাধ্য করানো হচ্ছে নানা রকম অনৈতিক কাজ করাতে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা শুধু পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছে না, উপরন্তু অনেক সময় পতিতাবৃত্তিসহ পুরুষের উৎকট ভোগের উপকরণের বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। সমাজের বিত্ত ও ক্ষমতাবানেরা এই সুযোগে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মাঝে মধ্যে পাচার হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এসব দেশ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা উচ্চবিত্তের কথিত উন্নত সংস্কৃতি সম্পূর্ণ।
যারা সৃজনশীল ভাবে কাজ করতে চাই তারা কি পাবেনা কখনো সুযোগ? 
কিভাবে এর প্রতিকার হবে ? কি উপায়ে উপস্থাপনা ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুশ?



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours