জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

সে রকম সব রাজনীতিই অত্যাচারী হতে বাধ্য, যদি তার অভিমুখে একটা ভাবাদর্শ না থাকে এবং সেই ভাবাদর্শ যদি ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সাথে আত্মিকভাবে মিশে যাওয়ার সুযোগ না পায়।

এই আত্মীকতা মেকী কিংবা স্বল্প স্থায়ী  আবেগ হতে পারে,  সে বিষয়ে  পড়ে আসছি। কিন্তু,এক আর একে  দুইতে  মিলিয়ে দিতে পারলেই, কেউ একটা ভাবাদর্শ পেয়ে গেছেন বলে  মানা যাবে না। তাই যদি হোত তবে, মার্ক্সসবাদের সর্বোত্তম শত্রু হিসেবে যেনারা সর্বোচ্চ বিশ্ব মর্য্যাদা পেয়েছেন, তাদেরকেই সর্বোত্তম মার্ক্সবাদীর তকমাও দেওয়া যেতে পারতো।  

মার্ক্সবাদকে অচল করতে কিংবা লেনিনবাদ যাতে কোন মতেই, মার্ক্সবাদের সাথে একাত্ম না হতে পারে, অথবা মার্ক্সবাদীদের ভেতরেই যাতে মার্ক্সবাদের নামে মার্ক্সবাদ বিরোধী ধারনা সমুহকে সক্রীয় রাখতে হয় বা বা ভেতরেই  গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া যায়
------ সে সব কারনে, যে সংখ্যক মানুষকে সারা বিশ্বে পাঠ দিতে হয় এবং সেই পাঠ দেওয়ার জন্য গবেষনায় যত মানুষকে নিয়োগ করতে হয়, সে সংখ্যাটি  নিশ্চিতভাবেই, খোদ হোয়াইট হাউস কিংবা আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রের খোদ কর্তারা হিসেব করে বলতে পারবেন না।
এসব থেকে বুঝে নিতে হয়, সেই দেশে  এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, কত স্কলার মার্ক্সসবাদ নিয়ে গবেষনা করছেন।

এই সংখ্যা নিশ্চিতভাবে, মার্ক্সবাদীরা যে সংখ্যায় গবেষনা চালাছেন, তা থেকে সহস্ত্রগুন বেশি সংখ্যার 'স্কলার' এই বিজ্ঞানকে বিপথগামী করা, মার্ক্সবাদী দলগুলির কাছাকাছি আসতে পারেন, সেগুলিকে বিপথগামী করতে অগনিত লোক কাজ করছে।

এদের সবাইকে মার্ক্সবাদকে, একেবার চাল থেকে পাথর-কনা বাছাই থেকেও অনেক নিবিড়ভাবে, এদের গবেষনা চালাতে হতেই হোত। সে কারনে এসব মহোদয়কে,  'সর্বশ্রেষ্ট' মার্ক্সবাদী বলে আখ্যা দেওয়া যাবে না।
---- এসব সুত্রের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সেই তথ্য, কেমনভাবে একজন মার্ক্সবাদীকে শরীরে, মনে,  জ্ঞানে, বুদ্ধিতে,  বিবেচনায়, চেতনায় এবং আত্মপ্রত্যয়ে মার্ক্সবাদকে একাত্ম হয়েই , লেনিনবাদী প্রয়োগে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করতে হয়।

একবার লেনিনকে উল্লেখ করে কে প্রকৃ্ত সাম্যবাদী তার একটা সঙ্ঘা দিতে গিয়ে বলেছিলাম - তিনিই প্রকৃ্ত সাম্যবাদী, যিনি এক লহমায়,  যে কোন বিষয় সম্পর্কে তার ধারনাকে বিশ্বের কোল স্থান করে দিতে পারবেন। এখন একটু এগিয়ে গিয়ে বলি -  তিনিই এটা পরবেন যিনি মার্ক্সবাদ তো বটেই, এই দর্শনকে বিপথগামী করতে , মার্ক্সবাদ বিরোধী স্কলাররা,  ঈশ্বরতত্বকে জ্ঞানর ঘারে চাপাতে গিয়ে যে ব্যাভিচারিতা চালানো হচ্ছে তার মুখোশ উন্মোচন করতে পারবে।

আরো এগিয়ে গিয়ে, এই বোঝাবুঝিকে একাত্ম করতে  গিয়েই, শুধু কমিউনিষ্ট ম্যানিফেষ্টোর আলোকে ইতিহাস গড়গড় করে পড়ে গেলেই হবে না। এমন কী পুঁজি নামক গ্রন্থটির বিরাট আকারের তিনটি গ্রন্থকে পড়ে নিলেই কাজ হবে না। সেখানে নিজের অনুভূতি জগতটাকে চিরে চিরে, খুজে দেখা প্রয়োজন হবে
------, মনের কোন কোন কোনার গহীনে - 
কবি যাকে চিন্তনের গহনের কারাগার হিসেবে বর্ণন করেছেনঃ 
"ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর্" 
বাহিরেতে চায় দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।" 

অনেকেই যদি, অন্বেষনের সুত্রগুলিকে খুজতে মার্ক্স যেখানে তার সর জ্ঞানের গবেষনাকে সুত্রবদ্ধ করেছেন,  সেই জ্ঞানতত্বের  সন্ধান পান নাই, তাদের বিশেষ দোষ দিই না। আমাদেরকে,  যারা মধ্যমবর্গ থেকে আসা শিক্ষিত যন্ত্র শ্রমিকদের সাম্যের পথে টেনে আনতে হয়েছিলো এককালে,
------ তাদেরকে এক প্রচন্ড বাধ্যবাধকতার কারনেই, জ্ঞানতত্বের অন্বেষন করতে হয়েছে।  এইবর্গের ভেতরকার পিছুটানকে কাজে লাগাণোর শত্রুপক্ষীয় স্বরযন্ত্রের সাধারন প্রকৃয়া্কে নিশ্চল করে দিতেই। সেই কালে, শ্রমিকদের মধ্যে ভয়ংকর দ্বন্দ্ব যেমন ছিলো, তেমনি একাত্মতাও। নেতারাও সেখান থেকে বাদ পারতেন না। 
আবারো বুঝে নিতে হোত - 
 জ্ঞান তত্বের যে  দুটি অভিমুখ রয়েছে, সেটা বোঝাও সম্ভব হবে না, যদি না অন্য একটি সর্তের পূর্তি না ঘটে।  বুনিয়াদী মার্ক্সসবাদের প্রতি দায়বদ্ধতাকে যদি না  শ্রমিক শ্রেনীর প্রতি আনুগত্বের সাথে একাত্ম করার আকাশচুম্বী একত্মতায় নিজেকে ঢেলে দিতে না পারা যায়,
-----  একজনের পক্ষে একক কিংবা সংগঠনগতভাবে সাম্যবাদী হিসেবে নিজেকে  গড়ে তোলা সম্ভব হোত না।  
জ্ঞান তত্বের এক দিক হোলঃ , বিশ্বকে বদল করে দেওয়ার পথেই বিশ্ব পরিচিতির সাথে নিজেকে যুক্ত রাখা। দ্বিতীয় দিক হোল, এই বদলের প্রস্নেই লেনিনবাদের সাথে জ্ঞান তত্বের অন্তসম্পর্ক  পাকাপোক্ত হচ্ছে, তেমনি উপরিউক্ত প্রথম এবং দ্বিতীয় সুত্রকেও একাত্ম করছে, মার্ক্সেরই অন্য এক অনন্য আবিস্কার। যে আবিস্কার একপ্রান্তে  জ্ঞানতত্বেরই অংশ অন্যপ্রান্তে  সন্তুলিত রুপ হিসেবে জ্ঞানের পরিমাপক।  এই আবিস্কারের নাম, দ্বন্দ্বতত্ব।
দেখুন মার্ক্স নিজেই কীভাবে লেনিনবাদের ভিত্তির সুত্রটি চিহ্নিত করে দিলেন, যখন  তিনি বলে যাচ্ছেনঃ দুনিয়াকে জানা খুব গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু তাকে বদল করাটা আরো গুরুত্বপূর্ন। 
------ এখানে সুত্রটি খুব স্পষ্ট। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, রেসিপি জানলেই যেমন ভালো রাধূনী হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি, তেমনি বিশ্বটাকে বদলানোর কাজে হাত না দিলে, বিশ্বটাকে তার প্রকৃ্ত রুপে চেনাও সম্ভব নয়। এইভাবে মার্ক্স এবং লেনিনের সঙ্গমকে চিহ্নিত হচ্ছে। সাথে সাথে এই সঙ্গমে, দাড়ীয়েই যে একজনকে প্রকত বিপ্লবী হতে হবে সে কথাটাও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখিত সুত্রগুলি যত সময় ভেতর এবং বাইরের সংগ্রামে পাকাপোক্ট না হচ্ছে, ততসময়, 
------ সাম্যবাদী আন্দোলনের বৃত্তান্তরের নিরন্তরতায়, তালমেল বিঘ্নিত হবে বার বার। সেই পথে আবেগ এবং বিশ্বাসঘাতকতা সংগ্রামের পথকে দোলাচলে রাখবে এবং অনেক মূল্য দিতে দিতেই রুপান্তরের পথ পরিচ্ছন্ন হতে থাকবে।

তবু অনেক প্রহেলিকা থেকে গেলো। আসা করবো পরের পোস্টিংগুলিতে সেই প্রহেলিকা দূর হবে। ইতিমধ্যে দর্শনের দিক থেকে সমকালীন চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করে, আজকের পোস্টিং এ ইতি টানছি।
------ সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর বিশ্বের লক্ষ লক্ষ আমেরিকান পন্থী স্কলার এবং এদের সবাই নাকি অর্থনীতিবিদ, পিপে পিপে লাল জল খেয়ে দুটো নিদেন দিয়েছিলেনঃ
(এক) দেশে এখন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকল্পে 'পুজিতান্ত্রিক বিশ্বায়ন চাই'
(দুই) বিশ্বে ইতিহাসের বিলুপ্তি ঘটেছে, তাই দাসত্বই নাকি এখন চিরন্তন ইতিহাস।
প্রথমটি এখন ভেংগে চূড়মার। দ্বিতীয়টির প্রথমটাও যে গেছে, তার অন্যসব কিছুকে বাদ দিলেও, ইসরাইলের সংসদে সাম্যবাদীদের  ১৩টি আসন পেয়ে যাওয়াই তার প্রমান।
তবে ইতিমধ্যে দাসত্ব চেপে যে বসেছে তা নিশ্চিত। ভারতে তো বটেই। নয়তো, মহিলা নিরাপত্বার প্রশ্নে ভারত সব থেকে বিপদজনক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হোত না।
তাই, সমসাময়ীক কালের সাম্যবাদের একাত্মতার প্রশ্নে উল্লেখিত  বিষয়টিকে মুখ্য ভূমিকায় আসতে হবেই। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours