ঘোড়াটা গাড়ীর পেছনে, অথবা আগে। শিরোনামটা লেখকের নয়, লেনিনের।
বহূবছর আগে, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের যিনি ভিষ্ম পিতামহ বলে স্বিকৃত, একদিন একটা বড় ধমক দিয়েছিলেন, ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, ধমকটায়। ধমক থেকেও যে কারনে ধমকটা দিয়েছিলেন, সেটা শুনে। আজকে বুঝছি ধমটা উপরের শিরোনামার সাথে একেবারে প্রাসংগিক।
আজ বুঝতে পারি, সেদিন যদি , ভারতীয় রাজনীতির সম্ভাব্য গতিমুখটা চিহ্নিত করতে পারতাম, এক লহমায় উনার ধমকটা, উল্লেখিত শিরোনামের সাথে সংগতিটি চিহ্নিত করে, করনীয়টি ঠিক করে ফেলতে পারতাম। সাথে সাথে এটাও বুঝেছি, এই 'ধমকের' পেছনকার সারমর্মটি দেশে যারা গনতন্ত্রের পক্ষে, বিশেষ করে শ্রমিক আন্দোলনে সর্বাত্মক একতাপন্থীরা বুঝতেন, তবে আজ দেশ যে বিপর্য্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি, হয়েছে - সম্ভবতঃ সেটি আটকে দেওয়া যেতো।
এই শিরোনামা এবং ভিষ্মপিতামহের ধমকের পেছনে, আরো একটা লেনিনীয় সত্য জ্বলন্তভাবে আজকের ভারতীয় সমাজ এবং রাজনীতির ফাঁকা যায়গাটা চিহ্নিত হয়ে যাবে। এই সুত্রেই বলে রাখি
------- ভারতবর্ষ ক্রমে এমন একটা রাজনীতিতে গড়িয়ে যাচ্ছে যেখানে, রাজনীতি এবং সমাজের সম্পর্কটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো, হাই হাই করে উঠবেন।কথাটি শুনে। একটি উদাহারন দিলেই স্পষ্ট হবে। ভারতের সেই রাজ্য যেখান থেকে ভারতীয় সংসদে সব থেকে অধিক সংখ্যক, সাংসদ লোকসভায় পাঠায়, সেই প্রান্তের এক 'সাধু সাংসদের' বিরুদ্ধে, তারই পরিচালিত একটি কলেজের ছাত্রী, সেই সাধুর বিরুদ্ধে মাসাধিক কাল ধরে, লাগাতার বলাৎকারের অভিযোগ থানায় লিপিবদ্ধ করে, এতোই বিপদগ্রস্থ হয়ে পরেন যে, ছাত্রীটি সেই রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যায়। ক্রমে অভিযুক্ত অপেক্ষা, অভিযুক্তার বিরুদ্ধে প্রসাশনিক আঘাত চলতে থাকে। ইতিমধ্যে ,সেই কলেজের অন্য এক চাকুরীরতা, অনুরুপ অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে পরায়, তারা 'সিটের' মাধ্যমে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। ছাত্রীটি সাহস পেয়ে, বিচারপতির এজলাসে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
----- যাইহোক, এসব ঘটনা যে কি করে, মহান ভারতবর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে গেছে এবং এমনটি যখন ঘটতে থাকে তখন, এক অস্বিকার করতে পারে, যে দেশের রাজনীতি, সমাজ থেকে পৃথক হয়ে গিয়ে, দেশকে রাজনীতিবিহীনতার রাজনীতির আবাস করে তুলছে। আবার হয়তো কেউ কেউ ধমক দিয়ে বলবেন, এ থেকে প্রমান হয় না, রাজনীতি আর সমাজের মধ্যে বিচ্ছেদ নির্মান হয়ে গেছে।
---- এবারে শুনুন এই সুত্রেই আরো বিপর্য্যয়কর তথ্য। একটি সংবাদপত্র সংবাদ করেছে, সেই সাধুবাবাজির সংসদীয় ক্ষেত্রে ভালো সংখ্যক মানুষ নাকি, এসব কাজকর্মকে 'অস্বিকার' না করেও, মেনেছেন, 'সাংসদজী' মানুষের জন্য, 'যা করেছেন', তাতে এসব খুৎ' কিছুই না। যে ইংরাজী সংবাদ খরব টি করেছে, সেই কাগজ এসব অভিযোগকে তুল্য বিচারে 'ডাল' বলে চিহ্নিত করেছেন, মানুষ।
এবারে বিষয়ে আসা যাক। ৭০ দশকের একদল এক ব্যক্তির শাসন, কিংবা ১৯৭৭ সালের পর, গনতান্ত্রিক শাসন (ভারতের ইতিহাসে প্রথম প্রশাসনিক সংস্কার এবং গনতন্ত্রে গন অংশগ্রহনের শুরুর কাল) ক্রমে উদারবাদের অপ্রাসংগিক হয়ে যাওয়া, এবং আজকে এই মুহুর্তে এই অপ্রাসংগিকতার কারনে, সাম্যের মুখোমুখি ফ্যাসিবাদের দাড়িয়ে যাওয়া।
------ সমাজের এই বিকট রুপান্তর প্রকৃয়ায়, আজ পুরানো গনতন্ত্রের ফিরে আসাটাই যে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে, সে কথাটা না বোঝার কারন ছিলো না, যদি লেনিনের অন্য পরামর্শটি ভারতের গনতন্ত্রিরা মেনে চলার মতো মানষিকতা দেখাতেন। আমরা যারা শ্রমিক আন্দোলনে সর্বাত্মক একতার কথা বলি তারা যদি, অন্ততঃ লেনিনকে বুঝতেন, তবে কমরেড বি টি রনদিভের দেওয়া ধমকটার অর্থ বুঝে নিতেন এবং প্রয়োজনীয় ভাবাদর্শগত অবস্থায় দাড়িয়ে, রাজনীতির অগ্রভাগে ভাবাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন।
এবারে প্রথমে লেনিন কি বুঝিয়েছিলেনঃ
--- তিনিই ত্রিকাল- দর্শী যিনি মার্ক্সের জ্ঞানতত্বের আলোকে, সমকালীন অজস্ত্র ঘটনাকে একযায়গায় এনে যুক্তি-তর্কের আধারে ব্যাখ্যা করতে পারবেন, (যাকে মার্ক্স দ্বান্দ্বিক প্রকৃয়া বলে উল্লেখ করেছেন) তিনি অতীতকে যেমন চিহ্নিত করতে পারবেন, তেমনি ইতিহাসের সম্ভাব্য ভবিষ্যত গতি প্রকৃ্তিকেও চিহ্নিত করে ফেলবেন।
হিসেবটা তখন খুব সোজা হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে একদলিয় শাসনের অবসান গনতন্ত্রিক জনমানষের চাপে। কিন্তু ইতিমধ্যে, সাম্যবাদীরা, রাজনীতিতে ঠিক হলেও, কী ভাবাদর্শে কিংবা সংগঠনে গনতন্ত্রীদের প্রাণভমরা হওয়ার, যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না।
------ কাজেই ভারতের এক কালের গনতন্ত্রীরা যদি, উদারবাদীদের বিশ্বপ্রবাহের মতোই, অপ্রাসংগিক হয়ে গিয়ে থাকে, তবে নিশ্চিতভাবে ফ্যাসিস্তরা অন্যকারনেও আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবেই।
----- চিন কিংবা ভিয়েতনাম তো বিপ্লবের কালেই, কয়েকহাজার বছরের সামন্তিক বা দাসত্বের পুঁজরক্ত, সাফ করে দিয়েছে। ইউরোপে অষ্টাবিংশ শতাব্দীর গনতান্ত্রিক বিপ্লব যতটুকু এই রক্ত-পুঁজ সাফ করেছে, ভারতে অনাদি কাল ধরে, আদিভৌতিকবাদ প্রবাহিত হয়েছে। পরে, ব্রাহ্মন্যবাদের আবির্ভাবের পর বর্নাশ্রম ইত্যাদি, মানুষে মানুষে ঘৃ্না, গরিবিকে দাসত্বে এবং নারীত্বকে পণ্যে বদলে দেওয়ার সুযোগ করে চলেছে।
------- সেই সাধু মহারাজের কাজকর্ম এবং সেটাকে নিয়ে মানুষের সর্বংসহা অবস্থানের প্রাতিষ্টানিকিকরনের পরিস্থিতিটাই আজ ভারতে
ফ্যাসিবাদের ভিত্তিভূমী নির্মান করেছে দুটি কারনে
----- প্রথমতঃ উদারবাদের অপ্রাসংগিকতা আর সাম্যবাদীদেরো, রাজনীতির সম্মুখভাগে ভাবাদর্শের স্থান করে না দেওয়া। এইভাবে যখন ইতিহাস শ্রমিক শ্রেনী কিংবা সাম্যকে ফ্যাসিস্তদের মুখোমুখী করে দিয়েছে, তখন, ইতিহাস থেকে শ্রমিক শ্রেনী ক্রমেই ফাকা যায়গাটা বড় করে নেওয়ার কারন হয়ে পরছে।
এই আলোচনা থেকেই বুঝে নেওয়া যায়, লেনিনের সেই বিখ্যাত উক্তির
মর্মকথাটি কোথায় লুকিয়ে। তিনি যদি অক্টোবর বিপ্লব করতে গিয়ে বুঝিয়ে থাকেন,
------ রাজনীতির সামনে ভাবাদর্শ থাকতে হবে, বুর্জোয়া উদারনীতিবাদের বারোটা বেজে যাওয়ায়, ভাবাদর্শের সারথি হতে হবে, শ্রমিক শ্রেনী। সেখান থেকেই বুঝতে হোত, উদারবাদীরা ভাব এবং নৈতিকতায় যখন ডুবে যাচ্ছিলো,
----- তখন ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে, উদারবাদীদের নিশ্চিতভাবে ফ্যাসিতন্ত্র মোকাবিলায় শ্রমিক শ্রেনী তথা সাম্যবাদীদের টেনে নিয়ে যেতে হোতই,
----- কিন্তু কোন মতেই, ভাবাদর্শগত নেতৃ্ত্বের বিষয়টিকে যেমন হাতছাড়া করা যেতো না, তেমনি ভাবাদর্শের বাহন হিসেবেও, শ্রমিক শ্রেনী ব্যতিরেখে অন্য কাউকে বিশ্বাস করা যেতো না।
সব মিলিয়ে যেটা দাড়াচ্ছে, তা হোল - এতোদিন যা হওয়ার তা হয়েছে। যখন উদারবাদীরা বিশ্বাস যোগ্যতার তলানীতে, তখন শ্রমিক আন্দোলনকে ভাবাদর্শ থেকে দূরে রাখা, কিংবা রাজনীতিকে ভবাদর্শ জ্ঞানে বিচার করে,
----- প্রথমে রাজনীতি এবং ভাবাদর্শের ক্রমে, ইতিহাস এবং ভাবাদর্শের ফারাক বাড়িয়ে দিয়ে, ফ্যাসিবাদকে সাহায্যি করার কাজটাই হবে।
এবারে সেই ধমকটা যে কী ছিলো, যার অর্থ আজ যতটুকু বুঝেছি অতীতে কোন দিন বুঝি নাই। তথাপী জীবন রায়, সেটা ঠেকায় পরে ঠেলে ঠেলে সেটার অর্থ বুঝেছে। অন্যদের যারা সেই ধমক খেয়েছিলেন, তার অর্থ যদি বোঝার চেষ্টা করতেন
----- তার বিশ্বাস আজকের সংকটে পরতো না ভারতবর্ষ।
কমরেড বি টি রনদিভে ধমম দিয়ে বুঝাণোর চেষ্টা করেছিলেনঃ
AN WORKING CLASS LEADER SHOULD KNOW EVERYTHING, WHICHEVER TRUTH ON EARTH, SHOULD BE CAPABLE TO EXPLAIN EVERY THING, ABOUT THE FUTURE IN THE CONTEXT OF PAST AND PRESENT.
Post A Comment:
0 comments so far,add yours