দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
ভক্তি রসে বাঁধা পড়ে নি। পূর্ণতা খোঁজে নি ভগবান। তাই গোলকের পালঙ্ক ছেড়ে প্রেম রসে ভাসতে মাটিতে নেমেছে কানু হেন ধন। এই ভাগবত প্রেম ঐহিকের আঙ্গিকে নৃত্য নাট্যে মন্ত্র মুগ্ধ করে দর্শকদের। রামপুরহাট রেলওয়ে রঙ্গ মঞ্চে ছিল না তিল ধারণের জায়গা! কিঙ্কিনি ডান্স একাডেমী নৃত্যের ছন্দে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনাস্বাদিত আনন্দে ভরিয়ে দিল আগত সকলের মন। শুরুতেই প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন কৃষি মন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রামপুরহাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুকান্ত সরকার প্রমূখ।
সম্প্রতি সন্ধ্যা হয়ে উঠল গোলক ধাম। যা অন্তিমে শ্রী রাধিকার জন্মের সাথে সাথে গোকুলধামে নিয়ে গেল সকলকে!
মাধুকরীতে বেরিয়ে দরজায় টোকা মারলে, গৃহস্থামী হাঁক দেন কে? ভক্ত মন আজও বলে -"রাধে রাধে"। কিন্তু কানাইয়ের প্রাণের সখা সুদামা তা শুনবে কেন? ভক্তির জোরে সে গোলক পৌঁছেছে। শ্রীকৃষ্ণের উপর তার দাবি শ্রী রাধিকার থেকে কম নয়! তার কাছে শ্রী রাধিকা মায়া মাত্র! তার কাছে ভক্তি বড়ো প্রেমের থেকে। নিষ্কাম প্রেমের বিমূর্ত ভাব রাধা। আর ভক্তির মূর্ত প্রতীক সুদামা। কিন্তু তার কাছে ভক্তি বড়ো। আর তা প্রমাণে সদা ব্যস্ত। প্রথমে সুদামা বুঝতে ব্যর্থ হয় মানুষের উদ্বর্তণ নয় উত্তরণের পথ প্রেম। কীট দেহ এই প্রেম নাম নিয়ে পরমাত্মার সাথে মিলিত হতে সক্ষম। একসময় ভক্তির জোরে বলীয়াণ সুদামা অ
ভিশাপ দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকার বিচ্ছেদ সূচিত করে। পরে অবশ্য সুদামার চৈতন্য হয়।
শ্রী কৃষ্ণ শ্রীরাধিকার আসঙ্গ লিপ্ত শৃঙ্গারে ব্যস্ত। পায়ে পড়িয়ে দিচ্ছেন আলতা। পড়িয়ে দিচ্ছেন ফুল সাজ! তার পর রাধা বিহনে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। সে কি শ্রীরাধাও একদিন কাঁদবেন বলে--- ‘‘কৈছনে যাওব যমুনাতীর,
কৈহে নেহারব কুঞ্জকুটীর
সহচরি সঞে যাহা করল ফুল-খেরী।
কৈছনে জীয়ব তাহি নেহারি।’’
সমগ্র অনুষ্ঠানটি কয়েকটি পর্বে বিভক্ত ছিল। সেগুলো হল--দ্বীপ বন্দনা, গনেশ বন্দনা, লোক নৃত্য, রাধা কৃষ্ণ নৃত্য নাট্য, পাশ্চাত্য নৃত্য ও দেশপ্রেম মূলক নৃত্য। এই নৃত্য নাট্য হিন্দি ভাষায় হলেও, ভাবের প্রাবল্যে ছিল জীবন বোধের অনুপান। কত অভ্যাস থাকলে, কোন রেকর্ডের সংলাপে এমন নিখুঁত ঠোঁট মেলানো যায়, তা কিঙ্কিনি ডান্স একাডেমীকে দেখে বোঝা যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানের মঞ্চ সজ্জা, আলো, আবহ সঙ্গীত ছিল অনবদ্য। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল গণ কন্ঠ। এদিনের অনুষ্ঠানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সম্বর্ধনা। এদিন জেলার দুই বিশিষ্ট সাংবাদিক আশীষ মণ্ডল ও অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়কে এই মঞ্চে সম্মাননা দেওয়া হয়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours