Modi sarkar
শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

"হাউডি মোদী"- এটাই হল বিশ্ব রাজনীতির সুপার ডুপার সাম্প্রতিক স্লোগান। তবু, তবু থেকেই গেল কিছু কূটনৈতিক জিজ্ঞাসা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ও  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে নয় বছরের এক বালক সেলফি তুলে সুপারস্টার বনে গেছে। আরেকটি খবর,  তা হলো মঞ্চে ভারতীয় ও মার্কিন পতাকার  প্রতীক  ছিলো। যা এর আগে কখনোই ঘটেনি। মোদী ও ট্রাম্পের  জনসভায় এবার যা ঘটেছে তার অনেক কিছুই এর আগে ঘটেনি। যেমন, মোদীর নিজের স্লোগান, "আবকি বার মোদী সরকার "কপি করে অন্য দেশের তাও আবার একটি পরাক্রমশালী পরাশক্ত রাষ্ট্রের প্রধানের উপস্থিতিতে বললেন, "আবকি বার ট্রাম্প সরকার!" এবং ২০২০ নির্বাচনী প্রচারনায় শামিল হলেন নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকার পত্রিকাগুলোতে মোদীর জয়জয়কারে ছয়লাপ। এই প্রথম বিদেশের মাটিতে কোন  শক্তিধর রাষ্ট্রের নেতার সাথে বৈঠকে বসার আগেই কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এত আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এসে গেছেন।  পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হয়ে মোদীর নির্বাচনী প্রচারণা এক অভূতপূর্ব ঘটনা।

যারা বারবার অভিযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদী কেবল পাকিস্তান নিয়ে ব্যাস্ত রয়েছেন।তারা কেবল নির্বাচনেই পরাজিত হননি। পরাজিত হয়েছেন মোদীর বিদেশনীতির কাছেও। যদিও ভারতের বিরোধী দলীয় এক বর্ষীয়ান নেতা  অভিযোগ করেছেন। মোদীর এমন কার্যকলাপ ভারতের বিদেশনীতির বিরুদ্ধ।  বিজেপি, বিরোধীদের এমন সমালোচনা থোরাই কেয়ার করছে।  বরং তারা দাবী করছে মোদীর এমন বিদেশনীতিতে পাকিস্তান তো ছিটকে পরেছেই।  এমনকি চায়নাও এখন সম্মান দিয়ে কথা বলবে ভারতকে।

বর্তমানে ভারত ও নরেন্দ্র মোদীর সাথে ইসরায়েলেরও সম্পর্কও মধূর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টেক্সাসের জনসভায় মোদী ও ট্রাম্প যে ভাবে পরস্পরকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন  তা বিস্ময়কর।  টেক্সাসের হিউস্টনে রবিবার রাতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ইন্দো-আমেরিকান দর্শকের সামনে হাত-ধরাধরি করে নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য  মোদী ও ট্রাম্পের শত্রুমিত্র উভয় পক্ষের দৃষ্ট আকর্ষন  করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবিশনে কাশ্মীর ইস্যু অবশ্যই তুলবেন। কিন্তু তা হালে পানি পাবে কি না সন্দেহ। কেনন, ইতোমধ্যে ট্রাম্প ও মোদীর হাত ধরে ঘুরোঘুরি অনেক মেসেজ দিয়ে দিয়েছে!

 আমেরিকার জন্য এ মুহুর্তে ভারতকে পাশে পাওয়া খুব জরুরী চীনকে মোকাবেলা করার জন্য। আর ভারতেরও, আমেরিকার খুব প্রয়োজন চায়না ও পাকিস্তান থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য।  ১৯৮৮ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে তাড়ানোর জন্য পাকিস্তানের  খুব প্রয়োজন ছিলো। এখন আমেরিকার কাছে পাকিস্তানের সে প্রয়োজন প্রায় ফুরিয়ে গেছে। খোদ আফগানিস্তানও আর পাকিস্তানকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করছে না। তারা  আফগানীরা মনে করে আজকে কাবুলে যে সন্ত্রাস ও যুদ্ধ চলছে তার জন্য প্রধানত পাকিস্তানই দায়ী! কুটনৈতিক সম্পর্কও পাকিস্তান থেকে ভারতের সম্পর্ক ভালো কাবুলের সাথে। এমন কি তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠিও আর মধ্যস্থাকারী হিসেবে ইসলামাবাদকে চায় না।  তালেবানেরা এখন সরাসরি মার্কীনীদের সাথে বৈঠক করে থাকে! যদিও সদ্য আফগান তালেবান ও মার্কীন আলোচনা ভেস্তে গেছে।

কংগ্রেস নেতা ও সাবেক ক্যাবিনেট মন্ত্রী আনন্দ শর্মা টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মনে করিয়ে দেন, আমেরিকার প্রতি ভারতের নীতি বরাবরই ছিল 'বাইপার্টিসান'। বলতে চেয়েছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভারত কখনই কোন  রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায়নি। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্পের হয়ে স্লোগান দিয়ে মোদী আসলে দুই দেশেরই সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক মর্যাদাকেই খর্ব করেছেন।

কংগ্রেস মুখপাত্র ব্রিজেশ কালাপ্পা বলেন  "এটা তো পরিষ্কার আমেরিকার ঘরোয়া রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। তা ছাড়া আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়রা বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক, বারাক ওবামাকে তারা খুবই পছন্দ করতেন।"

এই দুই কংগ্রেস নেতার বক্তব্য নরেন্দ্র মোদীকে  নিন্দিত হওয়ার চেয়ে নন্দীতই বেশি  করবে মনে হয়। তাদের সমালোচনাতেই  স্পষ্ট  হয়ে যায় ; নরেন্দ্র মোদীর গুরুত্ব মার্কীন প্রশাসনের নিকট অনেক বেরে গেছে।  বিজেপি তেমন দাবিই করছে ; বিজেপি  সব সমালোচনা  উড়িয়ে দিয়ে বলছে, সত্য এই যে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদীর অভাবনীয় সাফল্যে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে বিরোধীরা  প্রলাপ বকছে।

বিজেপি নেতা সৈয়দ শাহনওয়াজ হুসেনের , ভাাষায়  " এমন একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তান বিদ্রূপ করে বলত ভারতের প্রধানমন্ত্রী না কি আমেরিকায় গিয়ে গ্রাম্য মহিলাদের মতো শুধু নালিশ করেন।"

"আর আজ যখন মোদীজির হাতে হাত রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোরেন, তখন তার কী বার্তা যায়? এটাই যায় - যে ভারত হল মার্কিনিদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত, ভরসা করার বন্ধু।

"ভারতীয়দের আসলে গর্বিত হওয়া উচিত, তারা এমন একজন নেতা পেয়েছে যিনি ভারতকে আমেরিকার সঙ্গে এক কাতারে নিয়ে এসেছেন", দাবি করেছেন বিজেপি নেতা  শাহনেওয়াজ  হুসেন।

শাহনেওয়াজ হুসেনের  কথার সত্যতাও মেলে দুই  দেশের দুই নেতার ভাষণে!

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প  উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমেরিকার সবচেয়ে মহান, একনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুদের একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাকে টেক্সাসে পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত।"

তেমনি  ভারতের প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী তার জবাবে  বলেন হোয়াইট হাউজে 'ভারতের একজন সত্যিকারের বন্ধু' রয়েছে।  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন  'উষ্ণ, বন্ধুবৎসল, তেজদীপ্ত ও রসবোধ সম্পন্ন মানুষ।'

তবে  নরেন্দ্র মোদী কেবল নিজের যোগ্যতা ও বিজেপির কারনে এমন সম্মান পেয়েছেন তা মনে করা  ভুল হবে।  মনে রাখতে হবে ভারতীরা নাসায় রয়েছে ৩৬%!  আমেরিকান প্রযুক্তিতে ভারতীয়দের বিশাল অর্জন ও অবদান রয়েছে। মার্কীন মুলকে তথা বিদেশের মাটিতে সানতানিদের ( হিন্দুদের)  তো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশগ্রহন নেইই। এমন কি কোন ভারতীয় মুসলিমও বিদেশের মাটিতে কোন  সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর  ও তার দলের ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনে  ক্যারিসম্যাটিক বিজয়।  যার জন্য এক সময় আমেরিকায় নিষিদ্ধ হওয়া ব্যাক্তিটি আজ আমেরিকার মাটিতে, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে হাত ধরে জনসভায় ঘুরোঘুরি করে চলছেন। অথচ খালেদা জিয়া বাংলাদশের বিরোধী  দলের  নেতা হয়েও যে দেশের প্রেসিডেন্ট (প্রনব মুখার্জীর) সাথে ছোট্ট অজুহাতে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করে দেন। সে দেশের  প্রধানমন্ত্রী পরাক্রমশালী মার্কিন প্রেসিডেন্টর সাথে প্রটোকল তথা  অনেক নিয়ম নীতির বাইরে সুযোগ, সম্মান ও  সংবর্ধনা পেয়ে থাকেন। যার ভাগিদার  মার্কিনমুলুকে থাকা ভারতীয় ও ভারতীয় বংশদ্ভূত প্রতিটি মানুষ।

উল্লেখ্য  মার্কীন প্রেসিডেন্ট,  " ইসলামী সন্ত্রাসবাদ " মোকাবেলায় ভারত ও আমেরিকা যৌথ ভাবে কাজ করবে বলে তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।  কিন্তু ঢাকার পত্রিকাগুলো কেবল ; "সন্ত্রাসবাদ ' শব্দটি ব্যাবহার করেছে " ইসলামী" শব্দ কেটে দিয়ে।  বাংলাদেশের মিডিয়া কেবল বাংলাদশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের অংশই গায়েব করে দেয়  না।  মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে শব্দও গায়েব করে দেয়!  যা সারা দুনিয়ার প্রচারিত হয়েছে।

ভারতের বামপন্থী সহ সকল বিরোধীদল ও তাদের মিডিয়া  নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির অপ্রতিরোধ্য  উত্থান না দেশের মাটিতে ঠেকাতে পারছে না বিদেশের মাটিতে। যার শেষ দৃষ্টান্ত  টেক্সাসের হাউডি মোদী!
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours