Durgara songbad sironam
মৌসুমী মন্ডল, ফিচার রাইটার, কলকাতা:


‘দুর্গাপুজো’ শব্দটা ভারতবাসী তথা আপামর বাঙালির কাছে বড়ো প্রিয় শব্দ। ‘আলোর বেণু’ না বাজলেও বাঙালির ভুবন কিন্তু মেতে থাকে এই শব্দটার উপর ভিত্তি করে। ‘মা আসছে’… দেবী দুর্গা বছরের চারটে দিন সন্তানদের সাথে কাটাতে মহালয়ার দিন পাড়ি দেন সুদূর কৈলাস থেকে। তাই মহালয়া থেকেই আরম্ভ হয় দেবীপক্ষ। দেবী দুর্গার মাহাত্ম্যের কথা কে জানে না? সেই মাহাত্ম্যের উপর প্রশ্ন তুললে আপনি হয়ত অনেক কিছু ‘দ্রোহী’ হয়ে যেতে পারেন। কারণ সামনেই যে দেবীপক্ষ! কিন্তু বাদবাকি পিতৃপক্ষের দিনেতে চলে মহিষাসুর রাজ। রাতের অন্ধকারে বাজতে বাজতে থেমে যায় হাজারো আলোর বেণু। খবরের কাগজের প্রথম পাতা থেকে শুরু হয় ‘দেবীনিধন’- এর বার্তা। সংবাদপত্র ভাগ হয়ে যায় বিভিন্ন খবরের পসরা নিয়ে। কেউ বড়ো করে দেয়, কোন দেবী সুদূর সাগরপাড়ি দিয়ে ভারতের জন্য বক্সিংয়ে স্বর্ণপদক আনল। আবার কোন দেবী টেবিল টেনিসে ভারতকে প্রথমের সারিতে দাঁড় করালো। আবার কোনো সংবাদপত্র জানান দেয় কোন দেবীর নিথর দেহ পাওয়া গেছে রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে। আবারও কেউ লেখে, বাড়িতে অসুস্থ মা ও ছোট্ট বোনকে রেখে কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় নিখোঁজ হয় এক মহামায়া।
তাঁর নগ্নদেহ পাওয়া যায় দূরের এক ডোবা থেকে। সারাবছর এই মহামায়া, অন্নপূর্ণা ও দুর্গাদের মৃত্যু দেখতে দেখতে আপনার চোখ যখন ভারাক্রান্ত তখন শরতের মেঘ আর বনের কাশফুল আপনার দগদগে মনে মাটির প্রলেপ দেবে। পাড়ার রকে বসে থাকা ‘দাদা’-রা যারা আমার আপনার বাড়ির মেয়েকে টিউশন থেকে ফিরতে দেখে সিটি বাজাতো তাদেরও শারদীয়ার কথা মনে পড়ে যাবে। মাতৃসাধনার জন্য তারাও আপনার দরজায় চাঁদা তুলতে আসবে। দরজার ফাঁক দিয়ে হাল্কা করে আপনার বাড়ির দুর্গাকেও দেখে নিতে পারে। “দাদা দুহাজার টাকা দিতেই হবে…”- আপনি দিতে বাধ্য হবেন। শহর ভাসবে আলোর রোশনায়। সারা অঙ্গে জমকালো সাজ নিয়ে মাটির দুর্গা জায়গা করে নেবে পাড়ায়- পাড়ায়, জেলায়- জেলায়। শুরু হবে অ্যাওয়ার্ডের লড়াই। চারদিন ব্যাপী মহা ধুম-ধাম। জাঁক-জমকে ভাসবে গোটা শহর থেকে গ্রাম। ঢাকের আওয়াজে ঢাকা পড়ে যাবে পিতৃপক্ষের অনেক দেবীর চিৎকার। কুমারী পুজোর আড়ম্বরের তলায় চাপা পড়ে যাবে সেই নামকরা স্কুলের বাথরুমের ভিতর বছর চারেকের মেয়েটার কান্নার আওয়াজ। আমোদে-আহ্লাদে বাঙালি মেতে উঠবে এই কয়েকটা দিন। সংবাদপত্রগুলো সুরুচি, ম্যাডাক্স আর সন্তোষমিত্র স্কোয়ারের খবর দেবে। কারণ দেবীপক্ষ চলছে যে! চারটে দিন আনন্দের সাথে কাটানোর পর আসবে বিজয়াদশমী। লাল সিঁদুরে মাকে রাঙিয়ে দেওয়া হবে। লাল হয়ে যাওয়া দেহ ও উসকোখুসকো চুল নিয়ে দুর্গা জলে ভেসে যাবে। চোখের জলে আমরা তাঁকে বিদায় দেবো। কি-ই বা দিতে পারি চোখের জল ছাড়া আমরা? আবার আসবে পিতৃপক্ষ। গতানুগতিক নিয়মে আমরা আবারও ফিরব। আবারও রাত্রিবেলা আপনার বাড়ির দুর্গা ফিরতে একটু দেরী করলে আপনি উতলা হয়ে উঠবেন। পাগলের মতো ফোন করবেন তাঁকে। আর ফোনে না পেলে? আপনি ছুটবেন পুলিশ স্টেশনে। কারণ আপনি তাঁকে পরের দিনের সংবাদপত্রে দেখতে চান না।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours