আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ জানেন 2017 সালে সমগ্র দেশজুড়ে হঠাৎ করে একটি ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। ভিডিওটা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এর জওয়ান তেজ বাহাদুরের। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছিল একজন সেনা জওয়ান নিম্নমানের খাবার ও খাবারের গুণমানের জন্য সরব হয়েছিলেন। শুধু এটা নয় সেনা জওয়ানদের উচ্চপদস্থ অফিসারদের মানসিক নির্যাতন ও নিপীড়নের কথাও বলেছিলেন। তার এই ধরনের অভিযোগের জন্য শর্তাবলী ও বিধি ভঙ্গের কারণে সেই জওয়ানকে বিএuসএফের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার নাম ছিল তেজ বাহাদুর যাদব।
কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ হয়তো জানেন না এই তেজবাহাদুর যাদবের ঠিক কয়েক বছর আগে ঠিক একইভাবে উচ্চপদস্থ অফিসার এর শিকার হয়েছি আমি। আমি একজন সেনা জওয়ান। আমার নাম সুজয় মণ্ডল, আমি সাধারন জনগন কে আমার সম্বন্ধে ঠিক কী কী ঘটেছিল সেই দিন তা আমি বিস্তারিত জানাবো। পশ্চিমবাংলা রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জন্ম হয় আমার। খুবই গরিব সংসার থেকে আমি বড়ো হই। কিন্তু আমার মনে ছোট থেকেই দেশভক্তির আগুন জ্বলছিল। মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রেখে আমি সি আর পি এফ ২০৬নং কোবরা ব্যাটিলিওনে কর্ম করতে থাকি। হঠাৎই গত ইং ২০১৪ সালে ৯ই এপ্রিল ছত্তিশগড়ে ২০৬নং কোবরা ব্যাটিলিওনের জওয়ান দের সাথে নকশালবাদী মাওবাদীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় ৩ জন জওয়ান শহীদ হন। আহত হন আরো ৫ জন জওয়ান। ঐ 5 জন জওয়ান কে হেলিকপ্টার করে নিকটবর্তী রায়পুরের রামকৃষ্ণ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঐ ৫ জন চিকিৎসাধীন জওয়ানদের মধ্যে আমি একজন (সুজয় মণ্ডল)। তখন আমার বয়স মাত্র ২৭ বছর। আমাকে ১১ ই এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি কমান্ডো জওয়ান সুজয় মণ্ডল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হই।সাংবাদিকদের আমি জানিয়েছিলাম সেইদিনের সমগ্র ঘটনা। এবং এটাও জানিয়েছিলাম উচ্চপদস্থ অফিসারদের ঠিক কী কী গলদ ছিল। পরিকল্পনার মধ্যে কিসের অভাব ছিল। আহত জওয়ানদের চিকিৎসাতে কি গাফিলতি ছিল।যদিও আমি রামকৃষ্ণ কেয়ার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আবার আমাকে বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এই ঘটনার পর আমি জানতাম না যে আমার জীবনে অন্ধকারের কালো ছায়া নেমে আসবে। এবং আমার জীবনকে সেই কালো ছায়া গ্রাস করবে ধীরে ধীরে। এরপর আপনারা ভাবছেন আমার ঠাঁই হয় বাড়িতে! কিন্তু না, ঠিক তার উল্টোটা ঘটলো আমার ঠাঁই হলো জেলখানা। সেখানে চলে আমার ওপর নির্মম অত্যাচার। ছিনিয়ে নেওয়া হয় আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও। এই মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের পর আমাকে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৩ মাস সাসপেনশন অর্ডার। আপনারাই বলুন তো আমার কি দোষ ছিল? এখানেই শেষ নয় তিন মাস পর আমি যখন পুনরায় কর্মস্থলে যাই, কর্মস্থলে যাবার পর আমাকে জানানো হয় আমার বাড়িতে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ডিসমিস লেটার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এটাই হলো আমার মতো কমান্ডোর করুন জীবন কাহিনী।
এখন আমার মতো একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখনো আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। এবং সামনের দিনে করে যাব অন্যায়ের প্রতিবাদ।
এরপর সাধারন জনগনের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরা হলো।
১) কমান্ডো সুজয় মণ্ডলের অর্থাৎ আমার এই করুন অবস্থার জন্য কে দায়ী?
ক) ভারতের কেন্দ্র সরকার?
খ) কমান্ডো সুজয় মণ্ডল অর্থাৎ আমি নিজে?
গ) মাননীয় হোম মিনিস্টার?
ঘ) ভারতীয় মিডিয়া?
ঙ) কমান্ডো সুজয় মণ্ডল এর অর্থাৎ আমার সাথে থাকা সেই দিনের সেই ঘটনার উচ্চপদস্থ অফিসার?
সাধারণ জনগণ ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের এটা মাথায় রাখতে হবে জনগণের টাকা-পয়সায় মন্ত্রী হয়ে বাতানুকূল ঘরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন এবং যতরকম কারচুপির কথা সাধারণ জনগণের সামনে এলে আমার মতো কিছু সেনা জওয়ান এর উপর নির্মম অত্যাচার করছেন। যদি তাই হয় তাহলে আপনারা 56 ইঞ্চি বুকের ছাতি নিয়ে দেশ পাহারা দিচ্ছেন না কেন? শুধু মুখে বললেই হবে আমি সৈনিক! আজ দেখতে হবে সিয়াচিন সীমান্তে আমাদের সৈনিকদের কিভাবে ডিউটি করতে হয়! যুদ্ধের সময় বুক পাতে কারা বন্দুকের সামনে? রাজনৈতিক নেতারা না মন্ত্রীরা না সাধারন জনগন? তাহলে আজ সেনা জওয়ান দের উপর এই ধরনের অত্যাচার কেন?
আরো কিছু প্রশ্ন তুলে ধরলাম
১) আজ যে জঙ্গি হামলায় এত সেনা জওয়ানের প্রাণ গেলো এর মধ্যে মোদি সরকার কোনো গাফিলতি দেখতে পেলেন না? এর দায়ভার কে নেবে?
২)মোদি সরকার নোট বন্দি করলেন উনার উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গী সংগঠনের হাতে টাকা না যাওয়া। এবং কালো টাকা উদ্ধার হওয়া। তাহলে আজ পর্যন্ত কত কালো টাকা উদ্ধার হল? এবং নোট বন্দি হওয়ার পরও জঙ্গি হামলা হলো কি করে?
৩) বিজেপি পার্টির গণতন্ত্র চালাচ্ছেন না! ওরা রাজতন্ত্র চালাতে চাইছেন। সাধারন জনগন জানতে চাইলে নতুন নিয়ম চালু করেছে কিছু জানতে চাইলেই ১১০ ধারা দেওয়া হবে! এটা নয় তো এই ধারা চালু করে নিজেদের মুখ বাঁচাচ্ছেন! যাতে করে সাধারন জনগন বা বিপক্ষ রাজনৈতিক দল মোদি সরকার কে কিছু জানতে চাইবেন না! এটি আবার কি ধরনের অত্যাচার?
৪) আজ পর্যন্ত রাফাল চুক্তির কাগজ কেন দেখাতে পারেননি?
৫) আজ বিজেপি পার্টি জনগণকে সাম্প্রদায়িকতা কে কাজে লাগিয়ে পুনরায় গদিতে এসেছেন। এটাতো সঠিক যে বিজেপি পার্টি সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করছেন।
৬) নোট বন্দির জন্য আজ টাকার মূল্যায়ন কমে গেল তার দায়ভার কে বহন করবে?
৭) বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও করে যে স্লোগান দিচ্ছেন তারপরও বিজেপি পার্টির নেতারা ধর্ষণকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন কেন?
৮) বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও বলার পরও আজ বিজেপি পার্টির সাংসদ একটি অসহায় মেয়েকে বছরের পর বছর প্রতারণা করে চলেছে পিতৃপরিচয় না দিয়ে! কেন?
৯)আজ ভারতের মতো দেশে একজন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান করা হবে তাহলে তারপরও বেকারত্বের হার বাড়ছে কেন?
১০)একজন মন্ত্রী বা একজন রাজ নেতা যদি সাধারণ জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেয় সেই প্রতিশ্রুতি না পূরণ করলে তার জন্য কি ধরনের আইনি পদক্ষেপ হওয়া উচিত? এটা আরও একটি আইন হওয়া উচিত! এটা এক প্রকার জনগণকে প্রতারণা করা!
১১)সাধারন জনগন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় রেলওয়ে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে তাদের কি হবে?
১২) যেকোনো গবেষণামূলক কাজে বিজ্ঞানীরা সফল হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম কেন হবে? হওয়া তো উচিত ভারত দেশের নাম এখানে ব্যক্তিগত কেনো নাম আসবে ।এবং যদি বৈজ্ঞানিকরা সফল না হয় তাহলে সব দায়ভার বৈজ্ঞানিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কেন হবে?
ভারতের সাধারণ মানুষ আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না নিজেদের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখুন এবং দেশকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচান!
জয় হিন্দ ,জয় ভারত, বন্দেমাতরম।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours