vromon kahini
জয়ন্ত কুমার সাহা, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

বিকেলের দিকে রওনা দিলাম সায়েন্স সিটি'র উদ্দেশ্যে। প্রায় কুড়ি মিনিটের হাঁটা পথ। 

দীঘার বিজ্ঞান কেন্দ্রটি সেই অর্থে বৃহদায়তন নয়। আঞ্চলিক বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলি যেমন হয় আর কী। তবুও বেশ চিত্তাকর্ষক। বিজ্ঞানের নানা নিয়মকে তার প্রায়োগিক কৌশলের মাধ্যমে ব্যবহার ক'রে শিক্ষামূলক মনোরঞ্জনের উত্তম আয়োজন। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা -  সকলেরই ভালো লাগার মতন। সংলগ্ন উদ্যানটিতেও বেশ সময় কেটে যায়।

সেখানকার পাট চুকিয়ে পদব্রজে অমরাবতী পার্ক। আগেও একবার উখানে গিয়েছি। এবার দেখলাম নতুন কিছু সংযোজন। দড়িপথ-নৌকাবিহার - সব মিলিয়ে মাঝারি পরিসরেও মন্দ লাগে না। সমোচ্চ বীথিগুচ্ছের বুক চিরে সংকীর্ণ গলিপথ ছায়াছন্ন নির্জনতার সঙ্গী করে। তবে পর্যাপ্ত আলোর অভাব প্রকট।

তারপর, আবার ফিরে এলাম সমুদ্রসৈকতে। এবারের মতন সমুদ্রদর্শনের শেষ সন্ধ্যা। নিবদ্ধ দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম অসীম অপার বিস্ময়ের দিকে। দু'একদিন পরেই অমাবস্যা। প্রাক-কৃষ্ণপক্ষের ম্লানায়মান তিমিরেও উত্তাল সমুদ্রে জোয়ারের প্রাবল্য। উচ্ছ্বসিত তরঙ্গে মুহূর্মুহূ ঢেউ ওঠা পড়ার শব্দ। সৈকতসরণীর ধারে বাঁধানো বসার জায়গায় বসে বসেই সন্ধ্যার সমুদ্র রাতের সমুদ্র হয়ে উঠলো। 

সহসাই শুরু হলো মার্জার-সারমেয় ধারাপাত। সঙ্গে অবশ্য একটি ছাতা ছিলো। কিন্তু সেই একচ্ছত্র আধিপত্য সত্ত্বেও বেশ কিছুটা বর্ষণসিক্ত হয়ে গেলাম। অগত্যা, কোনওক্রমে সামান্য কিছু কেনাকাটা ক'রে হলিডে হোমে প্রত্যাবর্তন। 

প্রতিদিনের মতন সেখানকার ক্যান্টিনেই নৈশাহার। অতঃপর নবমী নিশির মতন একরাশ বেদনা বুকে নিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিদমহলে আশ্রয়।

পরের দিন খুব ভোরে উঠেই ছুটে গেলাম সমুদ্রের কাছে। আমার দুর্ভাগ্য - মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। তাই এবারের যাত্রায় আর সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখা হলো না। প্রবল জোয়ারের জন্য সেদিন সমুদ্রে স্নান করার বাসনাও অধরা থেকে গেলো। 

তারপর পাশের একটি খাবারের দোকানে গিয়ে লুচি-ঘুগনি ও চা সহযোগে প্রাতরাশ। এই ক'দিনের পরিচয়ে দোকানী ভদ্রমহিলা কিছুটা পরিচিতা হয়ে উঠেছেন। জানলাম তিনি আদতে উড়িষ্যার মেয়ে। বর্তমানে বিবাহসূত্রে দীঘায় থাকেন। তার একমাত্র পুত্র গমনক্ষম নয়। ওর চিকিৎসার জন্য উনি একবার কলকাতায় পি জি হাসপাতালে এসেছিলেন এবং ঐ একবারই 
ওনার কলকাতায় আসা। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চ'লে আসার আগে বল এলাম - আপনার দোকানের চায়ের স্বাদ সহজে ভোলার নয়। 

এবার ফেরার পালা। বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই চ'লে এলাম দীঘা রেল স্টেশনে। 

আবারও তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস। মিনিট পনেরোর বিলম্বিত যাত্রা। উঠে বসলাম ট্রেনের কামরায়। প্রচন্ড গরমে দর দর ক'রে ঘাম ঝরছে। জানালার কাছাকাছি আসনে গিয়ে বসলাম। 

মুখ বাড়িয়ে বাইরে তাকালাম। আকাশে আষাঢ়ের চিহ্নমাত্র নেই। নীল দিগন্তে তখন রূপালী মেঘের আগুন।
 

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours