একটা
কথা কয়েকদিন ধরেই লিখব ভাবছিলাম, কিন্তু লিখে ওঠা হচ্ছিল না...তার দুটি
প্রধান কারন, এক — ভারতবর্ষে যে গণতন্ত্রের বিপুল সমারোহ, সেই গণতন্ত্র
প্রতিবাদকে নিজের দুর্বলতা আর প্রতিপক্ষের ‘সঠিক বিচার’ বা সক্ষমতার
পরিচায়ক হিসেবে দেখে... তাই প্রতিবাদটাও পিঠ বাঁচিয়ে করতে হয়...
দুই — প্রতিপক্ষের যাঁরা বিচারক তাঁদের বিচারের দায়ভার সামলে আমিও আর সময় করে উঠতে পারছিলাম না...
মোদ্দা
কথায় আসা যাক... এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার যে দুর্দান্ত ফলাফল হয়েছে, তা
এখনকার আমের খোসার মতোই অনেকখানি সুন্দর..তবে বৃষ্টির অভাবে ভেতরটা পেকে
ওঠে নি...স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে দাঁড়ায় নম্বর ভিত্তিক এই মূল্যায়নের
প্রকৃতপক্ষে কোনো সুমূল্য তো নেই, বরং দুর্মূল্য যথেষ্ট পরিমানে আছে...
আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় কয়েকটা ব্যাক্তিগত বাস্তব উদাহরণ দিই...
১.
একটি মেয়ে দর্শন পরীক্ষায় ১০ নম্বর ছেড়ে এসেছে বলে পরীক্ষার হল থেকে
কেঁদেকেটে বেরিয়েছিল... তার ৩ মাস পরে ফলাফলে সে ৯৯ নম্বর পেয়ে পাস করল
!!!!
২. আরেকটি মেয়ে class IX এই XI-XII এর chemistry
বই প্রায় পড়ে শেষ করে ফেলেছিল... Chemistry নিয়েই তার পড়ার ইচ্ছে ছিল
বহুদিনের... ফলাফলে chemistry-ই তার 6th subject বলে গন্য হল !!!
৩.
অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে একজন নিজের মুখে বলেছে 4 নম্বর সে attend
করেনি... এমনকি অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিল সে ৮০ র বেশী
পাবে না, ফলাফলে সে অঙ্কে ১০০ তে ১০০ পেয়ে নিজেকেও অবাক করে দিল !!!
৪.
যে কি না সাধারণ কয়েকটা শব্দের অর্থ জানে না, মুখস্তের বাইরে স্বকীয় ভাবে
একটা লাইন তো দূরের কথা একটা শব্দও ঠিক মতো লিখতে জানে না, সে “কলা ”বিভাগ
থেকে মূল্যায়নের অসামান্য কলায় চমকপ্রদ result করে ফেলেছে !!!
এরকম
উদাহরণ দিতে থাকলে উদাহরণের শেষ হবে না... এখন বিষয়টা হচ্ছে, বড় রা বলবেন
“ যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে, ভেবে লাভ নেই ”... তাই এই ‘বড়’দের জন্যই এত
বছরের প্রথায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন এল না...
এই
অসামান্য সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা আর মেধা অন্বেষণের এই অপূর্ব পরিকাঠামোতে
দেশের কী হাল হয় তা বোঝাই যাচ্ছে... তাই এখন যদি নীরব থাকেন তাহলে সতর্ক
করে দেব, নীচে উল্লেখ করা ঘটনা গুলো ঘটার সময়ও একদম নীরব থাকবেন...কারন
অসময়ে বীরত্ব প্রদর্শন করে নিজেদের বীর বলে দাবী করবেন না...
১.
যখন আপনাদের ছেলে মেয়ে teen age এ শিক্ষা আর শিক্ষক–শিক্ষিকাদের চাপে ভুল
পথে যেতে যেতে বখে যাবে, তখন চুপ থাকবেন.. (কারন সেই শিক্ষা আর
শিক্ষক–শিক্ষিকারাও আপনাদেরই নির্বাচন করা )
২. যখন কোনো আমানুষ শিক্ষক তার মেয়ের বয়সী ছাত্রীকে নির্যাতন করবে, তখনও চুপ থাকবেন.. (কারন সেই শিক্ষকও আপনাদেরই নির্বাচন করা )
৩.
যখন কোনো মেয়ে, ছেলেদের দ্বারা নির্যাতিত হবে, তখনও চুপ থাকবেন, (কারন সেই
ছেলে যে শিক্ষায় বড় হয়ে উঠেছে তাও আপনাদেরই নির্বাচন করা )
৪.
ভাঙা ব্রিজের চাঁই এর তলায় শুয়ে যখন কোনো শিশু চিৎকার করবে, আপনারা তখনও
চুপ থাকবেন (কারন সেই ইঞ্জিনিয়ার ও আপনাদেরই নির্বাচন করা )
৫.
কোনো ডাক্তারের দল যখন শিশুদের কিডনী পাচার করবে, কোনো ডাক্তার যখন ভুল
চিকিৎসায় রোগীকে মেরে ফেলবে, তখনও আপনারা চুপ থাকবেন (কারন সেই ডাক্তারও
আপনাদেরই নির্বাচন করা )
৬. যখন নেতানেত্রীরা আসনে
বসে স্বেচ্ছাচারিতা করবে আপনারা তখনও চুপ থাকবেন.. (কারন সেই নেতানেত্রী যে
শিক্ষায় বড় হয়ে উঠেছে তাও আপনাদেরই নির্বাচন করা )
জাগার সময়টা ভোর বেলা..তাই শিশুর জীবনে অন্ধকার নেমে আসার আগে শিক্ষাকে ভোরের প্রথম আলোর মতো জাগিয়ে তুলুন...
উচ্চমাধ্যমিকের
রেজাল্ট নিয়ে মাথা না ঘামালেও হয়তো চলে..কিন্তু অনেক জীবন নিজের তথা
রাষ্ট্রের জীবন থেকেও অবলীলায় যে হারিয়ে যাচ্ছে, তা চোখ মেলে দেখতে শেখা
দরকার...প্রাপ্যের চেয়ে কম পেলে মূল্যবোধ জাগার সুযোগ হয়তো বা থাকে, তবে
প্রাপ্যের বেশী পেলে মূল্যবোধ অলক্ষেই অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়...তাই, এগিয়ে
যাওয়াই ধর্ম বটে, তবে পেছনের অতীতটাকে অস্বীকার করে নয়...কারন—
“সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাৎের আমি”...
Post A Comment:
0 comments so far,add yours