fiture
সুমনা ভট্টাচার্য বসুঠাকুর, সমাজকর্মী, কলকাতা: 
চলে গেলেন সুষমা স্বরাজ। বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। আচমকা চিরতরে। হাজার হলেও বিদেশমন্ত্রী ছিলেন কিনা। তাই হয়তো দেশবাসীকে কাঁদিয়ে পাড়ি দিলেন চিরঘুমের অচেনা দেশে।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আবুধাবিতে হয়েছিল ওআইসি অর্থাৎ অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কান্ট্রিজের সম্মেলন । পাকিস্তানের প্রবল আপত্তি সত্বেও ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সেখানে প্রথম প্রতিনিধিত্ব করেন । ৫৭টি ইসলামিক রাষ্ট্রের মঞ্চে সুষমা স্বরাজ প্রথম ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী হিসাবে  প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন ।

এর আগে ইন্দিরা গাঁধী মন্ত্রিসভার সদস্য , ফকরুদ্দিন আলি আহমেদকে , ১৯৬৯সালে ওআইসি র  রাবাত সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । কিন্তু মরক্কোর রাজধানী পৌঁছনোর পর পাকিস্তানের যুক্তিতে , ভারতের আমন্ত্রণ বাতিল করেছিল ওআইসি । তারপর থেকে ওআইসির যাবতীয় অনুষ্ঠানে ভারতকে ব্রাত্যই রাখা হয়েছিল । সাধারণত ওআইসি পাকিস্তানের সমর্থক এবং মাঝেমধ্যে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করে তারা। কিন্তু এই প্রথম , পাকিস্তানের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (OIC )–এর সভায় প্রথম প্রতিনিধিত্ব করে বড় কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছিল ভারত ।

প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সেখানে বলেছিলেন , যে সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকাকে অস্থির করে রেখেছে , গোটা বিশ্বকে বিপদের মুখে দাঁড় করিয়েছে , তার মোকাবিলায় চলতি লড়াই কোনও বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে নয় । 
সুষমা স্বরাজ আর কী কী বলেছেন, একনজরে দেখে নিন-

( ১ ) ওআইসি সম্মেলনে সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই ধর্মের অপব্যাখ্যার প্রসঙ্গকে টানেন সুষমা স্বরাজ। তিনি কঠোরভাবে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বিরোধিতা করেন এবং ভারত যে এই ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাও পরিষ্কার করে দেন। তিনি বলেন , ধর্মের অপব্যাখ্য়া করে সন্ত্রাস করা হচ্ছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই মানে ধর্মের বিরুদ্ধে অভিযান নয়। তিনি সেই সঙ্গে আরও যুক্ত করে বলেন, ইসলাম মানে শান্তি, আল্লাহের ৯৯টা নাম মানে হিংসা নয়। তেমনি প্রতিটি ধর্মই শান্তির ।

( ২ ) বিদেশমন্ত্রী বলেন, ভারতে ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার ১৮৫ মিলিয়ন হল মুসলিম। 'আমাদের দেশে বসবাসকারী মুসিলম ভাই ও বোনেরা বৈচিত্রের মধ্যে এক প্রাণভোমরা। তাঁরা তাঁদের মতো করে নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসকে পালন করেন এবং ভিন্ন ধর্মালম্বীদের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করেন। ভারেতে খুবই কতিপয় কিছু মুসলিম আছেন যাদের মৌলবাদীরা প্রোপাগান্ডা এবং চরমপন্থার পথে পরিচালনা করা যায়।'
 
( ৩ )সুষমা স্বরাজ তাঁর বক্তব্যে একথা বলেন যে , 'সন্ত্রাস জীবনকে যেমন ধ্বংস করছে, তেমনি আঞ্চলিক স্থিরতাকেই নষ্ট করছে এবং বিশ্বকে একটা ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। সন্ত্রাস বাড়ছে এবং এতে শিকারের সংখ্যাটাও বেড়ে যাচ্ছে।'

( ৪ ) ওআইসি সম্মেলনে বেদ-কেও টেনে আনেন সুষমা স্বরাজ। ঋকবেদে যে ঈশ্বরকে এক ও অদ্বিতীয় বলে দেখানো হয়েছে এবং জগতে এটাই যে সত্য তা তুলে ধরেন তিনি। বিদেশমনমন্ত্রী বলে আসলে এক এক মানুষ তাঁর ধর্মের ভেদে ঈশ্বরকে তাঁর মতো করে কল্পনা করেন। কিন্তু, আসলে ঈশ্বর একজনই।

( ৫ ) এদিন ওআইসি-র মঞ্চে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস মন্ত্রকেও হাতিয়ার করেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, 'আমি মহাত্মা গান্ধীর দেশ থেকে এসেছি, যেখানে প্রতিটি প্রার্থনাই শেষ হয় শান্তির কামনা করে।'

( ৬) সন্ত্রাসের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দেন তিনি । পাকিস্তানের নাম না করে তীব্র আক্রমণ করেন সুষমা। ইসলামিক দুনিয়ার সামনেই বলেন, 'মানবতাকে রক্ষা করতে হলে সেই সমস্ত দেশগুলোকে চরম বার্তা দিতে হবে যারা জঙ্গিদের মদত দেয় এবং আশ্রয় ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। এইসব দেশে চলা সন্ত্রাসের কারখানাগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে এবং সেই দেশে গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যাতে কোনও সাহায্য বা আশ্রয় না পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে ।'

পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে সেই সময় যথেষ্ট  টানাপড়েন চলছিল । কিন্তু  তার মধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম না করে পাকিস্তানকে তুলোধনা করেছিলেন  ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
সেই সদা হাস্যময়ী সুভাষীনি এখন যে ইহলোক ছেড়ে পরলাকেই গমন করলেন সবাইকে স্তভিত করে। তবু জেনে রেখ, তোমার সুষমায় তোমার ভারত যে আজ সুষমায়িত। আলবিদা সুষমা স্বরাজ।
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours