মহ: এনামুল হক, ফিচার রাইটার, বর্ধমান:

রাষ্ট্র এবং সমাজের কল্যাণে সংবাদ ও সাংবাদিকদের অবদান অপরিসীম। দেশ দেশান্তর হতে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করেন সংবাদ সংস্থায় যুক্ত থাকা মানুষজন।
শুধুমাত্র রাজ্য রাষ্ট্র রাজনৈতিক দলের নেতা মন্ত্রী শাসন শোষণ ঘাত প্রতিঘাতের খবর সংগ্রহ করেন সাংবাদিক রা তা কিন্তু নয়।
আকাশ, পাহাড়, সমুদ্র, সমতল, নদী, সড়ক পথ, রেলপথ, আকাশ পথ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শাসন, সংবিধান থেকে সংসার এমনকি কর্ম সংস্থান সহ সকল কিছুর সন্ধান দিতে পারেন সাংবাদিকরা।
শুধুমাত্র মানুষের প্রতি খবর প্রেরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন তারা।
সমগ্র উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণী জগতের প্রতিও থাকে তাদের শ্যেনদৃষ্টি। তাইতো সংবাদ মাধ্যম কে গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এটি একটি সম্ভবতঃ শকুন। দীর্ঘ সময় ধরে কতশত চিত্র সাংবাদিক তার উড়ে যাওয়ার প্রহর গুনছেন। শকুনটি একটি চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি জীবনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সে আকাশে ডানা মেলে উড়তে সুযোগ পায়নি। তাকে খাঁচাবন্দি জীবন থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তবুও সে মুক্তির সাথে সাথেই নিজেকে তৎক্ষণাৎ উড়িয়ে নিয়ে যেতে সাহস করছে না। অথচ তার নিজের ডানার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আছে উড়তে পারার। তাই বারংবার ডানা দুটি প্রসারিত করে নিজেকে উড়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য চিত্র সাংবাদিক। কখন এই মুক্ত শকুনটি তার ডানা মেলে আকাশে উড়ে, সেই বিরল দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করবেন সেই প্রতিক্ষায় শকুনের পানে শ্যেনদৃষ্টিতে তারাও চেয়ে আছেন।
অনেক কসরতের পরে শকুনটি নিজেকে উড়ে যাবার উপযুক্ত করে নিয়ে তার ডানায় ভরসা করে আকাশ পানে উড়ে গেল।
জীবনে মুক্তি লাভের পর দ্বিতীয়বার উড়ে যাওয়া যে কতটা অনাবিল আনন্দের তা বিশ্লেষণ করতে পারা আমার যোগ্যতার দ্বারা মোটেও সম্ভব না।
শকুনের তো উড়তে পারাটা জন্মগত অধিকার । এই অধিকার তাদের সহজাতরা কেড়ে নেয় না।
সে উড়বেই এতে অবাক হবার কিছু নেই।
আমার রাজ্যের এবং আমার দেশের অগণিত চিত্র সাংবাদিক, সাংবাদিক, লেখক, এখন এই শকুনের মতো খাঁচায় বন্দি। তারা উড়তে পারেন না। সত্য উন্মুক্ত করতে পারেন না। তারা তাদের কলমের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলছেন। আমরা তা দেখতে পাচ্ছি অহরহ দিবারাত্র।
একটা নারীকে পুরুষের নজর মাপতে চক্ষু চিকিৎসক হবার দরকার পড়ে না।
একজন মাকে তার সন্তানের প্রতি লালন পালনের জন্য যেমন নার্সিং ট্রেনিং নেওয়ার প্রয়োজন হয় না কোনোদিনও। স্নেহ এবং মাতৃত্বই তাকে বেটার নার্স তৈরী করে দেয়।
আমরা সংবাদ পাঠকগণ বা শ্রোতাগণ দেখছি, শুনছি রাষ্ট্র এবং রাজ্যের সাংবাদিক কূল যেন চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি শকুনের ন্যায় হয়ে গেছেন। 
আমাদের হাতে সেই দৃশ্য ধরে রাখার মতো ক্যামেরা নেই ঠিকই।  
কিন্তু আমরা চোখ দিয়ে দেখছি সেই সকল দৃশ্য প্রতিক্ষণে প্রতিপলে।
তবু আজও ভরসা রাখি তাদের সাংবাদিকতায় । আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তারাও একদিন তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণে সত্য প্রকাশ করার জন্য আকাশে উড়ে পাড়ি দিবেন।দেশের একশত পঁচিশ কোটি সাধারণ মানুষ রাষ্ট্র এবং রাজ্যের সাংবাদিকদের প্রতি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। দীর্ঘকাল ব্যাপী সাংবাদিকগণ সত্য প্রকাশ না করতে পারা নামক খাঁচায় বন্দি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে কখন ক্ষিপ্রবেগে তাদের সত্য প্রকাশের ডানায় ভর করে আবার আকাশে ওড়ার চেষ্টা করেন সেই সুদৃশ্য দেখার অপেক্ষায় অপেক্ষমান।
সমগ্র সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে উপরিউক্ত এই অভিমান নিশ্চয় নয় কিন্তু দেশবাসী হিসেবে একটা সন্দেহ তো নিশ্চিত আবর্ত হচ্ছেই। 
সেই কত যুগ আগে আমরা বাংলার সংবাদপত্রে দেখেছিলাম বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারি, ট্রাম কেলেঙ্কারি। বাস্তবিক ব্রেকিং নিউজ ছিল সেগুলি। তারপর? আর দেখি না কেন সেরকম কোনও খবর? কে তার জবাব দেবে? 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours