শ্রাবণী মজুমদার, লেখিকা, বীরভূম:

গোপন কথাটি রবে না গোপনে,

উঠিল ফুটিয়া নীরব নয়নে।

না না না, রবে না
গোপনে।
আগেও অনেক কিছু ছিল তবে সব রাখঢাক করে। যে বুড়ো মানুষটি মাথায় বইয়ের ঝাঁপি নিয়ে  সত্যনারায়ণের পাঁচালী, মেয়েদের ব্রতকথা বিক্রি করতে আসত, ইতিউতি চেয়ে বাড়ির উঠতি কিশোরকে ইশারায় কাছে ডেকে বলতো, কোক শাস্ত্র নেবে? 
বিয়ে বাড়িতেও  আদিরসাত্মক ছড়া বের হতো। আর সেটা ছোটদের নাগালের বাইরে!
আর আজ! সত্যি হ্যাশট্যাগ মী ট্যুর যুগে গোপন কথাটি রবে না গোপনে। ইন্টারনেটের দৌলতে আজ সব মানুষের মুঠোয়।
এবার আসি, এক চর্চিত প্রশ্নে। সম্প্রতি ইউরোপের একটি অনলাইন শব্দ কোষ ভান্ডার এই নিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। 
 নারীর দেহের গোপনাঙ্গ নিয়ে "পুসিপিডিয়া" এই অনলাইন শব্দ কোষ ভাণ্ডার এখন সুপার ডুপার চর্চার বিষয়। অবশ্য পুসি বলতে অনেকের মতে, নারীর গোপনাঙ্গকে দেওয়া আধুনিক যুগের গালি।  
হ্যাশট্যাগ মী ট্যুর যুগে আজ মানুষের কাছে গোপন রবে না গোপন কথাটি।
ছোট থেকেই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী বিপরীত লিঙ্গের অধিকারী হিসেবে পুরুষের নারী দেহ নিয়ে কৌতুহলের সীমা নেই! নারীরা কী কামোদ্দীপনায় পুরুষের সমকক্ষ? 
বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষের এই আগ্রহ বেশি থাকে? থাকবেই বা না কেন? যে দেহে তার সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে আছে। তাকে ঘিরে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক।
সম্প্রতি নারীর কামেচ্ছা নিয়ে গবেষণা চলছে বিস্তর। দ্য জার্নাল ওফ সেক্স এণ্ড মারিট্যাল থেরাপি সাঁইত্রিশ শতাংশ আমেরিকান মহিলা নিয়ে গবেষণা করে। তাঁরা বলেন, উত্তেজনায় ভগাঙ্কুর তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, ১৮ শতাংশ মহিলার অভিমত শুধু মাত্র সঙ্গমই যথেষ্ট। 
ইন্ডিয়ানা বিশ্ব বিদ্যালয়ের যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক এক গবেষক ডেবি হারবেনিক বলেন, বেশিরভাগ ভাগ মহিলা চায় মিলনের সময় পুরুষ তার দেহের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করুক। এই গবেষণা করা হয়েছে ১৮ থেকে ৯৪ বছর বয়সী মহিলাদের নিয়ে। প্রায় হাজার জন মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়ে ও এম জি ওয়াই নামে এক সংস্থাকে সাথে নিয়ে এই গবেষণা ধর্মী কাজ করে। এক্ষেত্রে স্যাম্পেল এরিয়া যথেষ্ট ছিল বলবো না। তবে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায় বৈকি! সবাই কামেচ্ছা নিয়ে আগ্রহের কথা বললেও ৯ শতাংশ মহিলা বলেন, চুম্বনের মধ্যে দিয়ে কামোত্তেজিত হন। প্রায় ৬৭ শতাংশ মহিলা বলেন, তাঁরা মিলনের সময় ভগাঙ্কুর স্পর্শ করা পছন্দ করেন। 
মনোবিদ ফ্রয়েড অবশ্য বলেন, ও বয়োসন্ধিকালে ভগাঙ্কুর স্পর্শ গুরুত্ব পেলেও, পুরুষের সঙ্গ পাওয়ার পর যৌন মুখে যৌন সুখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে নারীর কাছে। আর এই উত্তেজনার সময় নারীর বীর্যপাত ঘটে। অনেকেই অবশ্য সেটা বুঝতে পারেন না।  তবে এই স্খলন পুরুষের মতো না হলেও, তার তারল্যের তারতম্য আছে। সেক্ষেত্রে পুরুষের মতো শক্তিহীন হয় না।
বয়ঃসন্ধিকালে বীর্যস্খলন হলে তার মানসিক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। তাকেও ভাবিত করে, নারী দেহেও কী একই ঘটনা ঘটে?
এই কৌতুহল থেকেই গবেষণা। তার আগে বলে নিই মহামতি চানক্যের নারী বিষয়ক কিছু শ্লোক।
স্ত্রীণা দ্বিগুণ আহারৌ লজ্জা চাপি চতুর্গুণ। শুধু খাওয়াটাই দেখলে? সংসারের ঝক্কি কী কম সামলাতে হয়! তারপরে বলছেন-- সাহস ষড়গুণ চৈব কামক্ষাষ্টগুণস্মৃত। পুরুষের থেকে নারীদের আট গুণ কামেচ্ছা।  তবুও তারা তা প্রকাশ করেন না কেন? 
শুধু মাত্র লজ্জা ও সহনশীলতার জন্য। রাস্তা ঘাটে শৌচকর্ম করতে পুরুষকে দেখা যায়। কিন্তু নারীরা পারেন না ওই একই কারণে। অথচ তাদের পরীক্ষা দিতে হয়। কামেচ্ছা দেখালেও বিপদ, না দেখলে আরও বিপদ!
অন্যদিকে, বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা আছে মিলনে অনিচ্ছুক নারীকে বশে আনার টোটকা। এক, নারীকে উপহার দাও। দুই, না শুনিলে যষ্ঠির ব্যবহার কর। এব্যাপারে অনেকেই এক মত। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মগ্রন্থ নারীকে এক তরফা রেয়াত  করে নি। তখনই মনে হয়, নারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার নিয়ম যে করেছে, তার লিঙ্গ ভেদ আছে। সে যে পুরুষ।
সে বলতে চায়----
চুম্বন করি নি আগে, ভুল হয়ে গেছে/ গ্রহণ করি নি আগে, ভুল হয়ে গেছে।
 
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours