ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ মাড়ো গ্রামের ঐতিহ্যপূর্ন দারু নির্মিত অপরূপ বেশভুষা ও সাজসজ্জায় সজ্জিত বলরাম রেবতীর বিগ্রহ ভক্তজনের মন আকৃষ্ট করে! বলরাম রেবতীর উদ্দেশ্যে আজও প্রত্যহ চার সের চালের অন্নভোগ নিবেদন করা হয়! নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর বংশধর গোস্বামী বংশের সিদ্ধ সাধক চন্দ্রশেখর গোস্বামী মাড়ো গ্রামের উত্তরাংশে একটি ডাঙায় শিলা নির্মিত বলরামের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে পূজা -অর্চ্চনা করতেন! বলরামের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ঐ স্হানটির নাম করন হয় ' বলরামপুর ডাঙা'!
জনশ্রুতি, একবার বর্গীনেতা ভাষ্কর রাও তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে বলরামপুর ডাঙায় উপস্হিত হয়ে চন্দ্রশেখর গোস্বামীকে অন্নপ্রসাদ সেবা করাতে অনুরোধ করেন!
সাধক চন্দ্রশেখর চার সের চালের স্বপাক অন্ন আরাধ্য দেবতা বলরামের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে বর্গীদস্যুদের প্রসাদ গ্রহনের অনুরোধ করেন! ঐ যৎসামান্য অন্নভোগ সমস্ত লোকেদের উদরপূর্তি হওয়ায় ,বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যান, মারাঠা বর্গীনেতা ভাষ্কর পন্ডিত! এই অলৌকিক ঘটনায় অভিভুত হয়ে চন্দ্রশেখর গোস্বামীর চরনে নিজ মস্তক অবনত করে তাঁর ইষ্টদেবতা বলরামের নামে তিন'শ পঁয়ষট্টি বিঘা নিষ্কর জমি দান করেন!
কিংবদন্তী, একদিন চন্দ্রশেখরের আরাধ্য দেবতা বলরামের শিলা বিগ্রহটি চুরি হয়ে যায়! আহার নিদ্রা ত্যাগ করে দিবারাত্র ইষ্টদেবতকে ডাকেন, তাঁর দুচোখের নয়ন জলে বুক ভেসে যায়! ভক্তের আকুল ডাকে তাঁর আরাধ্য দেবতা সাড়া দিলেন! পরম ভক্তকে স্বপ্নাদেশ দিলেন, " চন্দ্রশেখর তুই বিষ্নুপুরে যা ! সেখানে পোকাবাঁধের পাড়ে একটি নিম গাছ আছে, সেই গাছ থেকে দুধ পড়ছে! ওই গাছটি কেটে এনে নবদ্বীপের কুড়োরাম মিস্ত্রীকে দিয়ে, আমার বলরাম রেবতীর যুগল মূর্ত্তি নির্মান করিয়ে প্রতিষ্ঠা কর !আমার পূজা যেভাবে করছিস সেই নিয়ম মেনেই করবি! আমি তোর কাছেই থাকবো "
বলরামপুর ডাঙা থেকে মাড়ো গ্রামে চন্দ্রশেখর চলে আসেন এবং ইষ্ট দেবতার নির্দ্দেশ মতো গ্রামে দারু নির্মিত বলরাম রেবতীর যুগল মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা শুরু করেন! আজও একই নিয়মে শুদ্ধাচারে প্রত্যহ বলরাম রেবতীর পুজা হয়!
বর্তমানে বলরামপুর ডাঙাটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম! এই প্রামের পাশেই আর একটি গ্রাম আছে 'শ্যমসুন্দর পুর ' কিন্তু গ্রামে একটিও হিন্দু পরিবার নেই! শোনাযায়,মাড়ো গ্রামের গোস্বামী পরিবারের শ্যাম সুন্দর গোস্বামী নামে কোন ব্যক্তি এই গ্রামটির পত্তন করেন! পরে কয়েকটি মুসলিম পরিবার এখানে বসবাস শুরু করলে আবার তিনি মাড়ো প্রামে প্রত্যাবর্তন করেন !
মাড়ো গ্রাম আজ এক বৈষ্নব তীর্থক্ষেত্র, এখানে রয়েছে চন্দ্রশেখর গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত বলরাম রেবতীর যুগল মূর্তি, কিশোরী মোহন প্রতিষ্ঠিত রাধামাধব মন্দির, বৈষ্নব আখড়ায় মাখমলাল গোস্বামীর সমাধিক্ষেত্র খড়ি নদীর পূর্ব পাড়ে গোস্বামীদের সমাধিক্ষেত্র! এই বংশের উত্তর পুরুষ পরম বৈষ্নব কুলাচার সিদ্ধ শ্রীপাদ বিনয়কৃষ্ন গোস্বামীর বসতবাটীর সন্মূখে সাধক চন্দ্রশেখর গোস্বামীর সমাধি মন্দির এক পরম পবিত্র স্হানরূপে আজ পরিচিত!
(চলবে )
Post A Comment:
0 comments so far,add yours