old temple

ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ  জগন্নাথ ধামের  গোবর্ধনমঠের  অধ্যক্ষ  শঙ্করাচার্যের  সাথে  রূপেন্দ্রর  সাক্ষাৎকারটি  আদৌ  ফলপ্রসু  হয়নি! শঙ্করাচার্য  জানতে  চেয়েছিলেন  তিনি  কি  চান? প্রত্যুত্তরে  রূপেন্দ্র নিজের  পরিচয়  দিয়ে  বনেছিলেন , তিনি  গৌরমন্ডলের  বর্ধমানভুক্তি  থেকে  এসেছেন  কিছু  সামাজিক  অনুশাসন  সম্পর্কে  অবহিত  হতে  চান!স্ত্রী  শিক্ষা, বাল্যবিবাহ  ও সতীদাহ  বিষয়ে!  ধর্মগুরু  রূপেন্দ্রর  প্রশ্ন শুনে  বিস্মিত  হয়ে  জানতে  চেয়েছিলেন  তিনি  সন্ন্যাসী কিনা? উত্তরে  রূপেন্দ্র  বলেছিলেন, তিনি  গৃহী  এবং  দীক্ষাও  নেননি  সৎ গুরুর  সন্ধান না  পাওয়ায়!
        
শঙ্করাচার্য, রূপেন্দ্রকে  পরামর্শ  দিয়েছিলেন  সর্বপ্রথম  সৎগুরুর  সন্ধান  করে  দীক্ষা  নিতে ,  নাহলে মুক্তি  পাবে  না! কিন্তু রূপেন্দ্র  পাল্টা  বলেছিলেন, তিনি  নিজের  মুক্তির  জন্য  আসেন  নি, তিনি  জানতে  এসেছেন, স্ত্রী শিক্ষা, বাল্যবিবাহ  ও  সহমরন  সম্পর্কে  তাঁর  মতে  সামাজিক  অনুশাসন  কি?
      শঙ্করাচার্য  রূপেন্দ্রকে  বোঝান, হিন্দু মতে  ব্রাক্ষ্মন  কন্যা  আট  বছর  বয়স  পর্য্যন্ত    সারস্বত  সাধনা  করতে  পারে  ! তারপর  গৌরী  দান  এবং  এরপর   তাদের  স্বামীই  পরমদেবতা! আর  অব্রাক্ষ্মন  কন্যার  সারস্বত  সাধনার  অধিকার  নেই, তাদের  জপ,তপ   ব্রত  ইত্যাদি  করতে  হবে  এবং  অষ্টমবর্ষে  গৌরী  দান!বিধবার  সহমরন অন্যথায়  দীক্ষাগ্রহন,গুরুচরনারবিন্দ - আশ্রিত  নিষ্ঠাময়ীর  জীবন  যাপন!
           বিরক্ত  হয়ে  রূপেন্দ্র  প্রস্হান  করলেন  গোবর্ধন মঠ  থেকে! অনতিদুরে  এক  অতি বৃদ্ধ  সন্ন্যাসী  তাঁকে  পরামর্শ  দিলেন  কাশধাম  যাওয়ার  সেথানেই  মিলবে  তাঁর  পথের  দিশা!তিনি  ব্যাস কাশীতে  সাক্ষাৎ  পেলেন  ত্রিকালদর্শী  তৈলঙ্গস্বামীর !কিন্তু  মৃন্ময়ীকে  প্রত্যাক্ষান করার  জন্য  তৈলঙ্গস্বামী রূপেন্দ্রকে  ভৎসনা  করেন! পুনরায়  ধ্যানস্হ  হন  মহা সন্ন্যাসী! নিঃশব্দে  ব্যার্থমনোরথ  হয়ে  প্রস্হানোদ্যত  রূপেন্দ্রকে   সন্ন্যাসী  বললেন, "কিরে  বেটা  ফিরে  যাচ্ছিস?"
      করজোড়ে  ফিরে  দাঁড়ালেন  রূপেন্দ্র!  সন্ন্যাসী  নিমীলিত নেত্রে  বললেন, " এক দফে  গলতি  কিয়া  বেটা, দুসরে  দফে  নেহি "
       ঝরঝর  করে  কেঁদে  ফেললেন  রূপেন্দ্র,করজোড়ে  বললেন, " আমি  কি  করতে  পারি  বাবা?"
      " তোর মা, তোর  জন্মভুমি  যে  তোর  পথ চেয়ে  বসে  আছে! তার  মায়ের  অতৃপ্ত বাসনা  পুরন করার  দায়িত্ব  যে  তোর  মায়ের, সে  তোকে  ডাকছে  শুনতে  পাচ্ছিস  না?"
       " কার  কথা  বলছো  বাবা?" জিঞ্জাসা  করলেন  রূপেন্দ্র?
  স্মিত  হেসে  সন্ন্যাসী  বললেন,"তেরি  চুন্নিমুন্নি  মায়ী "
        তৈলঙ্গস্বামী  বুঝিয়ে  বললেন, তার  কন্যার  কথা! রূপেন্দ্র  বুঝতে  পারলেন, কুসুমমঞ্জরীর  সাধনা  ব্যার্থ  হয়নি, সে  অনন্তলোকে  যাত্রার  পূর্বে  নতুন  প্রান  সঞ্চার  করে  গেছে!কবি  ভারতচন্দ্রের  আর্শীবাদ  ব্যার্থ  হয়নি!
  রূপেন্দ্র  এবার  গৃহাভিমুখে  যাত্রা  করলেন! জন্মভুমির  দিকে  আত্মজার  সন্ধানে....রূপমঞ্জরীর  খোঁজে..
(চলবে)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours