old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মানকর গ্রামের তিন কিঃমিঃ পশ্চিমে মাড়ো গ্রাম !সুদুর অতীতে মাড়ো ও মানকর একটিই গ্রাম ছিল! মরামারী ও মড়কে গ্রামের মধ্যবর্তী অংশে বহু পরিবার নিশ্চিন্হ হয়ে যায়! কাটোয়ার শ্রীখন্ডের পর মাড়ো গ্রামের বৈষ্নাবাচার প্রসিদ্ধির বিষয় বিশিষ্ট গবেষক যঞ্জেশ্বর চৌধুরী তাঁর ' বর্ধমানঃ ইতিহাসও সংস্কৃতি' গ্রন্হের দ্বিতীয় খন্ডে উল্লেখ করেছেন! " অষ্টাদশ শতকে বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে বর্ধমানের রাজাদের পৃষ্টপোষকতায় মাড়ো গ্রামে একটি চতুষ্পাঠী টোল স্হাপিত হয়েছিল!" মাড়ো গ্রামে তখন অনেক পন্ডিত ও সাধকের বাসভুমি ছিল! সাধক মাখনলাল গোস্বামীর যোগসিদ্ধির কথা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে! জনশ্রুতি, তিনি তাঁর যোগ সাধনার ক্ষেত্র বাগান পুকুরের মাঝখানে জলের উপর গামছা পেতে রাত্রে যোগ সাধনা করতেন! রঘুনন্দন গোস্বামী ১১৯৩ বঙ্গাব্দে মাড়ো গ্রামে জন্মগ্রহন করেন! 
তাঁর পিতা কিশোরী মোহন গোস্বামী, তিনি নিত্যানন্দ গোস্বামীর বংশধর! অষ্টাদশ শতকে মাড়ো গ্রামের রঘু নন্দন গোস্বামী সমাজ সংস্কারমূলক গ্রন্হ ও তার সহজবোধ্য ব্যাখ্যার জন্য প্রভুত খ্যাতি অর্জন করেন!আজও তাঁর স্মৃতি শাস্ত্রের টীকাগুলি প্রামান্য গ্রন্হরূপে বিবেচিত হয়! ১২৩৮ বঙ্গাব্দে তিনি ' শ্রী শ্রী রাম রসায়ন ' গ্রন্হ রচনা করেন! তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্হগুলি হ'লো, বাংলা ভাষায় শ্রীকৃষ্নলীলা বিষয়ক ' রাজাদের' এবং সংস্কৃত গ্রন্হ রাধামাধবোদয় ' , 'গৌরাঙ্গ চম্পু ', ' দেশিকা নির্নয় ', ' বৈষ্নব ব্রত নির্নয় '' শ্রী গৌরাঙ্গ বিরুদাবলী ', শ্রী মদ্ভাগবতের সংশয় শাতনী টীকা, ছন্দোমঞ্জরীর টিকা, সদাচার নির্নয়, রোগার্নব তারিনী, শরীর বিবৃত্তি, লেখ - দর্পন, হরিহর স্তোত্র প্রভৃতি! তাঁর রচিত গ্রন্হের সংখ্যা সাঁইত্রিশটি! সেই সময় এতগুলি উন্নতমানের গ্রন্হ রচনার জন্য না অ্যাডাম স্মিত তাঁর ভুয়সী প্রসংশা করেন! ' শ্রী শ্রী রামরসায়ন গ্রন্হে তাঁর বংশপরিচয় উদ্ধৃত করেছেন! নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর পৌত্র গোপীজন বল্লভ বর্ধমান ( বর্তমান পূর্ব বর্ধমান) জেলার নোতা গ্রামে বসতিগড়ে তোলেন! তাঁর পুত্র রামেশ্বর ইটাবট গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন! তাঁর পুত্র নৃসিংহদেব মাড়ো গ্রামে চলে আসেন এবং স্হায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন!তাঁর পৌত্র কিশোরী মোহন এবং কিশোরী মোহনের পুত্র রঘুন্দন! তিনি হলেন নিত্যানন্দ প্রভুর অধস্তন দশম পুরুষ! রঘুনন্দন গোস্বামী সারা জীবন সাধন, সংযম, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করেন, নিজে আদান্ত বৈষ্নব ছিলেন,আজীবন নিরামিষ ও হবিষ্যান্ন আহার করেও মৃত্যু শয্যায় মাগুর মাছের ঝোল খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন!তাঁর ইচ্ছানুসারে গ্রামের শতাধিক ব্রাক্ষ্মনকে নিমন্ত্রন করে ভোজন করানো হয়!তারপর তাঁর সামনে মাগুর মাছের ঝোল আনা হলে তিনি শয্যা থেকে একদৃষ্টে কিছুক্ষন নিরীক্ষন করে ইশারায় সরিয়ে নিতে বলেন! তাঁর আত্মীয়রা বুঝলেন, তাঁর মাগুর মাছের ঝোল খাওয়ার ইচ্ছা তিনি নিবৃত্ত করলেন! 
এই ঘটনায় প্রমানিত হ'ল, সাধুব্যক্তি নিবৃত্তি মার্গ গ্রহন করলে আসক্তি শূন্য হয়ে পরমধাম প্রাপ্ত হ'ন! (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours