কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:


"দের সে আয়ে, পর দুরুস্ত আয়ে!"
দেরী করে এলেন। কিন্তু ঠিকঠাক এলেন। রাহুল গাঁধির অবস্থাও ঠিক তাই। আর এসেই নেমে পড়লেন কংগ্রেসের 'ড্যামেজ কন্ট্রোলে'।

সীমান্তের ওপারে হাওয়া অনবরত গরম করে তুলছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সীমান্তের এপারের হাওয়া গরম করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাহুল গাঁধি। পাশে পেয়ে গেছিলেন সিপিএমের মতো কিছু কট্টর বিজেপি বিরোধী শিবিরকে। যাঁদের নিয়ে তিনি পৌঁছে গেছিলেন কাশ্মীরের হাল সরেজমিনে দেখতে।

ওদিকে সমানে তড়পে চলেছে পাকিস্তান। এই তড়পানির আরও কয়েক মাত্রা বেড়ে গেছে জি সেভেন সামিটের পর। কারণ সেখানে কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে ছলে বলে কৌশলে, কোনও ভাবেই বেকায়দায় ফেলতে পারেননি ইমরান। উল্টো নিজের দেশেই, বিরোধী শিবিরের চাপে পড়ে গেছেন তিনি। এই চাপ কাটাতে তিনি শেষ পর্যন্ত কোন রাস্তায় হাঁটেন, তা বলা মুশকিল। এদিকে গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জোর সক্রিয়তা দেখা দিয়েছে সীমান্তের ওপারে। কানে আসছে অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝনানি। ঠিক এই পরিস্থিতিতে বাইরের, ঘরের সাঁড়াশি আক্রমণ মোকাবিলা করা, নিশ্চিত ভাবেই এক শক্ত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকারের কাছে।

জম্মু- কাশ্মীর নিয়ে ঠিক একইরকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংয়ের সরকার ন্যাশনাল ফ্রন্ট। 1989 সালের ওই সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপি আর বামপন্থীরা। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার মোটামুটি এক বছর আগে থেকেই অশান্ত হয়ে উঠেছিলো উপত্যকা। ঘোরালো হয়ে উঠছিলো পরিস্থিতি। দিল্লির মসনদে তখন রাজপাট সামলাচ্ছেন রাজীব গাঁধি। তিনি অবশ্য জম্মু কাশ্মীরের ব্যাপারে তখনও নির্বিকার।

ছবিটা পালটে গেছিলো বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং ক্ষমতায় আসতেই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাস্তা নিয়েছিলেন তিনি। রীতিমতো কড়া ধাঁচের মানুষ জগমোহনকে পাঠানো হয়েছিলো জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল করে। সঙ্গে সঙ্গে হইচই জুড়ে দিয়েছিলেন বামপন্থীরা। কেন? জগমোহন সেদিন বামপন্থীদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলেন? জগমোহনের গায়ে মুসলিম বিরোধীর সিলমোহর দেগে দিয়েছিলেন বামপন্থীরা। বামপন্থীদের এই সাম্প্রদায়িক তাস খেলার অভ্যাস বহু পুরনো। কিন্তু সেদিন বামপন্থীদের ওজোর আপত্তিকে পাত্তা দেননি বিশ্বনাথপ্রতাপ।
1990 সালের গোড়াতেই, জানুয়ারি মাসে উপত্যকার রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলালেন জগমোহন। বামপন্থীদের মতোই নতুন রাজ্যপালের তীব্র বিরোধিতায় নেমেছিলেন ফারুক আবদুল্লা। উপত্যকায় জঙ্গিদের বাগে আনার চেষ্টা করতেই, সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলো বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং সরকার। জগমোহন দায়িত্ব নেওয়ার দু'দিনের মাথাতেই ঘটে গেলো জঙ্গি তান্ডব। গাওকাদাল ম্যাসাকার। মারমুখী বিক্ষোভের মোকাবিলায় গুলি চালালেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। মারা গেলেন পঞ্চাশ জন বিক্ষোভকারী। রক্তে ভিজলো উপত্যকা। এরপরেই জঙ্গিদের টার্গেট হলেন কাশ্মীরী পন্ডিতরা। সেই নারকীয় ইতিহাসের কথা সবারই জানা।

তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সৈয়দ এক নামকরা ইংরেজি পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, জগমোহনকে জম্মু কাশ্মীরে পাঠিয়ে লাভ হয়েছিলো। ওই প্রথম রাজ্যের প্রশাসনিক শূন্যতা, পূরণ করা গেছিলো। প্রতিষ্ঠা করা গেছিলো রাজ্যের অধিকার।
1990 সালের এপ্রিল মাস। 
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধিকে এক চিঠি লিখেছিলেন জগমোহন। কাশ্মীরের পরিস্থিতি উপেক্ষা করার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধিকে। ওই সময় থেকেই উপত্যকায় জোর ধরেছিল কাশ্মীরী যুবকদের মৌলবাদী পাঠ পড়ানো, জেহাদি তৈরি করার ষড়যন্ত্র। যার ভয়াবহ রূপ দেখা গেছিলো গাওকাদাল ম্যাসাকার আর কাশ্মীরী পন্ডিত নিধনযজ্ঞে। জগমোহনের চিঠিতেই পরিষ্কার, সেদিনও কাশ্মীরের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে জেগে ঘুমিয়েছিল কংগ্রেস। আর জঙ্গি মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন বামপন্থীরা। আজ প্রায় তিন দশক পরেও দুই দল, কংগ্রেস আর বামপন্থীদের অবস্থান একটুও বদলায়নি।

কিন্তু হঠাতই উল্টো সুরে বাজলেন কেন রাহুল? কথায় আছে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। রাজ্যসভায় তিনশো সত্তর ধারা খারিজের প্রস্তাব পেশ করার দিন থেকেই বিজেপি অভিযোগ করে চলেছে, রাহুলের কথার সঙ্গে পাকিস্তানের গলার আওয়াজ মিলে যাচ্ছে। ওদিকে জয়রাম রমেশ, অভিষেক মনু সিংভি, শশী থারুরের মতো হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতারা টুইটবার্তা চালাচালি করে স্বীকার করে নিলেন, একতরফা মোদি বিরোধিতা ঠিক নয়। বরং তাঁর ভালো কাজগুলির প্রশংসা করা উচিত।
"বিচার করতে হবে ইস্যুভিত্তিক। ব্যক্তিভিত্তিক নয়।" টুইটে জানালেন সিংভি। "মানুষ কেন মোদি সরকারকে ফের ক্ষমতায় আনলো, তা পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।" মন্তব্য করলেন জয়রাম। ওদিকে থারুরতো সরাসরি অভিযোগ করে বসলেন, "গত ছ'বছর ধরে বলে চলেছি, একতরফা মোদি বিরোধিতা বন্ধ করার কথা।" তাঁর মতে অন্ধ বিরোধিতা না করে ভালো কাজের প্রশংসা করলে, বিরোধী শিবিরের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। তাহলে কি দলের মধ্যেই 'চাপে পড়ে বাপ' বলা, অবস্থান বদল রাহুলের?

কংগ্রেস, সিপিএমের সখ্যতা যেন 'শোলে'র বীরু জয়ের দোস্তির মতো। বীরু একটু বাজে বকলেও, জয় বরাবরই হিসেব কষে কথা বলতো। আজ অবশ্য বীরু সাবধানী। এরই মধ্যে কাশ্মীরে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চললেন সীতারাম ইয়েচুরি। কাশ্মীর থেকে ফিরে, এই সিপিএম নেতাও সুর বদল করে কিনা দেখা যাক।
 

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours